ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের (Partha Chatterjee) কীর্তিতে বিড়ম্বনায় তৃণমূল (TMC)। মন্ত্রিত্ব এবং দলীয় পদ থেকে তাঁকে সরানোর দাবি উঠেছে দলের অন্দরেই। এবার তৃণমূলের মহাসচিবকে নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার পালা। এমন আবহে বৃহস্পতিবার দুপুর তিনটেয় মন্ত্রিসভার বৈঠক ডেকেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। একইদিনে বৈঠকে তৃণমূলের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির বৈঠক ডাকলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। মনে করা হচ্ছে, এই বৈঠকেই পার্থকে মহাসচিব পদে বহাল রাখা হবে কিনা তা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তৃণমূলের অন্দরে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে গুঞ্জন। ২০১৬ সালেই নাকি পার্থ চট্টোপাধ্যায়-সহ একঝাঁক নেতার সম্পর্কে একাধিক অভিযোগ পেয়েছিলেন অভিষেক। দলের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি বজায় রাখতে, নেত্রীর সম্মানের কথা ভেবে তখনই মন্ত্রিসভা এবং দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে তাঁদের সরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ। কিন্তু নেতাদের একাংশের চাপে তা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে এসএসসি দুর্নীতি কাণ্ডে (SSC Scam) রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেপ্তারি, তাঁর ঘনিষ্ঠ মডেলের বাড়ি থেকে টাকার পাহাড় উদ্ধার ঘিরে নিসন্দেহে চাপে পড়েছে রাজ্যের শাসকদল। এক নেতার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের নিরিখে জনমানসে দলের স্বচ্ছতা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। এমন পরিস্থিতিতে পার্থকে দলের মহাসচিব পদ থেকে এখনই সরিয়ে দেওয়ার দাবি উঠেছে দলের অন্দরে।
[আরও পড়ুন: পার্থকে এখনই দলের সব পদ এবং মন্ত্রিসভা থেকে বহিষ্কার করা উচিত, বিস্ফোরক টুইট কুণালের]
এমন পরিস্থিতিতে তড়িঘড়ি দলের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির বৈঠক ডেকেছেন অভিষেক। হাজির থাকবেন কমিটির সদস্য সুব্রত বক্সি, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, ফিরহাদ হাকিম এবং অরূপ বিশ্বাস। তৃণমূল সূত্রে খবর, এই বৈঠকে পার্থকে নিয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে। তাৎপর্যপূর্ণভাবে শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির বৈঠকে হাজির থাকতে বলা হয়েছে তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষকেও। তিনি নিজেই টুইট করে একথা জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, বেলঘরিয়ার ফ্ল্যাটে টাকার পাহাড় উদ্ধার হওয়ার পর থেকেই জোরদার হচ্ছিল পার্থকে সরানোর দাবি। বৃহস্পতিবার সকালে সেই দাবি নিয়ে টুইট করেন কুণাল। টুইট করে সরাসরি পার্থর অপসারণের দাবি করেছিলেন তিনি। জানিয়েছিলেন, দলীয় কর্মীদের কথাই তুলে ধরেছেন। এরপর তাঁকেও শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির বৈঠকে উপস্থিত থাকতে বলা নিসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ। এদিকে দল বৈঠক ডাকতেই নিজের সেই টুইট মুছে দিয়েছেন তৃণমূলের মুখপাত্র।
[আরও পড়ুন: পার্থকে এখনই দলের সব পদ এবং মন্ত্রিসভা থেকে বহিষ্কার করা উচিত, বিস্ফোরক টুইট কুণালের]
দলের তরফে সরাসরি এখনও পার্থর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া হলেও ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে ইডি (ED) কোনও ন্যূনতম প্রমাণ পেশ করতে পারলেই পার্থর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আবার পার্থর ঘনিষ্ঠ মহলের মাধ্যমে তাঁকে সব পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য বার্তাও পাঠানো হয়েছে। কিন্তু রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী নাছোড়বান্দা। তিনি কোনওভাবেই মন্ত্রিত্ব ছাড়তে নারাজ। দলীয় পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার ইঙ্গিতও দেননি তিনি। শুধু তাই নয়, সরাসরি নিজেকে নির্দোষ বলে দাবিও করতে পারছেন না পার্থবাবু। সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পেলেও একবারও নৈতিকতার খাতিরে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেননি রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী। তাঁর গ্রেপ্তারির পরদিন অভিষেকের অফিসে জরুরি বৈঠক হয়েছিল। সেই বৈঠক শেষে সাংবাদিক সম্মেলন করে তৃণমূল জানিয়েছিল, পার্থর বিরুদ্ধে অভিযোগ আদালতে প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেবে দল। কিন্তু যেভাবে একের পর সম্পত্তি, সেখান থেকে কোটি কোটি টাকা উদ্ধার হচ্ছে, তাতে দল কতক্ষণ পার্থকে কতক্ষণ দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল রাখা হয়, সেটাই এখন দেখার।