ব্রতদীপ ভট্টাচার্য, বারাসত: পাড়ার তাসের আসরে যোগ দিয়েছিল দুই ভাই। হঠাৎই প্রতিবেশী এক যুবক এসে তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালাতে শুরু করে। পেশায় পুলিশকর্মী সে। নিজের সার্ভিস পিস্তল থেকে পর পর দশ রাউন্ড গুলি চালায় ওই যুবক। বুলেটে ঝাঁজরা হয়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় দুই ভাইয়ের। পায়ে গুলি লেগে জখম হন স্থানীয় আর এক যুবকও। আমডাঙার তাড়াবেরিয়া এলাকার তেঁতুলিয়া গ্রামের হাড়হিম করা এই ঘটনা করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও তোলপাড় ফেলে দিয়েছে রাজ্যজুড়ে। এক পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধে এহেন নৃশংস খুনের অভিযোগে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে রাজ্যজুড়ে। তবে এসবের থেকেও চাঞ্চল্য ফেলেছে অভিযুক্ত ওই পুলিশকর্মীর বয়ান।
শুক্রবার রাতে প্রতিবেশী দুই ভাইকে খুনের পর এলাকা থেকে চম্পট দেয় অভিযুক্ত। শনিবার সকালে নিজেই পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে সে। জেরায় সে পুলিশকে জানিয়েছে, মৃত দুই ভাইয়ের মধ্যে একজন তার স্ত্রীকে ধর্ষণ করেছিল। তারপরও দিনের পর দিন উত্যক্ত করত। সেই ক্ষোভেই গুলি করে তাদের ‘খতম’ করে দিয়েছে সে। মৃত দুই ভাইয়ের নাম সুমন্ত মণ্ডল ও অরূপ মণ্ডল। তাদের পাশেই বাড়ি অভিযুক্ত পুলিশকর্মী সন্তোষ পাত্রের। বিধাননগর কমিশনারেটের এডিসিপি এসবি-র দেহরক্ষী ছিল সে। বারাসতের পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, অভিযুক্ত আত্মসমর্পণ করেছে। আগ্নেয়াস্ত্রটি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ধৃত জেরায় জানিয়েছে, মৃতদের একজন তার স্ত্রীর উপর যৌন নির্যাতন চালিয়েছিল। সেই রাগে খুন করেছে। তার বয়ান যাচাই করে দেখা হচ্ছে।”
[আরও পড়ুন: ‘সাংসদ তহবিলের পুরো অর্থই খরচ করব করোনা মোকাবিলায়’, ঘোষণা দেবের]
শুক্রবার রাতে সন্তোষের এই কাণ্ডে হতবাক এলাকাবাসী। কারণ সন্তোষ, সুমন্ত আর অরূপ খুবই ঘনিষ্ঠ ছিল বলে দাবি স্থানীয়দের। এলাকাবাসী জানায়, সুমন্ত আর অরূপকে ভাই বলে ডাকত সন্তোষ। একে অপরের বাড়িতে যাওয়া আসাও করত। হঠাৎ কি কারণে সন্তোষ এই ঘটনা ঘটাল তা ভেবেই পাচ্ছেন না এলাকার বাসিন্দারা। তবে পুলিশ সূত্রে খবর সন্তোষ জেরায় জানিয়েছে, বছরখানেক আগে সন্তোষের অনুপস্থিতিতে সুমন্ত তার স্ত্রীকে ধর্ষণ করে। সেই ঘটনা কাউকে না জানানোর জন্য তার স্ত্রীকে ভয়ও দেখায়। এই ঘটনার পরও একাধিকবার তার উপর যৌন নির্যাতন চালায়। এবং ব্ল্যাকমেল করে।
সন্তোষ পুলিশকে জানিয়েছে, ডিউটির জন্য সে আগে বাড়িতে বেশি সময় থাকত না। তবে লকডাউনের কারণে গত কয়েকদিন বাড়িতেই ছিল সে। তখন সুমন্ত আর অরূপের কয়েকজন ঘনিষ্ঠ তাকে বিদ্রুপ করে। এরপর স্থানীয় কয়েকজনের থেকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বিষয়টি জানতে পারে সে। তারপর স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করলে ঘটনাটি স্পষ্ট হয়। সূত্রের খবর, জেরায় সন্তোষ দাবি করেছে, ওই দুই ভাই এলাকায় যথেষ্ট প্রভাবশালী। ধর্ষণের বিষয়টি জেনে ফেলার পর থেকে তারা সন্তোষকে খুনের ছক কষছিল।
তবে আমডাঙ্গার এই ঘটনায় রাজনৈতিক রংও লেগেছে। শনিবার সকালে ওই এলাকায় যান বারাকপুরের বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিং। তাঁকে এলাকায় ঢুকতে বাধা দেয় পুলিশ। সেই ঘটনাকে ঘিরে উত্তেজনা দেখা দেয়। মৃত সুমন্ত ও অরূপের মাযের দাবি, দুই ভাই বিজেপির সক্রিয় কর্মী ছিল। এবং যে খুন করেছে সে তৃণমূলের সমর্থক। অর্জুন সিং বলেন, “মৃত দুই ভাই বিজেপি করত বলে তাদের তৃণমূল চক্রান্ত করে খুন করেছে।” মৃতদের পরিবার ও আহত যুবককে দু’লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
[আরও পড়ুন: তেলিনিপাড়ার সংঘর্ষে উসকানি দেওয়ার অভিযোগ, এফআইআর লকেট ও অর্জুনের বিরুদ্ধে]
The post ‘স্ত্রীকে ধর্ষণের বদলা নিতে খতম করেছি’, তাসের আসরে খুনের ঘটনায় জেরায় স্বীকার ধৃতের appeared first on Sangbad Pratidin.