সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কয়েক ঘণ্টা আগেও পড়ুয়াদের হাসি-খেলায় ভরে ছিল উত্তর-পূর্ব দিল্লির অরুণ সিনিয়র সেকেন্ডরি স্কুলের চৌহদ্দি। অন্যান্য দিনের মতোই পরীক্ষার খাতা গুছিয়ে রেখে বাড়ি রওনা দিয়েছিলেন শিক্ষক-শিক্ষিকারাও। তখনও বোধহয় খানিকক্ষণ বাদের চরম পরিণতির কথা ভাবতে পারেননি তাঁরা। মঙ্গলবার বিকেল চারটে নাগাদ উন্মত্ত জনতা উত্তর-পূর্ব দিল্লির স্কুলটিতে তাণ্ডব চালায়। আগুনও ধরিয়ে দেওয়া হয়। রেহাই পায়নি স্কুলের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা বাসগুলিও। কোনরকমে প্রাণ হাত নিয়ে রণক্ষেত্র থেকে পালিয়ে বেঁচেছিলেন স্কুলের নিরাপত্তারক্ষী। তিনি এখনও সেই আতঙ্ক কাটিয়ে উঠতে পারেননি। ঘুমের মধ্যেও স্বপ্নে উন্মত্ত জনতার তাণ্ডবের ছবি ভেসে উঠছে।
রবিবার রাত থেকেই অগ্নিগর্ভ হয়ে রয়েছে রাজধানী। লাঠি হাতে একদিকে স্লোগান, “দেশকে গদ্দারোকো গোলি মারো সালো কো।” তো অন্যদিকে তরোয়াল হাতে চিৎকার, “আজাদি চাহিয়ে আজাদি, ছিন লেঙ্গে আজাদি।” এমত অবস্থায় দিল্লি শান্ত হওয়ার পরিবর্তে যে উত্তেজনা যে আরও ছড়াবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। উত্তর-পূর্ব দিল্লির জাফরাবাদ, মউজপুর, সিলামপুর, গোকুলপুরীতে কড়া নজরদারি জারি করা হয়েছে। বাকি এলাকাগুলিতে মোতায়েন করা হয়েছে আধাসেনা। এর মধ্যেও বেড়ে চলেছে মৃত্যু মিছিল।
[আরও পড়ুন : ‘সরকারের উচিত দ্রুত শান্তি ফেরানো’, দিল্লির হিংসা নিয়ে এবার সরব আরএসএসও]
টানা চারদিনের হিংসায় বিপর্যস্ত উত্তর-পূর্ব দিল্লি। বাড়ি থেকে দোকান, স্কুল থেকে অফিস-উন্মত্ত জনতার হাত থেকে রক্ষা পায়নি কিছুই। হিংসার আগুনের আঁচ ছড়িয়েছে শিক্ষাঙ্গনেও। পুড়ে খাক হয়েছে স্কুলে থাকা বইখাতা-বেঞ্চ-কম্পিউটার। এমনকী স্কুলের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা পুলকারগুলিও রেহাই পায়নি। চারিদিকে ছাই হয়ে ছড়িয়ে রয়েছে স্মৃতি। স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, ক্লাসের বেঞ্চ-চেয়্যার-টেবিল ভেঙে দেওয়া হয়েছে। তাতেও ক্ষান্ত হয়নি তাণ্ডবকারীরা। রীতিমতো আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে তাতে। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের লকারগুলিতেও ভাঙচুর করা হয়েছে। ইচ্ছেমতো ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে পরীক্ষার খাতা। চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে সেই খাতার পাতা। কোথাও কোথাও আবার খাতা-ফাইল-ডাঁই করে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। রেহাই পায়নি স্কুল ক্যান্টিনও।
[আরও পড়ুন : বয়সের ভারে পালাতে পারেননি আকবরি, দিল্লির হিংসার আগুনে খাক ৮৫-এর বৃদ্ধা]
বৃহস্পতিবার স্কুলের পুড়ে যাওয়া অংশে ঘুরতে ঘুরতে সেই কাহিনি শোনালেন অরুণ সিনিয়র সেকেন্ডরি স্কুলের ক্যাশিয়র নীতু চৌধুরি। মঙ্গলবার স্কুলে পরীক্ষা ছিল। বেলা তিনটে নাগাদ স্কুল থেকে পড়ুয়া ও শিক্ষক-শিক্ষিকারা বেরিয়েছিলেন। তারপরই বেলা চারটে নাগাদ প্রায় ২০০ জন এসে স্কুলে তাণ্ডব শুরু করে। ভাঙচুর করার পর স্কুল বিল্ডিংয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পুলিশ-দমকলকর্মীদের ফোন করেও পাওয়া যায়নি।রাত আটটা নাগাদ দমকলবাহিনী এসে আগুন নেভায়। তারপরই নীতু দেবীর স্বগতোক্তি, “ভাগ্যিস আর আধঘণ্টা আগে ওদের স্কুলের দিকে চোখ পড়েনি। নাহলে বাচ্চাগুলোর কি হল কে জানে!”
The post দিল্লির অশান্তির আঁচ থেকে রেহাই পেল না স্কুলও, পুড়ে ছাই বইখাতা থেকে লকাররুম appeared first on Sangbad Pratidin.