রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: তৎকাল বিজেপিদের প্রাধান্য দলে। দলে আসা ‘কাছের লোক’ নব্যদের জেলা কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়েছে। এতেই ক্ষুব্ধ দলের আদি নেতারা। প্রশ্ন তুললেন, জেলায় সাধারণ সম্পাদকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে তৎকাল নেতাদের বসানোর ক্ষেত্রে দলের সংবিধান মানা হচ্ছে কি না তা নিয়ে। একাংশের অভিযোগ, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে বসতে হলে তিন বছর দলের সক্রিয় সদস্য হতে হয়। কিন্তু বর্তমান বঙ্গ বিজেপিতে দলের সংবিধান বা রীতিনীতি কিছুই মানা হচ্ছে না। কোন কোন জেলায় তৃণমূল ছেড়ে আসা তৎকাল বিজেপিদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়েছে, আর পুরনোদের বাদ দেওয়া হয়েছে, তার বিস্তারিত কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছেও লিখিত জানাতে চলেছে দলের আদিরা।
বঙ্গ বিজেপির বিদ্রোহের আঁচ মধ্যগগনে। বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে জেলাতেও। বিভিন্ন জেলায় দলের জেলা কমিটি ঘোষণার পর তৎকাল বিজেপিদের প্রাধান্য নিয়েই মূলত শুরু হয়ে গিয়েছে ক্ষোভ-বিক্ষোভ। সদ্য ঘোষণা হওয়া দলের বিভিন্ন জেলা কমিটিতে পুরনো-অভিজ্ঞদের বড় অংশই বাদ। তৎকাল বিজেপিরা দখল করেছে জায়গা। আর যেটা হয়েছে দলের সংবিধান ও রীতিনীতি না মেনেই। অভিযোগ উঠেছে শাসকগোষ্ঠীর কাছের লোকদের গুরুত্বপূর্ণ পদপ্রাপ্তি হয়েছে। বিধানসভা ভোটের আগে তৃণমূল তো বটেই সিপিএম ছেড়ে বিজেপিতে এসে অনেকেই পেয়েছেন পদ। ক্ষোভ শুরু হয়েছে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ছোট ভাই সৌমেন্দু অধিকারীকে কাঁথি সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক করা নিয়ে। আবার বিধানসভা ভোটের আগে দলে আসা কাউন্সিলর সজল ঘোষকে উত্তর কলকাতা জেলার সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে।
[আরও পড়ুন: ‘যা করেছি বেশ করেছি, কোনও অনুশোচনা নেই’, ফের বিস্ফোরক কবীর সুমন]
কমিটিতে নব্যদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। কাঁথি সাংগঠনিক জেলার নতুন কমিটি নিয়ে ক্ষোভ চরমে। তমলুক সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ মেঘনাদ পালকে। ঝাড়গ্রামেও সেই একই অভিযোগ। জেলার গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের ঠাঁই হয়নি নয়া কমিটিতে। অন্য দল থেকে সম্প্রতি বিজেপিতে আসা সজল ঘোষকে উত্তর কলকাতা জেলার সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। এছাড়াও, গেরুয়া শিবিরে কমিটি নিয়ে এইধরনের অভিযোগ উঠেছে বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর, বোলপুর-সহ আরও একাধিক জেলাতেও।
রাজ্য বিজেপির এক নেতার কথায়, একুশের বিধানসভা ভোটের আগে রাজ্যের সংগঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত দলের কেন্দ্রীয় নেতা শিবপ্রকাশ বলেছিলেন, তিন বছর সক্রিয় সদস্য হতে হবে দলের। তবেই মণ্ডল সভাপতি বা জেলা কমিটির সভাপতি কিংবা সাধারণ সম্পাদকের মতো পদ পাওয়া যাবে। বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে অনুমতি সাপেক্ষে এই নিয়মের বদল হতে পারে। ওই রাজ্য নেতা তথা দলের প্রাক্তন জেলা সভাপতির অভিযোগ, যে পাঁচ-ছয় মাস আগে বিজেপিতে আসছে। পার্টির আদর্শ-রীতিনীতির সঙ্গে নিজেকে যাঁরা মানিয়ে নিতেই পারেনি, তাঁদের শুধু জেলার সাধারণ সম্পাদকই নয়, অনেককে সভাপতি পর্যন্ত করে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে দলে আদর্শ নিয়ে যাঁরা কাজ করছে সেই সমস্ত নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ। দলের ৪২ টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ২০টিরও বেশি জেলায় পদে বসানোর ক্ষেত্রে দলীয় সংবিধান ও রীতিনীতি মানা হয়নি। কাছের লোকেদের পদে বসাতে গিয়ে বহু জেলাতে দলের সংবিধান-রীতিনীতি মানা হচ্ছে না, প্রশ্ন তুলছেন আদি নেতারা।