দিপালী সেন: রাজ্যের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে সাপ্তাহিক রিপোর্ট পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন রাজপাল তথা আচার্য সিভি আনন্দ বোস। তারপরও রিপোর্ট না পাঠানোয় ফের উপাচার্যদের চিঠি পাঠানো হল রাজভবনের তরফে। যা রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাতে নতুন মাত্রা যোগ করল মনে করছে অভিজ্ঞ মহল। উপাচার্যদের চিঠি পাঠানো নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। স্পষ্ট জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শের ভিত্তিতে নেওয়া হবে পরবর্তী পদক্ষেপ। ব্রাত্য বসু বলেন, “এ বিষয়ে আর চর্বিত চর্বন করতে চাই না। আগেই যা বলার বলে দিয়েছি। শিক্ষা দপ্তরকে এভাবে বারবার সরিয়ে রেখে এই রকম চিঠি দেওয়া, এটা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করে আমাদের কী করণীয় ঠিক করব।”
সম্প্রতি সাপ্তাহিক রিপোর্ট সংক্রান্ত চিঠিটি উপাচার্যদের পাঠিয়েছেন রাজ্যপালের সিনিয়র বিশেষ সচিব। চিঠিতে বলা হয়েছে, গত ৪ এপ্রিল ই-মেলের মাধ্যমে জানানো হয়েছিল, সপ্তাহের শেষ কাজের দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাপ্তাহিক কাজকর্মের রিপোর্ট জমা করতে। কিন্তু, এখনও পর্যন্ত এমন কোনও রিপোর্ট এসে পৌঁছয়নি। রাজভবনের তরফে পাঠানো ওই চিঠিতে উপাচার্যদের এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠির শুরুতেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, আচার্যের নির্দেশানুসারেই উপাচার্যদের এগুলি জানানো হচ্ছে।
[আরও পড়ুন: জেলে ফেরার পথে বন্দিদশা নিয়ে ক্ষোভ পার্থর, নাতনির জন্মদিনে প্যারোলে মুক্তির আরজি কল্যাণময়েরও]
রাজভবন সূত্রে খবর, এই চিঠিটি রাজ্যের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে পাঠানো হয়েছে। ব্যতিক্রম, চারটি বিশ্ববিদ্যালয়। যাদবপুর, প্রেসিডেন্সি, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ও বাবাসাহেব আম্বেদকর এডুকেশন ইউনিভার্সিটির উপাচার্যের কাছে এই চিঠি পৌঁছায়নি। কেন এই চারটি বিশ্ববিদ্যালয়কে চিঠি পাঠানো হল না তা নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা। তাহলে কি সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলি সাপ্তাহিক রিপোর্ট পাঠিয়েছে? উঠছে প্রশ্ন। এবিষয়ে সাংবাদিকদের তরফে শিক্ষামন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “আমি জানি না উনি (রাজ্যপাল) কাকে চিঠি পাঠিয়েছেন। খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।”
এপ্রিল মাসের শুরুতেই রাজভবনের তরফে উপাচার্যদের তিন দফা নির্দেশ দিয়ে চিঠি পাঠানোর পরই কার্যত রাজ্য-রাজভবন সংঘাতের পরিসর তৈরি হয়েছিল। উপাচার্যদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, প্রতি সপ্তাহের শেষে আচার্য তথা রাজ্যপালকে ই-মেল করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাপ্তাহিক কাজের রিপোর্ট পাঠাতে হবে। লেনদেন সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়ে আচার্যের আগাম অনুমতি নিতে হবে। চিঠিতেই বলা হয়েছিল, বড় কোনও সমস্যায় উপাচার্যরা রাজ্যপালের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারবেন। রাজ্যপালের এই ধরনের চিঠি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে পাঠানোর আইনি বৈধতা রয়েছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। দাবি জানিয়েছিলেন, অবিলম্বে চিঠিটি প্রত্যাহার করার। কিন্তু, শিক্ষামন্ত্রীর চিঠি প্রত্যাহারের দাবিতে কর্ণপাত করা তো দূরস্থান। উলটে আগের নির্দেশের কথা স্মরণ করাতে ফের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে চিঠি পাঠাল রাজভবন। এভাবে সাপ্তাহিক রিপোর্ট চাওয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, “বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিরা ঠিক করুক। বিরোধী দলও ভাবুক। যা ঘটছে তা আদৌ ঘটতে পারে কিনা! তা আইনি কিনা, আইন মোতাবেক হচ্ছে কিনা। চিঠি প্রসঙ্গে আশা করা যায় ভবিষ্যতে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর পরামর্শ দেবেন।” অন্যদিকে এদিন শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, জাতীয় শিক্ষানীতি মেনে রাজ্যের কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে চার বছরের স্নাতক অনার্স কোর্স চালু করার বিষয়ে খুব শীঘ্রই নির্দেশিকা প্রকাশ করবে উচ্চশিক্ষা দপ্তর। তাঁর কথায়, “এখনও সময় আছে। উচ্চমাধ্যমিকের ফল এখনও প্রকাশিত হয়নি। ফলে, এটা নিয়ে উদ্বেগ ও তৎপরতার কিছু নেই।”