কলহার মুখোপাধ্যায়, বিধাননগর: রাজ্য সরকারের কন্যাশ্রী প্রকল্পের (Kanyashree Project) কাজ আরও গুরুত্ব সহকারে এগিয়ে নিয়ে যেতে একজন করে নোডাল অফিসার ঠিক করার নির্দেশ দেওয়া হল প্রতিটি স্কুলকে। কন্যাশ্রী পোর্টালের আওতায় থাকা রাজ্যের সবকটি স্কুলকে এই অফিসার নিযুক্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জানানো হয়েছে, প্রতিটি স্কুল একজন করে শিক্ষককে কন্যাশ্রী প্রকল্পটি দেখভাল করার জন্য দায়িত্ব দেবে। দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকের হাতে ওই স্কুলের কন্যাশ্রী সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ দেখভালের দায়িত্ব থাকবে। সম্প্রতি সরকারের তরফে নির্দেশিকা জারি করে এই বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়েছে স্কুলগুলিকে।
সরকারি প্রকল্পগুলিকে মানুষের দরজায় পৌঁছে দিতে ‘দুয়ারে সরকার’ (Duare Sarkar) কর্মসূচি চালু করেছে রাজ্য। এই কর্মসূচিতে ব্যাপক সাড়া পড়েছে বাংলার প্রতিটি প্রান্তে। স্বাস্থ্যসাথী, রূপশ্রী থেকে শুরু করে কন্যাশ্রী-সহ সরকারি স্কলারশিপগুলো নিয়ে মানুষের মধ্যে আগ্রহ তুঙ্গে। এই অবস্থায় দাড়িয়ে কন্যাশ্রী প্রকল্পকে আরও বেশি জনমুখী করে তুলতে নোডাল অফিসার পদ তৈরীর নির্দেশ সরকারের। রাজ্যের বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। এর ফলে কন্যাশ্রী উপভোক্তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে বলেও মনে করছে সংগঠনগুলি। তাদের বক্তব্য, কন্যাশ্রী-সহ ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থে একাধিক স্কলারশিপের ব্যবস্থা করেছে রাজ্য সরকার। স্কুলগুলির হেডমাস্টার কিংবা হেড অফ দ্য ইনস্টিটিউশনকে সেই কাজ দেখভাল করতে হয়। সরকারের সঙ্গে স্কুলের সমন্বয় সাধন থেকে শুরু করে প্রকল্প সংক্রান্ত নথিপত্র তৈরীর কাজ করতে হতো হেডমাস্টারকেই। একাংশের বক্তব্য, এর ফলে প্রশাসনিক কাজের চাপে পঠনপাঠনের কাজ ব্যাহত হয়। এই অসুবিধার কথা জানিয়ে বেশ কয়েকবার রাজ্য সরকারের কাছে দায়িত্ব নির্দিষ্ট করে দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছিল স্কুলগুলির পক্ষ থেকে। এই দিক বিবেচনা করেই একজন স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক নিযুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে মনে করছে সংগঠনগুলি।
[আরও পড়ুন: ‘ওর ব্যক্তিগত কথা’, মহুয়ার ‘দু’ পয়সার প্রেস’ মন্তব্যে দলের অবস্থান স্পষ্ট করলেন সুব্রত
পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির রাজ্য সভাপতি দিব্যেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেছেন, “কন্যাশ্রী প্রকল্প দেখভালের জন্য একজন নোডাল অফিসারকে দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছি। স্কুলে কে-ওয়ান স্তরে কোনও ছাত্রী যদি কন্যাশ্রীর আওতাভুক্ত না হন তাহলে কে-টু স্তরে গিয়ে তাঁর নাম নথিভুক্তিকরণে সমস্যা দেখা দেওয়ায় সম্ভাবনা তৈরি হয়। স্কুলের তরফে একজন আধিকারিক যদি কন্যাশ্রী প্রকল্পটি দেখভাল করেন, তাহলে কোনও ছাত্রীকে বঞ্চিত হতে হবে না। শিক্ষকদের আর একটি সংগঠন মাধ্যমিক শিক্ষকও শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ মিত্র বলেছেন, “স্কুলের কাজ সুষ্ঠুভাবে চালিয়ে যেতে এবং কন্যাশ্রী প্রকল্প ছাত্রছাত্রীদের কাছে সঠিকভাবে পৌঁছে দিতে নোডাল অফিসার নিযুক্ত করার পদক্ষেপের অত্যন্ত প্রয়োজন ছিল। শিক্ষক সংগঠনের তরফ থেকে সরকারের কাছে এই দাবি আমরা জানিয়েছিলাম। সেই দাবি পূরণ হওয়ায় আশ্বস্ত বোধ করছি।”
চলতি মাসের চার তারিখে জেলাশাসকদের দপ্তর থেকে ডিআই দপ্তরের কাছে নির্দেশিকা পাঠানো হয়। এরপর স্কুলগুলির কাছেও পৌঁছয় এই নির্দেশনামা। এবার স্কুলের কন্যাশ্রী পোর্টাল এর আওতাভুক্ত স্কুলগুলির হেড অফ দ্য ইনস্টিটিউশন শিক্ষকদের মধ্যে থেকে একজনকে বেছে নিয়ে নোডাল অফিসারের দায়িত্ব দেবেন। সেই অফিসারের হাতে এই প্রকল্প সংক্রান্ত যাবতীয় দায়িত্ব অর্পণ করা থাকবে। জেলাশাসকের দপ্তর থেকে স্কুলশিক্ষা দপ্তরের সঙ্গেও সমন্বয় সাধন করবেন সংশ্লিষ্ট ওই আধিকারিক। এই নোডাল অফিসার পদের মূল লক্ষ্য থাকবে, কন্যাশ্রীকে আরও নির্ভুল ও দ্রুততার সঙ্গে উপভোক্তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া।