সুমন করাতি, হুগলি: পেঁজা তুলোর মতো মেঘ। ফিনফিনে হাওয়া। নদীর ধারে কাশফুলের মাথা দোলানো। ভেসে আসা শিউলির গন্ধ বয়ে আনে দুর্গাপুজোর বার্তা। এই রকম দিনেই বাড়ি থেকে বেশ কিছুটা দূরে প্রতিমা তৈরির সরঞ্জাম কিনতে গিয়েছিলেন সদ্য যুবক লাল্টু। কিন্তু পলকে বদলে যায় সব কিছু। বাইকের সামনে হঠাৎ চলে আসে স্কুলপড়ুয়া এক মেয়ে। তাকে বাঁচাতে গিয়ে রাস্তার মাঝে পড়ে যান লাল্টু। তাঁর পেটের উপর দিয়ে চলে যায় বাস। মুহূর্তে সব অন্ধকার! ঘটনার পর পেরিয়ে গিয়েছে আঠারো বছর। প্রাণে বাঁচলে প্রতিবন্ধকতা সঙ্গী হয় লাল্টুর। যদিও কিছুই থেমে থাকেনি। থামতে চাননি লাল্টু। সমস্ত বাধা কাটিয়ে আজও গড়ে চলেছেন মূর্তি। দেবীর চক্ষুদানের পর আজও হাসি ফুটে ওঠে তাঁর মুখে।
সেই দুর্ঘটনায় চুঁচুড়া শামবাবু ঘাট এলাকার বাসিন্দা লাল্টুর রেচনতন্ত্র পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়। ভর্তি করা হয় মেডিক্যাল কলেজে। ডাক্তারদের নিদান সারাক্ষণ লাগিয়ে রাখতে হবে ক্যাথিডার। সেই থেকেই শরীরে লাগানো রয়েছে একটি নল, যুক্ত রয়েছে একটি বালতির সঙ্গে। একটি পায়েও সমস্যা দেখা দেয়। বাদ না পড়লেও হাটার স্বাভাবিক ছন্দ হারান তিনি।
[আরও পড়ুন: এবার পুজোয় পাড়ি দিন ২০৫০ সালের কলকাতায়, দেখা মিলবে ঘূর্ণায়মাণ মণ্ডপের]
কিন্তু মনে তো শিল্প সত্ত্বা। কী করে দূরে রাখবেন নিজেকে? জীবনের কঠিন সময় পার করে ফের লেগে পড়েন প্রতিমা তৈরির কাজেই। শারীরিক কষ্ট থাকলেও কাজের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা ধোপে টেকে না। দেবীর কাঠামো তৈরি করা থেকে মাটি লাগানো, এমনকি ঠাকুরের সাজ তৈরি করা, সবই করছেন শিল্পী লাল্টু পাল।
লাল্টু বলেন, "বাবার কাছ থেকে যখন কাজ শিখি তখন বয়স ওই ১২ বছর। তখনই থেকেই প্রতিমা তৈরি করি। বাবা মারা যাবার পর দুই ভাই মিলে এই ব্যবসা চালাচ্ছি। এবার ১০-১২টা প্রতিমা তৈরি করছি। একটু সমস্যা হয় বইকি। তবে এটাই করে যেতে চাই।" লাল্টুর দাদা বলেন, "২০০৬ সালে ও দুর্ঘটনায় পড়ে। তার পর থেকে এই ভাবেই চলছে। ও প্রতিমা তৈরির সব কাজ করে। আমি মাঝে মাঝে সাহায্য করি। বাপ-ঠাকুরদার ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছি দুজনে।"
শরতের বিকেলে সূর্যের নরম হয়ে আসা গোলাপি আলো পড়ে লাল্টু পালের গালে। মুহূর্তে মনে পড়ে যায় সেই বীভৎস দুর্ঘটনার কথা। পর মুহূর্তেই মুচকি হেসে নিজের কাজে ডুবে দেন। এখনও তো কত কাজ বাকি...!