সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: রেল লাইনে ঘুমনোই কাল হয়েছিল। মালবাহী ট্রেনের ধাক্কায় মহারাষ্ট্রের ঔরঙ্গাবাদে প্রাণ হারান মধ্যপ্রদেশের ১৬ পরিযায়ী শ্রমিক। যে ঘটনা প্রশ্ন তুলে দিয়েছে দুই রাজ্যের সম্পর্ক নিয়ে। কারণ পরিযায়ী শ্রমিকদের ফেরানোর দায়িত্বে থাকা আধিকারিকরা সঠিক ব্যবস্থা নিয়ে হয়তো এমন দুর্ঘটনা রোখা সম্ভব হত। একটা ফোনই হয়তো রক্ষা করত ওই অসহায় শ্রমিকদের জীবন। এই দাবি তুলেই ঘটনায় এবার রাজনীতির রং লাগল।
শুক্রবার ভোর ৫.১৫। ঔরঙ্গাবাদের জালনা রেলওয়ে ট্র্যাক দিয়ে আসছিল একটি মালবাহী ট্রেন। কাড়মড গ্রামের কাছে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্র্যাকের উপরে ঘুমন্ত শ্রমিকদের সজোরে ধাক্কা দেয় মালগাড়িটি। তাতেই ঘটে যায় দুর্ঘটনা। ছিন্নভিন্ন হয়ে দেহগুলি ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে চতুর্দিকে। জালনার এক কারখানার ওই শ্রমিকরা বাড়ি ফেরার তাগিদে বৃহস্পতিবার সকাল সাতটা থেকে হাঁটতে শুরু করেছিলেন রেলের ট্র্যাক ধরে। মাঝে ক্লান্ত হয়ে লাইনের উপরে ঘুমিয়ে পড়েন। ফল মৃত্যু। এই ভয়াবহ দুর্ঘটনার হাত থেকে কোনওক্রমে বেঁচে যান পাঁচজন। অথচ ঠিক ছিল, মধ্যপ্রদেশে ফেরার জন্য সরকারের তরফে শ্রমিকদের পাস দেওয়া হবে। তা দেখিয়েই স্পেশ্যাল ট্রেনে চেপে নিশ্চিন্তে বাড়ি ফিরতে পারবেন তাঁরা। কিন্তু কোথায় কী! দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া এক শ্রমিক বীরেন্দ্র সিং জানাচ্ছেন, তাঁরা কোনও পাস পাননি। তিনি বলেন, “আমরা আমাদের জেলা উমারিয়ায় পাসের জন্য আবেদন করেছিলাম। যাতে গ্রামে নিজেদের পরিবারের কাছে ফিরে যেতে পারি। কিন্তু পাস পাওয়া তো দূর অস্ত, এক সপ্তাহ কেটে যাওয়ার পরও আমাদের কিছু জানানোই হয়নি।”
[আরও পড়ুন: ভূস্বর্গে সঠিকভাবে কাজ করছে না CRPF! বিস্ফোরক কাশ্মীর পুলিশের IG]
গত ৩০ এপ্রিল ভিনরাজ্যে আটকে পড়া শ্রমিকদের ফেরানোর জন্য প্রিন্সিপাল সেক্রেটরি ব়্যাঙ্কের সাতজন সিনিয়র আইএএস আধিকারিককে দায়িত্ব দিয়েছিল মধ্যপ্রদেশ। বলা হয়েছিল, মহারাষ্ট্রের সঙ্গে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করতে। কিন্তু বিরোধীদের দাবি, বেশিরভাগ আধিকারিককে ফোনেই পাওয়া যায়নি। তাঁরা প্রয়োজনের সময় ফোন ধরেননি। ফোন ধরলে, শ্রমিকদের বাড়ি ফেরানোর ব্যবস্থা করলে হয়তো এই দুর্দিনের সম্মুখীন হতে হত না। এই ঘটনায় তাই তদন্তের দাবি করেছেন মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দিগ্বিজয় সিং। তিনি টুইট করেন, “মধ্যপ্রদেশ সরকার কি ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের নাম রেজিস্টার করেছিল? যদি করেও থাকে, তাহলে রাজ্যে ফেরাতে কী পদক্ষেপ করা হয়েছিল? মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানের লজ্জা হওয়া উচিত। রোজ সংবাদমাধ্যমের সামনে ক্ষতির খতিয়ান তুলে না ধরে কিছু করা উচিত তাঁর।”
এমন দুঃসহ ঘটনা যেন এখনও মেনে নিতে পারেননি মৃত শ্রমিকদের পরিবার। পেটের দায়ে সংসার চালাতে নিজের রাজ্য ছেড়েছিলেন। কিন্তু করোনার আবহে আর পরিবারের কাছে ফেরা হল না তাঁদের।
[আরও পড়ুন: ‘চিৎকার করেও বাঁচাতে পারিনি কাউকে’, আক্ষেপ ঔরঙ্গাবাদ ট্রেন দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীর]
The post একটা ফোনেই বাঁচতে পারত শ্রমিকদের জীবন, মধ্যপ্রদেশ সরকারকে তুলোধোনা বিরোধীদের appeared first on Sangbad Pratidin.