‘মায়াকুমারী’র মুক্তির আবহে বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি ও তার স্যালারি নিয়ে কথা বললেন আবির চট্টোপাধ্যায়। শুনলেন বিদিশা চট্টোপাধ্যায়।
বাংলা সিনেমার একশো বছর উদযাপনে ‘ফিল্ম উইদিন ফিল্ম’ নিয়ে ‘মায়াকুমারী’। এই স্ক্রিপ্টের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক কোনটি?
ইন্ডাস্ট্রির ভিতর ঘরের গল্প নিয়ে ছবি হলে সেটা নিয়ে আমরা বেশিই পজেসিভ হয়ে যাই। যেহেতু আমাদের জগতের গল্প, সেটা দর্শকের কাছে বলতে হলে একটু সতর্ক থাকা দরকার। কারণ, অনেক ‘লব্জ’ আছে যেটা শুধু ইন্ডাস্ট্রির মানুষই বুঝবে। ফলে অনেক সময় কিছু রসিকতা মাঠে মারা যায়। তবে আমার কাছে ‘মায়াকুমারী’ একটা মানবিক গল্প। এবং বাংলার সিনেমার দু’টো ভিন্ন সময়কালের যে পার্থক্য সেটা ফিল্ম মেকিং হোক, বা স্টারডম – তার একটা তুলনামূলক ছবি ধরা পড়ে। আর বাকি ফ্যাক্টরগুলো তো রয়েইছে। এটা মিউজিক্যাল, এগারোটা গান রয়েছে। চরিত্রের নানা শেডস রয়েছে।
১৯৪০-এর একজন নায়কের কথা বলা হয়। সময়টা সত্যজিৎ রায় পরবর্তী। কোনওভাবে কি উত্তম-সুচিত্রা থেকে ইন্সপায়ার্ড ‘কানন কুমার’ এবং ‘মায়াকুমারী’-র চরিত্র?
উত্তম-সুচিত্রার সময়কাল হলেও কাননকুমার এবং মায়াকুমারী একেবারেই কাল্পনিক চরিত্র। সেই সময়ের হিট জুটি। কিন্তু যেহেতু আমরা ১৯৪০-১৯৫০-এর সময়টা ধরেছি, সেই সময়ের সিনেমা এবং ফিল্ম ব্যক্তিত্বের রেফারেন্স উঠে এসেছে।
ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি সবসময়ই পুরুষশাসিত। এমনকী ছবির ট্রেলারে সংলাপও আছে, ‘মায়াকুমারী’কেই সমালোচনার ভাগিদার হতে হয়েছে। কী মনে হয়, সময় কতটা বদলেছে? স্টার অ্যাক্টরের সম্মান হোক বা স্যালারি সেটা তো এখনও বেশি!
দু’টো জিনিস আমার মনে হয়। ‘ইকুয়াল পে’ নিয়ে প্রচুর কথা, প্রচুর আন্দোলন হয়েছে, হবেও। ‘ইকুয়াল পে’-তে আমার সম্পূর্ণ সমর্থন রয়েছে কিন্তু যে কোনও প্রফেশনের মতোই ফিল্মেও মার্কেট ডিমান্ড থেকে পেমেন্ট নির্ধারণ করা হয়। দর্শকের পারসেপশনের উপর অনেক কিছু নির্ভর করে। যাঁরা ইনভেস্টর তাঁরা রিস্ক এবং রিটার্ন ফ্যাক্টরের উপর ভিত্তি করে পেমেন্ট-স্টেটাস তৈরি করেন কিন্তু সেখানে নিশ্চয়ই অনেক গন্ডগোল আছে। তবে এই ইন্ডাস্ট্রিতে এবং বেশি করে বলব টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রির কথা, সেখানে কিন্তু অনেকটাই আমরা ‘ইকুয়াল পে’র জায়গা অ্যাচিভ করতে পেরেছি। তবে সবসময়ই ইমপ্রুভ করার জায়গা আছে।
এই ছবিতে আপনার ডবল রোল। সেটা নিয়ে বলুন…
হ্যাঁ, একদিকে আমি কাননকুমারের চরিত্রে, অন্যদিকে তার নাতি ‘আহির’-এর চরিত্রে। আমার কাছে কিন্তু আহিরের চরিত্রটা বেশি চ্যালেঞ্জিং। এটা নিয়ে অনেকের সঙ্গে আমার মেলে না। ‘বিদায় ব্যোমকেশ’-এর সময়েও ‘সাত্যকি’-র চরিত্র বেশি চ্যালেঞ্জিং ছিল। কারণ যে কোনও বয়স্ক চরিত্রে অনেক কিছু করার থাকে। লুক, মেকআপ, বডি ল্যাঙ্গুয়েজ, কিন্তু অন্যদিকে আহিরের চরিত্র সাদামাটা। এখানে স্বাভাবিকভাবে নতুন কী করা যায় সেটা চ্যালেঞ্জ। এই ছবিতে কাননকুমারের যুবা বয়স ও বৃদ্ধ বয়স এবং আহিরের বর্তমান সময় এবং আহির যখন ‘কাননকুমারের’ চরিত্রে অভিনয় করছে সেটাও করতে হয়েছে। ফলে আমাকে ভাবতে হয়েছে। এবং আহির তার দাদুর চরিত্রে অভিনয় করলেও লুক এবং বডি ল্যাঙ্গুয়েজ একটু আলাদা হবেই। সোমনাথ কুণ্ডুর সঙ্গে এটা নিয়ে আলোচনা করেছি।
[আরও পড়ুন: অন্যায়ভাবে চাপানো হয়েছে কোটি টাকার কর, সেলস ট্যাক্সের বিরুদ্ধে আদালতে অনুষ্কা]
বাংলা সিনেমার একশো বছর। নতুন কাজও হচ্ছে। কিন্তু সর্বভারতীয় স্তরে গুণগত মান বিচার করতে গেলে বাংলা পিছিয়ে। এবং এখনও অনেকে মনে করেন, ওনলি রে অফ হোপ ইজ রে! কী মনে হয়, বাঙালিরা ব্যক্তিপুজোয় মশগুল বেশি?
ব্যক্তিপুজোর চল আমাদের দেশেই রয়েছে। ফলে এই দেশে বায়োপিক হলেই আমার ভয় লাগে। কারণ অবজেক্টিভলি বায়োপিক দেখা এবং বানানোর মানসিকতা আমাদের আদৌ তৈরি হয়েছে কি না জানি না। আমার যেটা মনে হয় আমরা বাঙালিরা একটু বেশিই নস্ট্যালজিক। তাতে হয়তো এমনিতে অসুবিধে নেই। কিন্তু সেটা হয়তো কিছুটা পিছন দিকে টেনে রাখে। আমাদের তো সামনেও এগিয়ে যেতে হবে। এবং সবসময় তুলনামূলক আলোচনা হলে নতুনরা উৎসাহ হারিয়ে ফেলবেন। আরেকটা জিনিস মনে হয়, আমরা একটু বেশি আলোচনা-নির্ভর হয়ে পড়েছি। এই গেল গেল রবের কোনও দরকার নেই। বলছি না, আমরা দারুণ করে ফেলেছি। মানে অহংকার দেখানোর জায়গা নেই, কিন্তু গর্বিত তো হতেই পারি। এই বছরে কিছু নতুন পরিচালকের ছবি কিন্তু বিশ্ব দরবারে অথেনটিক ‘মেপল পাতা’ নিয়ে দেশে ফিরেছে। সেটাও কম কথা নয়।
আপনার কেরিয়ারের ১৪ বছর। আগামী দিনে অভিনেতা হিসাবে নিজেকে কীভাবে দেখতে চান? কোন ছবি করবেন, কোন ছবি একেবারেই করবেন না– এই নিয়ে কোনও স্ট্র্যাটেজি?
ইনফ্যাক্ট গত সপ্তাহেই পরিবার এবং বন্ধুদের সঙ্গে ঠিক এই আলোচনাটাই করছিলাম, এরপর কী! কীভাবে এগোবে, কোন কাজ করা উচিত। এখনও যে একটা সলিউশন বেরিয়ে এসেছে, তা নয়। তবে সাধারণত যখন কোনও স্ক্রিপ্ট শুনি প্রথম সাত মিনিট খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রথম সাত-দশ মিনিটে এক্সাইটেড ফিল করলে তখন পুরোটা আরও মন দিয়ে শুনি। সিনেমা দেখা বা স্ক্রিপ্ট শোনার ক্ষেত্রে দর্শক হিসাবেই দেখি বা শুনি। এটা একটা দিক, আরেকটা ব্যাপার হল পরিচালক বা প্রযোজক ছবির প্রতি কতটা যত্নশীল সেটা বোঝার ব্যাপার আছে। শুধু টাকা লগ্নি করলে চলবে না। পরিচালক, স্ক্রিপ্ট লেখকদের কাছে আমার একটা আরজি– রহস্য, গোয়েন্দা, ধাঁধা তো অনেক হল, বাকি গল্প কি কিছুই হবে না? (হাসি) সাধারণ দর্শক অপেক্ষা করে থাকে ব্যোমকেশ, সোনাদা নিয়ে, সেটা যেমন ভাল লাগে, আরেক দল আছে যারা ট্রোল করে – আবার গোয়েন্দা! এটা চলতেই থাকবে। তাই কী করা উচিত সেটা নিয়ে নিজের সঙ্গে নিজের আলোচনা চলবে।
আপনি সবসময়ই বলেন, হেলদি কমপিটিশনে বিশ্বাসী। এই মুহূর্তে দঁাড়িয়ে কী মনে হয়, টলিউডে পরিস্থিতি কি আদৌ হেলদি?
আমি তো প্রাণপণে হেলদি থাকার চেষ্টা করি। আমি বা আমার সমসাময়িক যাঁরা আছেন, এই স্টেজে পৌঁছে ছোটদের মতো বিবাদ করা হাস্যকর। ছবির ব্যবসা নিয়ে যদি কম্পিটিশনের কথা বল, তাহলে বলব, কোন ছবি কতটা ব্যবসা করল, সেটা জানার কোনও পদ্ধতি কিন্তু নেই, অন্তত আমার জানা নেই। অথেনটিক ডেটা পাওয়া যায় না।