নন্দিতা রায়, নয়াদিল্লি: শক্তিশালী বিরোধী জোট গড়তে সবাইকে নিজেদের অহং ছেড়ে বেরতে হবে। আদর্শগতভাবে একজোট হতে হবে। লড়াইটা সরাসরি বিজেপির বিরুদ্ধে। বিজেপিই যে প্রধান শত্রু, তা বুঝতে হবে। সেটা মাথায় রেখে যে যেখানে শক্তিশালী, সেখানে তাদের লড়াই করার সুযোগ দিতে হবে। মঙ্গলবার বিজেপি-বিরোধী জোট নিয়ে এই ফরমুলাই দিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)।
রাজধানীতে তৃণমূল কংগ্রেসের দলীয় দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে ঘরোয়া আলাপচারিতায় অভিষেকের ইঙ্গিত, মানুষই ঠিক করে দেবে বিরোধী জোট। তাঁদের চাহিদাই প্রতিফলিত হবে। তৃণমূল কংগ্রেসনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বহুদিন ধরে বিরোধী ঐক্য নিয়ে এই কথাই বলে আসছেন। বিরোধী ঐক্যের ক্ষেত্রে কংগ্রেসের ভূমিকা নিয়ে তৃণমূল যে সন্তুষ্ট নয়, সেই বিষয়টিও স্পষ্ট করে দিয়েছেন অভিষেক। কংগ্রেস নিয়ে তাঁর সাফ জবাব, “কংগ্রেসকে তাদের দ্বিচারিতা ছাড়তে হবে। দৃষ্টিভঙ্গি পালটাতে হবে। তাদের নীতিগত সমস্যা রয়েছে, আগে নীতি ঠিক করতে হবে। কংগ্রেস দিল্লিতে এক কথা বলছে, আর বাংলায় আরেক কথা। বাংলায় অধীর চৌধুরি তৃণমূলকে গালাগালি করবে আর দিল্লিতে এসে বলবে ইডি খারাপ–এটা চলতে পারে না। ত্রিপুরায় কংগ্রেস সিপিএমের সঙ্গে চলছে। আবার বাংলায় তার সঙ্গে বিজেপিকেও নিচ্ছে। আমরা কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বলছি না। কিন্তু ওরা নীতি স্পষ্ট করুক। আমরা সব জায়গায় এক কথাই বলছি, আমাদের প্রধান শত্রু বিজেপি। আমরা বিজেপি শাসিত রাজ্যে লড়াই করতে গিয়েছি। গোয়ায় আমরা কংগ্রেসের সঙ্গেই চলতে চেয়েছিলাম। কথাও হয়েছিল পি চিদম্বরমের সঙ্গে। কিন্তু কংগ্রেস ঔদ্ধত্য ছাড়তে পারেনি।” নীতিগত অবস্থান থেকেই তৃণমূল রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ খারিজের বিরোধিতা করেছে। অন্য কারও সঙ্গে এমন হলেও তৃণমূল এই অবস্থান গ্রহণ করত বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।
[আরও পড়ুন: ‘ভারত থেকে কাশ্মীরের ১ ইঞ্চিও স্বাধীন করতে পারেনি’, পাকিস্তানি সেনাকে খোঁচা পাক তালিবানের]
অভিষেক জানিয়েছেন, পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্য তৃণমূল প্রস্তুত এবং যাতে ১০০ শতাংশ মনোনয়ন জমা পড়ে, সেদিকেও তাঁর নজর রয়েছে। অভিষেক বলেছেন, “রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচনে বাম আমল থেকে একটা ধারণা তৈরি হয়েছে। সেটা সবাই মিলে ভাঙতে হবে। সিপিএম আমলে বহু মানুষ পঞ্চায়েত ভোটে মারা যেতেন। ২০১৮ সালে দু’-একটি ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু বিক্ষিপ্ত ঘটনাকে বড় করে দেখানো হচ্ছে। এসব না করে সুষ্ঠুভাবে যাতে পঞ্চায়েত নির্বাচন হয় তার জন্য সবাইকে ভূমিকা নিতে হবে। প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে স্থানীয় স্তরে যঁাদের নাম উঠবে, তঁাদের মধ্যে যাচাই করে টিকিট দেওয়া হবে। ভাল লোককে প্রার্থী করলে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার হাওয়া রোখা সম্ভব।” সাম্প্রতিককালে রাজ্যের বিভিন্ন দুর্নীতিতে যেভাবে দলের নেতাদের নাম জড়িয়েছে, তার প্রভাব পঞ্চায়েতে পড়বে না বলেই মত অভিষেকের।
প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়-সহ দুর্নীতিতে যাঁরা জড়িত, তাঁদের বিরুদ্ধে দল ব্যবস্থা নিয়েছে বলেও উদাহরণ দিয়েছেন তিনি। চলতি বছর রাজ্যের ছ’টি রাজ্যসভা আসন খালি হচ্ছে। যার মধ্যে পাঁচটি যাবে তৃণমূলের ঘরে। সেই আসনে ভিন রাজ্যের কাউকে প্রার্থী করার ক্ষেত্রে পুরনো অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়েই চলবে তৃণমূল। গোয়ার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লুইজিনহো ফেলেইরোকে রাজ্যসভায় পাঠানোর প্রসঙ্গে অভিষেকের মন্তব্য, “চারটে সিদ্ধান্ত নিলে তার মধ্যে একটা ভুল হতেই পারে। আমরা ভুল থেকে শিক্ষা নিয়েছি।” ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল মেঘালয়, ত্রিপুরা, অসমের মতো রাজ্যে কয়েকজন প্রার্থী দিতে পারে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।