ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: লোকসভা ভোটের আগেই ‘আত্মনির্ভরতা’র পথে বাংলা! বাজেটের জোড়া ঘোষণাতেই সেটা কার্যত স্পষ্ট হয়ে গেল। রাজ্যকে ‘ভাতে মারতে’ ১০০ দিনের টাকা আটকেছে কেন্দ্র। আবাস যোজনার ঘর তৈরিও আটকে রয়েছে কেন্দ্রীয় বঞ্চনায়। মোদি সরকারের মনরেগা প্রকল্পের পালটা ৫০ দিনের কাজ এনেছে নবান্ন। একইসঙ্গে কেন্দ্রকে আবাস যোজনার টাকা মেটাতে ‘ডেডলাইন’ বেঁধে দিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন, আর ১ মাস দেখবে রাজ্য সরকার। না হলে আবাস যোজনার ১১ লক্ষ বাড়ি তৈরির বিষয়টি রাজ্য দেখে নেবে। অর্থাৎ আর কেন্দ্রের উপর নির্ভরতা নয়, বরং বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে স্বনির্ভরতার পথে হাঁটতে চাইছে তৃণমূল সরকার। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বার্তাতেও সে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। রাজ্য বাজেটের প্রশংসা করে এক্স হ্যান্ডেলে তিনি লিখেছেন, “স্বনির্ভর হওয়ার পথে হাঁটছে বাংলা। ডবলের চেয়ে সিঙ্গল ইঞ্জিন সরকার অনেক বেশি শক্তিশালী।”
এদিন বাজেট ভাষণে অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, “আবাস যোজনার টাকার জন্য আর এক মাস অপেক্ষা করব। তার পরও কেন্দ্র সরকার টাকা না দিলে রাজ্য সরকার এই বিষয়টি বিবেচনা করবে।” একই কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রীও। তাঁর কথায়, ‘‘১১ লক্ষ বাড়ির আবেদন আগেই এসেছিল। পরে ‘সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী’তে আরও তিন-চার লক্ষ প্রস্তাব এসেছে। সেগুলিও আমরা আস্তে আস্তে দেখে নেব।’’ আবার রাজ্য বাজেটে ১০০ দিনের কাজের শ্রমিকদের জন্যও বড়সড় ঘোষণা। মনরেগা প্রকল্পের মেটাতে ৩৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে রাজ্য। কেন্দ্রের একশো দিনের কাজের পালটা হিসেবে চালু করা হচ্ছে ‘কর্মশ্রী’। এতে প্রত্যেক জবকার্ড হোল্ডার বছরে ৫০ দিন নিশ্চিতভাবে কাজ পাবেন। অর্থাৎ যে দুই প্রকল্পে রাজ্যের পাওনা আটকে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার, সেই দুই প্রকল্পের ক্ষেত্রেই স্বনির্ভরতার পথে হাঁটতে শুরু করল রাজ্য।
[আরও পড়ুন: লোকসভা ভোটের আগে মাস্টারস্ট্রোক! ফের ডিএ বাড়ল রাজ্য সরকারি কর্মীদের]
এ প্রসঙ্গ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায় লিখেছেন, “রাজ্যের মা, বোন ও গরিবদের হাত শক্ত করে স্বনির্ভর বাংলার পথে এগিয়ে চলেছি আমরা। বাজেটে লক্ষ্মীর ভান্ডারের তহবিল বৃদ্ধি থেকে কর্মশ্রী চালু, সকলের উন্নতিকে নিশ্চিত করবে।” দিল্লির মোদি সরকার বার বার ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’-এর মন্ত্র জপে। কিন্তু এটা তাদের কাছে স্রেফ স্লোগানই বলে অভিযোগ করেছে তৃণমূল। এবার বাজেটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমাণ করে দিলেন, সকলের উন্নয়ন স্রেফ কথার কথা নয়, কাজে করে দেখালেন তিনি, বলছে ওয়াকিবহাল মহল। শেষে অভিষেকের কটাক্ষ, “ডবলের চেয়ে সিঙ্গল ইঞ্জিন সরকার অনেক বেশি শক্তিশালী।” পরিকাঠামো, পরিষেবায় বরাদ্দ বৃদ্ধি থেকে সংস্কারের পথে হেঁটে কেন্দ্রের বাজেটকে দশ গোল দিয়ে ‘সিঙ্গল ইঞ্জিনে’র ক্ষমতা দেখাল রাজ্যের তৃণমূল সরকার, অভিমত রাজনৈতিক মহলের।