shono
Advertisement

মেঘ-পাহাড় ঘেরা ছোট্ট হ্যামলেট রঙ্গারুন

রঙ্গারুনের চারদিক স্বপ্নের মতো৷ সেনচেল অভয়ারণ্যের অন্তবর্তী গ্রাম হওয়ার দরুন ভোরের দিকে বেরিয়ে পড়ুন পথে, বরাতজোরে চোখে পড়তে পারে ওরিয়েন্টাল টার্টল ডাভ, রেড ভেন্টেড বুলবুল, গ্রিন ফ্লেম ব্যাক ও অন্যান্য বিরল প্রজাতির পাখি৷ তবে পাখি দেখার সেরা সময় জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস৷ অভয়ারণ্যে রয়েছে ভাল্লুক, হরিণ, শজারু, এমনকী চিতাও৷ The post মেঘ-পাহাড় ঘেরা ছোট্ট হ্যামলেট রঙ্গারুন appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 06:56 PM Jun 05, 2016Updated: 03:45 PM Mar 01, 2019

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মেঘ-পাহাড় ঘেরা ছোট্ট হ্যামলেট রঙ্গারুন৷ ব্রিটিশ আমলে এখানে গড়ে ওঠে ৪৯.৯৩ হেক্টর জমি বিস্তৃত চা-বাগান৷ সেসময় ইংল্যান্ডের রাজমহলে রঙ্গারুনের চায়ের কদর ছিল বেশ৷ ১৭৭৬ সালে তৎকালীন বাংলার রাজ্যপাল লর্ড অ্যাডেন অ্যাসল-এর হাতে খ্যাতি পায় চা-বাগান৷ বর্তমানে দার্জিলিং-মকাইবাড়ির চায়ের বেশি রমরমা হলেও এখনও এই ঘুম ঘুম চা-বাগানের চায়ের সমস্ত উৎপাদন পাড়ি দেয় বিদেশ৷

Advertisement

৬,১০০ ফিট উচ্চতায় এই পাহাড়ি গ্রামের স্থানীয় নাম ‘রাজেরু’ বা ‘রাঙ্গেরুন’৷ এনজেপি থেকে চা-বাগানে পৌঁছতে সময় লাগবে আড়াই-তিন ঘণ্টা–প্রায় ৭০-৭৫ কিলোমিটার পথ৷ পাহাড়ের কোল কেটে এঁকেবেঁকে চলে গিয়েছে পথ৷ মেঘ এখানে হাতে ধরা দেয়৷ পিচ বাঁধানো পাহাড়ি পথ ঝুপ করে নেমে আসা মেঘের মায়াজালে হয়ে পড়ে ঝাপসা৷ রঙ্গারুন পৌঁছানোর পথে পাশে ঘন গাছের সারিতে রয়েছে প্রায় ৩০ রকমের ঔষধি গাছপালা৷ কুইনাইন গাছও রয়েছে বিস্তর৷ সঙ্গে রয়েছে কমলার অগুনতি গাছ–শীতের সময় গাছ ভরে থাকে কমলায়৷ হ্যামলেটে পৌঁছানোর শেষ এক-দেড় কিলোমিটার রাস্তা বেশ দুর্গম৷ পিচ বাঁধানো রাস্তা শেষ হলেই গাড়ি হঠাত্ই নেমে আসে পাহাড়ের গা বেয়ে, তারপর কাঁচা রাস্তায় বেশ খানিকক্ষণের পথ পেরিয়ে আবার চড়াইয়ের পথ ধরে গাড়ি পৌঁছে যাবে গন্তব্যে৷ চা-বাগান পিছনে ফেলে চোখে পড়বে এখানকার একমাত্র হোম স্টে ‘খালিং কটেজ’৷ ছোট্ট এই গ্রামে জনসংখ্যাও সীমিত৷ রাস্তা দিনে-রাতে সবসময়ই ফাঁকা-শুনশান৷ শোরগোল, কোলাহল এখানে তেমন কানে আসে না৷ ছিমছাম দোতলা কটেজ৷ সামনে পাথর কাটা সিঁড়ি৷ কাঠের কটেজের অন্দর ছবির মতো সাজানো-গোছানো৷ নীচের তলায় দু’টো ঘর, মাঝ বরাবর প্যাসেজ৷ একপাশে পুজোর ঘর আর কয়েক পা এগোলে ফায়ারপ্লেস৷ কাঠের সিঁড়ি দিয়ে ওপরতলায় রয়েছে দু’টো ঘর সমান ছিমছাম৷ তার সঙ্গে রয়েছে ছোট্ট একফালি ছাদ৷ ছাদে দাঁড়িয়ে চারদিকে চোখে পড়বে পাহাড়, ঘন সবুজরঙা চা-বাগান, ধূসররঙা মেঘ আর নীল আকাশ৷ রোদ উঠলে আকাশ ঝকঝকে হলে এখান থেকেই দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘার শিখর৷ রোদ ঠিকরে পড়া চূড়া রাঙিয়ে দেয় রঙ্গারুনের রূপ৷ আতিথেয়তার কথা এখানে বলে শেষ করা দায়৷ কটেজের বর্তমান মালিক কিশমত রাই৷ তিনিও তাঁর পরিবার নিয়ে থাকেন খালিং কটেজের লাগোয়া বাড়িতে৷ সকালের চা থেকে রাতের খাবার–সবের আয়োজন যেমন সময়মাফিক, তেমনই তাঁদের অমায়িক ব্যবহার৷ অচেনা মানুষগুলোর সঙ্গে একবেলা কথা বললেই মনে হয় যেন কতদিনের চেনা সবাই৷ খাবারের আয়োজনও ঠিক বাড়ির মতো৷ সকালে সাদা লুচি-লালচে আলুর দম, ডিমের ভুর্জি সঙ্গে স্যালাড, আবার কখনও বাঙালির ঘুগনি আর লুচি৷ দার্জিলিং থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার দূরে বলে এখানে দুপুরের খাবার বাইরে সারার প্রচুর জায়গা৷ বিকেলের স্ন্যাক্সে আসবে পেয়ালায় গরম চা, সঙ্গে ধোঁয়া ওঠা মোমো অথবা পকোড়া৷ রাতের খাবারে ভাত-রুটি, ডাল, সবজি, মুরগির গা-মাখা পদ৷ চাইলে অসামান্য পর্ক রেঁধেও খাওয়ান এঁরা৷ রান্নার সমস্ত আয়োজন করেন তাঁদের পরিবারের মানুষ৷ রান্নার সবজিও আসে খামার থেকে, তাই তার স্বাদও জিভে লেগে থাকবে৷


রঙ্গারুনের চারদিক স্বপ্নের মতো৷ সেনচেল অভয়ারণ্যের অন্তবর্তী গ্রাম হওয়ার দরুন ভোরের দিকে বেরিয়ে পড়ুন পথে, বরাতজোরে চোখে পড়তে পারে ওরিয়েন্টাল টার্টল ডাভ, রেড ভেন্টেড বুলবুল, গ্রিন ফ্লেম ব্যাক ও অন্যান্য বিরল প্রজাতির পাখি৷ তবে পাখি দেখার সেরা সময় জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস৷ অভয়ারণ্যে রয়েছে ভাল্লুক, হরিণ, শজারু, এমনকী চিতাও৷ স্থানীয় মানুষের মধ্যে চাক্ষুষ চিতা দেখার অভিজ্ঞতাও রয়েছে, তবে তা বিরল৷ রঙ্গারুন চা-বাগানে হেঁটে যাওয়া যায় অনেকটা পথ, চারদিক ঘন সবুজ, মাঝে হঠাত্‍ ঘিরে ধরবে মেঘের দল৷ ঝাপসা করে দেবে চারদিক৷ গ্রামের অন্যদিকে পথ ধরে চলে যান রুংদাং খোলায়৷ এপথে গাড়ি যায় না, সুতরাং একমাত্র ভরসা পায়ে হাঁটা, সূর্য ওঠার পরই প্রাতরাশ সেরে বেরিয়ে পড়ুন রুমদাং খোলার পথে৷ পথ শেষে চোখে পড়বে অপরূপ পাহাড়ি ঝোরা৷ ঝোরার জল কাচের মতো ঝকঝকে৷ রুংদাং খোলার সূত্রে রুংদাং নদী৷ রঙ্গারুনের নামও এসেছে নদীর সূত্রেই৷ লেপচা ভাষায় ‘রাঙ্গেরুন’ কথার অর্থ ‘এক বড় নদীর বাঁক’৷ এখানেই রুংদাং নদী সোজার বদলে বাঁকা পথ নেয়, তাই এমন নাম৷
রক ক্লাইম্বিং, মাউন্টেন বাইকিং, ফরেস্ট ক্যাম্পিং, ট্রেকিং, হাইকিং–সবেরই ব্যবস্থা রয়েছে ছোট্ট এই গ্রামে৷ যে কোনওরকম প্রয়োজনে ব্যবস্থা করে দেবেন কটেজের কর্ণধার ও তাঁর পরিবার৷ কাছেই দার্জিলিং, একবেলা ‘কেভেনটার্স’-‘গ্লেনারিজ’ মুখো হওয়াই যায় অনায়াসে৷ দার্জিলিং-এর ম্যালের কাছে রয়েছে পুরনো দিনের ‘জোয়িস পাব’৷ বিখ্যাত এই পাব-এ ভিড় জমান দেশি-বিদেশি পর্যটক৷ হাতে সময় থাকলে ঘুরে আসুন মংপু৷ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিমাখা এই বাড়ি মৈত্রেয়ী দেবীর হলেও চারবার কবিগুরু এখানে এসেছিলেন৷
রঙ্গারুন থেকে কার্শিয়াং-এর পথ দু-আড়াই ঘন্টা৷ দেখে নিন বিখ্যাত স্কুল ‘ভিক্টোরিয়া বয়েজ স্কুল’, ‘ডাও হিল গার্লস স্কুল’৷ চায়ের টানে পৌঁছে যান মকাইবাড়ি চা-বাগান৷ চা-বাগানের ধারে দাঁড়িয়ে চারদিকের সবটা মনে হবে ছবির মতো৷
ইচ্ছে হলে ঘুরে আসুন বাতাসিয়া লুপ, চাইলে যেতে পারেন টাইগার হিল৷ তবে রঙ্গারুনের সৌন্দর্যের কাছে হার মেনে মন অন্য কোথাও যাওয়ার কথা সায় নাও দিতে পারে৷ এখানে সন্ধে নামে চোখের পলকের গতিতে৷ সন্ধে নামার পর ছোট্ট হ্যামলেট মুড়ে থাকা রাতের কালো আঁধারে, আকাশে ফুটে ওঠে কতশত তারা, ছাদের ধার থেকে দার্জিলিং শহরের আলো মনে হয় শত-শত জোনাকির ঝাঁক৷ মে মাসের দিকে এখানে বৃষ্টি নামে যখন-তখন, মেঘ ভাঙা বৃষ্টি ধুয়ে দেয় চারদিক, মনে হয় ছোটবেলায় প্যাস্টেল বাক্সের ঘন সবুজ রং দিয়ে যেন কেউ রাঙিয়ে দিয়েছে রঙ্গারুন৷

The post মেঘ-পাহাড় ঘেরা ছোট্ট হ্যামলেট রঙ্গারুন appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement