সম্মুখ খান, মেদিনীপুর: আড়াই বছর আগের খুনের তদন্তে নেমে কবর খুঁড়ে তুলে আনা হল কঙ্কাল। মেদিনীপুরের কেশপুর থানার মাজুরিয়া গ্রামের ঘটনা। ম্যাজিষ্ট্রেট ও পুলিশের উপস্থিতিতে কবর থেকে ওই কঙ্কাল বের করে আনা হয়। গোটা ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়ায় গোটা গ্রামজুড়ে।

ঘটনাটি ঘটে ২০১৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর। মাজুরিয়া গ্রামে বিষ খেয়ে মারা যান শেখ লোকমান। সেই সময় এই মৃত্যু নিয়ে কোনও অভিযোগ দায়ের করা হয়নি থানায়। শেখের পরিবারের নিয়ম মেনে মৃত্যুর পর তাঁর দেহ কবরস্থ করা হয় স্থানীয় কবরস্থানেই। তবে সেই সময় ময়নাতদন্ত না হওয়ায় ঘটনার তদন্তে নেমে প্রশ্ন ওঠে তদন্ত নিয়ে। ওই ঘটনার কিছুদিন কেটে যাওয়ার পর আদালতে ছেলে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন শেখের মা সেরজুনা খাতুন ও বাবা শেখ আসরফ। সেরজুনা বিবির অভিযোগ, “ঘটনার দিন আমরা ছোট মেয়ের বাড়ীতে ছিলাম। রাতে বৌমা সখিসোনা বিবি খবর দেয় যে আমাদের ছেলে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছে। তাড়াতাড়ি বাড়ী ফিরে এসে ছেলেকে পাশের গ্রামের এক হাতুড়ে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই। কিন্তু তার আগেই তার ছেলে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। অথচ ঘটনার পর আমাকে ও আমার স্বামীকে গ্রামের কিছু লোকজন গাছে বেঁধে মারধর করে জানতে চায় ছেলে কেন বিষ খাইয়েছি।”
এরপর জোর করে চাপ দিয়ে বাড়িতে উকিল ডেকে এনে বউমা ও নাতি নাতনিদের নামে জমি লিখে দিতে বাধ্য করার অভিযোগ ওঠে বউমা সখিসোনার বিরুদ্ধে। এমনকি ছেলের মৃত্যুর জন্য তাদেরকে দায়ী করে একপ্রকার বাড়িছাড়াও করে দেওয়া হয় বলে জানান সেরজুনা খাতুন। ছেলের মৃত্যুর পর পুত্রবধূর এই আচরণ তাদের মনে সন্দেহ জাগে। তাই তখন ভয়ে চুপচাপ থাকলেও এখন তারা অভিযোগ করেছেন বলে দাবি করেন সেরজুনা খাতুন। সেরজুনা বিবি বলেছেন, তাদের ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে। তাদের অভিযোগের তির মৃতের স্ত্রী সখিসোনা বিবি ও কয়েকজন আত্মীয়ের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি আদালতের নির্দেশে কয়েকদিন আগে থেকেই শেখের কবরটিকে চিহ্নিত করে সেখানে পুলিশি পাহারা বসানো হয়।
[আরও পড়ুন: পুলওয়ামার শহিদ বাবলু সাঁতরার বাড়িতে রাজ্যপাল, পরিবারকে দিলেন ৫ লক্ষ টাকার চেক]
এরপর মঙ্গলবার ম্যাজিষ্ট্রেট ও পুলিশের উপস্থিতিতে তা তোলা হয়। এদিকে মৃতার স্ত্রী সখিসোনা বিবির অভিযোগ, তাঁর স্বামীকে দেখতে ভালবাসতেন না শ্বশুর, শাশুড়ি। তিন মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে দিনমজুর খেটেই সংসার চালাতেন তাঁর স্বামী। শ্বশুরের বারো বিঘা সম্পত্তি আছে। তার স্বামী জমির কিছুটা অংশ চাইলেও তা দিতে চাননি শ্বশুর, শাশুড়ি। এনিয়ে প্রায়ই বাড়িতে অশান্তি হত। দীর্ঘদিনের সেই চাপা অশান্তির জেরেই বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেন তাঁর স্বামী। ঘটনার পর গ্রামবাসীদের সঙ্গে আলোচনা করে অনুশোচনার বশে শ্বশুর,শাশুড়ি নিজে থেকেই সম্পত্তি লিখে দেন। নাতি, নাতনিদের অন্নসংস্থানের জন্য এই জমি তাঁরা লিখে দেন। যার ফলে চরম অভাব অনটনের মধ্যেও গ্রামবাসীদের সহযোগিতায় সংসার চালাচ্ছেন সখিসোনা। এই ঘটনায় স্থানীয়দের বেশিরভাগই সখিসোনাকে সমর্থন করে।
[আরও পড়ুন:‘দাঙ্গা চাই না, ভাত চাই’, কালিয়াগঞ্জের সভা থেকে বিজেপিকে হুঁশিয়ারি মমতার]
The post আড়াই বছর পর কবর খুঁড়ে তোলা হল কঙ্কাল! পাঠানো হল ময়নাতদন্তে appeared first on Sangbad Pratidin.