শাম্মী হুদা: সুখী সম্পর্কের সবদিনই বোধহয় প্রেমদিবস। তবুও কোনও এক জায়গায় বাকি ৩৬৪টি দিনকে ছাড়িয়ে এই দিনটিকে নিয়েই উদযাপনে মাতে প্রেমিক যুগল। বিভিন্ন আবর্তে যেমন প্রেম আসে। তেমনই বিভিন্ন আঙ্গিকে হয় প্রেমের উদযাপন। তবে লাল গোলাপের মাহাত্ম্য যেন উদযাপনে ভিন্ন মাত্রা নিয়ে আসে। প্রেম এলেই অনিবার্যভাবে এসে পড়ে গোলাপ। উহু, গোলাপ শুধু নয়, লাল গোলাপ। আর্চিজ গ্যালারির ভালবাসা, রকমারি সৃজন সমৃদ্ধ বাহারি কার্ড, নামীদামি চকলেটের রাংতা সবই যেন ম্লান হয়ে যায় এই গোলাপের কাছে। চোখে চোখ হাতে হাত মাঝে একটা লাল গোলাপ থাকলে জমে ক্ষীর আর কি।
[প্রিয়তমার জন্য ভ্যালেন্টাইনস ডে-র চমক, বার্গারে গাঁথা হীরের আংটি]
শুরুর সেদিনের সেই গোলাপ। তাতেই আটকে থাকে প্রেমের মিষ্টি স্মৃতি। যেটি প্রতিবেশী খিটকেল কাকুর বাগান থেকে চুরি করে এনেছিল আপাত শান্ত শুভ্র। তার মতো বইপোকা মুখচোরা ছেলেও যে একদিন মদন দেবতার ইশারায় নাচবে কে জানত। কিন্তু তেমনটাই ঘটল ফার্স্ট ইয়ারের নতুন মেয়েটির চাহনিতে কি যেন ছিল। নোটস দিতে গিয়েই ঘায়েল তথাকথিত ভাল ছেলে। তারপর মাস দুয়েক কেটেছে। এরপর একদিনও সেই মেয়ের সঙ্গে কথা হয়নি তার। তবুও তার প্রেমেই হাবুডুবু খাচ্ছে ক্লাসের ফার্স্টবয়। অঙ্কের খাতায় যত না অঙ্ক তার থেকে অনেক বেশি আঁকিবুকি। দিনকে দিন বেড়েই চলেছে আঁকিবুকির পরিমাণ। একইভাবে চলছে বিশেষ দিনের প্রতীক্ষা। প্রেম যে কীভাবে ব্যক্ত করবে এসব ভাবতে ভাবতেই সপ্তাহ কাটল। কলেজ থেকে বেরিয়ে ফুল বাজারে ঘুরল। কিন্তু গোলাপ হাতে বাড়িতে আসার সাহস দেখাতে পারল না। কি আর করা যায়। তাইতো ভোর বেলা মহাপাত্র কাকুর বাগানেই হানা দিল। বাবা মায়ের ঘরের ব্যালকনি ঘেঁষেই নেমেছে জলের পাইপ। মদন দেবতাকে স্মরণ করেই সেই পাইপে চড়ে বসল। তারপর বাকিটা ইতিহাস। মাকড়সার জাল, মশার কামড় খেয়ে যখন বাগানে নামল, তখন গন্ধে প্রায় নাকাল। হ্যাঁ দুই বাড়ির মাঝ যে এমন এঁদো নর্দমা রয়েছে কি করে জানবে সে। ছোটবেলা তো দাদুর বাড়িতেই কেটেছে। নিজের বাড়িটাও তাই সেভাবে চিনে ওঠা হয়নি। নাকে হাত চাপা দিয়ে সোজা গোলাপের বাগানে। কিন্তু কোনটা নেবে বেশি নেওয়ারও সাহস দেখাতে পারছে না। যদি ধরা পড়ে যায়। তাছাড়া মহাপাত্রকাকু যতই খিটকেল হোক, তাকে তো ভালই বাসেন। তাঁকে বড়মাপের ক্ষতির মুখে ফেলার ইচ্ছেও নেই। যাইহোক চোখ বন্ধ করেই তুলে নিল ইপ্সিত গোলাপটি। গাঢ় লালের গোলাপ তখন পাপড়ি খুলছে। ফাগুন ভোরের শিশিরে মেখে যেন রূপ খুলছে একটু একটু করে। ভেলভেটের পেলব স্পর্শে শিশিরের মুক্তমনা উপস্থিতি শুভ্রকে কাব্যকথা ডুবিয়ে দেয়। মশার কামড় ভুলেই কল্পনায় ডুব দেয় বছর উনিশের তরুণ। এরপর অনেকটা সময় কেটেছে। কীভাবে ফের পাঁচিল টপকে অক্ষত অবস্থায় নিজের ঘরে ফিরেছে কিছুই মনে নেই। গোলাপ মাধুর্যে বুঁদ হয়ে সে যেন ফিরে গিয়েছে লায়লা মজনুর অমর প্রেমকথায়। হির-রাঞ্ঝার প্রেম, রোমিও-জুলিয়েট, লায়লা-মজনু। প্রায় সবাইকেই প্রণাম ঠুকে কলেজে বেরিয়ে গেল।
ডেনিম জিন্স সাদা শার্টের শুভ্র এমনিতেই সৌম্যদর্শন। আজকে আবার গালে আফটার শেভের গন্ধ। ছেলের এহেন মাঞ্জায় মাও চমৎকৃত। বুক পকেটে প্রেমে টইটুম্বুর গোলাপ। মনে উপচে পড়া আশা, সঙ্গে বুক ঢিপঢিপ। এইবুঝি ধরা পড়ে গেল। যত টা না সেই নাম না জানা সুন্দরীর কাছে। তার থেকেও বেশি মহাপাত্র কাকু। এই বোধহয় কান টেনে কেড়ে নিল সাধের গোলাপ। তার প্রথম প্রেমের নিশান। নাহঃ আজ আর বাসে নয়, ট্যাক্সিতেই কলেজে যাবে সে। বাসের ভিড়ে যদি সাধের গোলাপ আত্মঘাতী হয়। পাড়ার মোড়ে আধঘণ্টা দাঁড়িয়েও হলুদ যানগুলির টিকি দেখা গেল না। শেষমেষ শেয়ারের ক্যাবেই চড়ে বসল। কে জানত ভাগ্য তার জন্য নতুন কিছু সাজিয়ে রেখেছে। মহামায়াতলায় এসে ফের দাঁড়িয়ে গেল ক্যাব। বিরক্তি চেপে চালককে কারণ জিজ্ঞাসা করতে যাবে এমন সয় কানে এল একটু সরে বসুন না। দরজা ঠেলে ঢুকছে কলেজের এলিজেবল সিঙ্গলের প্রথম ক্রাশ। চালকের পাশের আসন থেকে নারী কণ্ঠের ধমক, ওহঃ ইনায়া, ফোন করলাম তাতেও দেরি। ততক্ষণে শুভ্রর মন শরতের আকাশের পেঁজা তুলোর মেঘ। কাশফুলের দোলা দিয়ে উড়ে বেড়াচ্ছে। বুক পকেটের গোলাপ ততক্ষণে কুলকুল ঘামের আদরে সিক্ত। ক্যাব চলতেই এসিও চালিয়ে দিলেন চালক। চোখ বুজে হেলান দিয়ে স্বস্তির শ্বাস ফেলল শুভ্র। গোলাপী মনে তখন ইনায়া ধ্বনি। তাল কাটল স্পিড ব্রেকারে। প্রায় গায়ের উপরে চলে এল খোলা চুলের ইনায়া। মিষ্টি হেসে চোখাচোখিও হল। সৌজন্যবশত ক্ষমা চাইতে না চাইতেই ফের থমকে গেল ক্যাব। সামনে মিছিল। কাহাঁতক আর বসে থাকা যায় গাড়ি থেকে নেমে পায়ে পায়ে এগিয়ে চলে দুজন। ইনায়ার সঙ্গিনী ততক্ষণে প্রেমিককে খুঁজে নিয়েছে। বাই বলে এগিয়ে গেল। বুকের গোলাপ জানান দিল মাহেন্দ্রক্ষণ। সোনালি মুহূর্ত বয়ে না যায়। শুভ্রর মুখ খোলার আগেই কলেজ স্ট্রিটে যাওয়ার ইচ্ছে জানিয়ে দিল ইনায়া। একা নয়, তাকেই সঙ্গে চাইছে সে। বুকের গোলাপ মুখেই ফুটল হাসি হয়ে।
[‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’তে প্রেমিকা চাই, ডেটিং সাইটে নাম লেখাল এই রোমিও]
প্রেমের এই শুভ লগ্নে যাঁরা গোলাপ নিয়েই পথে বেরিয়ে পড়েছেন, তাঁরা দেরি করবেন না যেন। এই বেলা গোলাপের হাত ধরেই শুভ কাজটি সেরে ফেলুন। কেন না, প্রেম প্রতিদিন এলেও ভ্যালেন্টাইনস ডে তো আর কাল আসবে না।
ভিডিও- সঞ্জিত ঘোষ
The post প্রেম যেন গোলাপের সুখী নাম, এভাবেই প্রেম আসে গোলাপ সরণি বেয়ে appeared first on Sangbad Pratidin.