সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়: একাদশ শ্রেণির ছাত্র আবেশ দাশগুপ্তর মৃত্যুরহস্যে টানা পনেরো দিন বিভিন্ন দিক থেকে জোরালো তদন্ত করার পর অবশেষে খুনের তত্ত্ব পুরোপুরিভাবে খারিজ করে দিলেন লালবাজারের পুলিশকর্তারা৷ এমনকী, এই মৃত্যুতে বন্ধু-বান্ধবীদের গাফিলতির তত্ত্বও খারিজ করল পুলিশ৷ কিছুদিনের মধ্যেই আবেশের পরিবারকে পুলিশকর্তারা চূড়ান্তভাবে জানিয়ে দেবেন, খুন নয়, বালিগঞ্জের সানি পার্কের বহুতলের নিচে দুর্ঘটনাতেই মৃত্যু হয়েছে আবেশের৷ তবে তার আগে ফরেনসিক রিপোর্ট হাতে পেয়ে তা খতিয়ে দেখতে চান লালবাজারের গোয়েন্দারা৷
এই পনেরো দিন বিভিন্ন ভাবে, বিভিন্ন দিক থেকে জোরদার তদন্ত শুরু করে গোয়েন্দা পুলিশ৷ সঠিক তদন্তের জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে ‘সিট’ বা বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার৷ যুগ্ম নগরপাল (অপরাধদমন) বিশাল গর্গ এবং গোয়েন্দাপ্রধান (২) নীলু শেরপার নেতৃত্বে তদন্ত শুরু করে ‘সিট’৷ আবেশের বন্ধু-বান্ধবী এবং ওই বহুতলের নিরাপত্তারক্ষীদের লালবাজারে দফায় দফায় জেরা, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট, পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণ এবং সিসিটিভির ফুটেজ মিলিয়ে দীর্ঘ তদন্তের পর পুলিশ নিশ্চিত যে, হাতে মদের বোতল নিয়ে পড়ে গিয়েই মৃত্যু হয়েছে আবেশের৷
সানি পার্কের বহুতলের নিচে কী ঘটনা ঘটেছিল সেদিন? টানা পনেরোদিন তদন্তের পর ঘটনার একটি পরিষ্কার চিত্র পেয়েছেন গোয়েন্দাকর্তারা৷
ঘটনা এক: সেদিন এক বান্ধবীর জন্মদিনের পার্টিতে মজা করতে যাবে বলে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল আবেশ৷ তার আগে মা রিমঝিম দাশগুপ্ত আবেশের হাতে হাতখরচ বাবদ ১৮০০ টাকা দেন৷ এরপর আবেশরা একটি জায়গায় মিলিত হয়৷ তারপর তারা দক্ষিণ কলকাতার একটি অভিজাত ক্লাবে মধ্যাহভোজ সারে৷ পরে একটি মদের দোকান থেকে প্রায় তিন হাজার টাকার মদ কেনে তারা৷ একটি গাড়িতে বসেই তারা মদ্যপান সারে৷ আবেশের বন্ধু-বান্ধবীদের জেরা করে এই তথ্য পেয়েছে ‘সিট’৷
ঘটনা দুই: এরপর তারা চলে আসে সানি পার্কের বহুতলে৷ এখানেই বিখ্যাত সাহিত্যিক অমিত চৌধুরির মেয়ে অরুণার জন্মদিনের পার্টিতে অংশ নেয়৷ বন্ধু ঋষভ নন্দীর মাধ্যমেই আবেশের সঙ্গে অরুণার পরিচয় এবং জন্মদিনের পার্টিতে আসা৷ সন্ধে নামার মুখে তারা বহুতলের বেসমেন্টে ফের মদ্যপান করে৷ এরপর মদ্যপ অবস্থায় তারা ছোটাছুটি করতে শুরু করে বেসমেন্ট এবং পার্কিং লটে৷ সিসিটিভির ফুটেজের সূত্র ধরে এই তথ্য পেয়েছে ‘সিট’৷
ঘটনা তিন: এই বহুতলের নিচে রয়েছে দু’টি র্যাম্প৷ তার পাশে রয়েছে শিশুদের একটি পার্ক৷ ব্যবহার না করার জন্য একটি র্যাম্পের গেট বন্ধ৷ বেসমেণ্ট ও পার্কিং লট থেকে বের হওয়ার জন্য দ্বিতীয় র্যাম্প ব্যবহৃত হয়৷ ফুটেজে দেখা গিয়েছে, হাতে মদের বোতল নিয়ে ওই র্যাম্প থেকে নামছে আবেশ এবং সতেরোজন বন্ধু-বান্ধবী৷ র্যাম্পের পাঁচিলের উচ্চতা প্রায় আড়াই ফুট৷ কিন্তু বহুতলের মেঝে থেকে র্যাম্পের উচ্চতা প্রায় সাড়ে তিন ফুট৷ সেই পাঁচিল হাতে মদের বোতল নিয়ে মদ্যপ অবস্থায় টপকাতে গিয়েছিল আবেশ৷ তাতেই টাল রাখতে না পেরে সাড়ে তিন ফুট নিচে পড়ে যায় সে৷ ফেটে যায় মদের বোতল৷ ভাঙা বোতলের কাচের অংশ ঢুকে যায় আবেশের বগলের নিচে এবং বুক ও পেটের বিভিন্ন অংশে৷ তাতেই শুরু হয় রক্তক্ষরণ৷
ঘটনা চার: ওই অবস্থায় আবেশকে টেনে তুলতে যায় মদ্যপ বন্ধু-বান্ধবীরা৷ তাদের হ্যাঁচকা মেরে সরিয়ে দেয় আবেশ৷ নিজেই টলতে টলতে ফের র্যাম্প দিয়ে উপরে উঠতে যায় সে৷ ফের ধাক্কা খায় পাঁচিলে৷ ততক্ষণে তার শরীরে রক্তক্ষরণ তীব্র হয়ে ওঠে৷ বগলের নিচে কাটা অংশ থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত লাগে দেওয়ালে৷ এরপর আর টাল সামলাতে না পেরে পড়ে যায় আবেশ৷
এদিকে আবেশ স্মরণে আজ, শনিবার বিকেলে ২৭ লেক অ্যাভিনিউয়ে এক স্মরণসভার আয়োজন করেছে পরিবার৷
The post আবেশের মৃত্যু দুর্ঘটনাতেই, পরিবারকে জানাবে পুলিশ appeared first on Sangbad Pratidin.