সৈকত মাইতি, তমলুক: নতুন শাড়িতে সেজে সরস্বতী পুজোর সকালে বেরিয়েছিল ছাত্রী। ফিরতে দেরি হওয়ায় বকুনি দিয়েছিলেন মা। তাতেই অভিমানে গলায় ওড়না ফাঁস নিয়ে আত্মঘাতী হল দশম শ্রেণির এক ছাত্রী। বৃহস্পতিবার রাতে পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দকুমার থানার মাধবপুর এলাকার এই ঘটনাকে ঘিরে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়ায়।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত স্কুল ছাত্রী ফাতেমা খাতুন(১৬)। বাবা পেশায় রাজমিস্ত্রি ফিরোজ মল্লিক কর্মসূত্রে খড়গপুরে থাকেন। দুই দাদা হাসিবুল এবং হাসমত দিল্লি ও বেঙ্গালুরুতে টাইলসের কাজ করেন। চার ভাইবোনেদের মধ্যে অত্যন্ত আদুরে ফাতেমা। পড়াশুনার পাশাপাশি খেলাধুলার প্রতিও যথেষ্ট আগ্রহ ছিল তার। দুই দাদা এবং বাবা কর্মসূত্রে বাড়ির বাইরে থাকায় মায়ের সঙ্গে ফতেমা এবং তার ছোট্ট বোন গ্রামের বাড়িতেই থাকত। বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে মহিষাদল ব্লকের মনসার থান এলাকার কিসমত নাইকন্ডি গ্রাম পঞ্চায়েত হাইস্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী ছিল সে। বৃহস্পতিবার সকাল প্রায় ৮টা নাগাদ সরস্বতী পুজার উপলক্ষে নতুন শাড়ি পরে বন্ধুদের সঙ্গে বেরিয়েছিল ফাতেমা।
[আরও পড়ুন: পার্থ চট্টোপাধ্যায় নিয়েছিলেন ১৫ কোটি টাকা! ইডি’র কাছে বিস্ফোরক দাবি কুন্তলের]
দুপুর গড়িয়ে সন্ধে নেমে এলেও মেয়ে বাড়ি ফিরছে না দেখে দুশ্চিন্তায় পড়েন মা হানুফা বিবির। সন্ধে প্রায় ৬ টা নাগাদ আদুরে মেয়ে বাড়ি ফিরতেই কপালে জোটে মায়ের তীব্র ভর্ৎসনা, বকুনি। আর তাতেই অভিমানে ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয় ফাতেমা। এদিকে দীর্ঘ সময় কোনও সারা শব্দ না পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন মা হানুফা বিবি। চিৎকারে ছুটে আসেন প্রতিবেশীরা। ঘটনার খবর পেয়ে রাতেই ছুটে যায় নন্দকুমার থানার পুলিশ। বন্ধ ঘরের দরজা ভেঙে ফাতেমার গলায় ওড়না ফাঁস লাগানো ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার করে। মেয়ের এমন কাণ্ডে শোকের ছায়া এলাকায়। কান্নায় ভেঙে পড়েন মা হানুফা বিবি।
কিসমত নাইকন্ডি গ্রাম পঞ্চায়েত হাই স্কুলের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক দিগন্ত অধিকারী বলেন, “অত্যন্ত শান্ত প্রকৃতির মেয়ে ছিল ফাতেমা। পড়াশুনোর পাশাপাশি খেলাধুলায় অত্যন্ত ভাল হওয়ায় অল্প সময়ের মধ্যেই সকলের নজরে চলে আসে সে। স্বাভাবিক কারণেই প্রতিভাবান এই স্কুল ছাত্রীর এমন দুর্ভাগ্যজনক ঘটনায় আমরা সকলেই অত্যন্ত মর্মাহত।” নন্দকুমার থানার ওসি মনোজ ঝা বলেন, “শোয়ার ঘরের ভিতর থেকে এক স্কুল ছাত্রীর ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে।”