ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: আইনকে হাতিয়ার করেই থ্যালাসেমিয়া (Thalassemia)নিয়ন্ত্রণে সরকার কঠোর পদক্ষেপ করতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এ ক্ষেত্রে বড় অস্ত্রের ভূমিকা নিতে চলেছে গর্ভপাত আইন। ১৫ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানিয়েছে, ২৪ সপ্তাহের গর্ভস্থ ভ্রূণ যদি থ্যালাসেমিয়া রোগের শিকার হয়, তা হলেও গর্ভপাত করা যাবে। থ্যালাসেমিয়া নিয়ন্ত্রণে গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির বৈঠক বসেছিল ২১ ও ২২ সেপ্টেম্বর। মেডিক্যাল টার্মিনেশন অফ প্রেগন্যান্সি আইনকে সামনে রেখে সেখানে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। বস্তুত পশ্চিমবঙ্গে থ্যালাসেমিয়া রোগ নির্মূল করতেই স্বাস্থ্যদপ্তরের এহেন পদক্ষেপ।
থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত প্রসূতির সন্তানের এই রোগের শিকার হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। সম্ভাবনা আরও প্রবল হয়, যদি প্রসূতির স্বামীও রোগের বাহক হন। থ্যালাসেমিয়াকে দ্রুত নির্মূল করতেই প্রথম দফায় নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে (NRS Medical College) গর্ভস্থ ভ্রূণের পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। একইসঙ্গে প্রয়োজনে গর্ভপাতও করানো হবে। পর্যায়ক্রমে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ (North Bengal Medical College), মুর্শিদাবাদ ও মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও এই পরিষেবা মিলবে। রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডা. অজয় চক্রবর্তী বলেন, “মেডিক্যাল টার্মিনেশন অফ প্রেগন্যান্সি আইন অনুযায়ী আগে ২০ সপ্তাহের গর্ভপাত করার অনুমোদন ছিল। এখন তা বেড়ে ২৪ সপ্তাহের বেশি করা হয়েছে। দিনকয়েক আগে এই সিদ্ধান্ত দিল্লি থেকে জানানো হয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে গর্ভপাতের ব্যাপারে দুই সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড সহমত হয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।”
[আরও পড়ুন: পুজোর আগে ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে’র টাকা হাতে পাচ্ছেন না এই জেলার মহিলারা]
মেডিক্যাল কলেজের ব্লাড ট্রান্সফিউশন অ্যান্ড হেমাটোলজির বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. প্রসুন ভট্টাচার্যর কথায়, “দেখা গিয়েছে, স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত হলে গড়ে ২৫ শতাংশ শিশুর রোগের শিকার হওয়ার সম্ভাবনা। বাকি ৭৫ শতাংশ বাহক। তবে এটাও বাঞ্ছনীয় নয়।’’
স্বামী-স্ত্রী থ্যালাসেমিয়া বাহক হলে গর্ভস্থ ভ্রূণ থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত কি না জানতে ‘কোরিওনিক ভিলা স্যাম্পলিং’ বা সিভিএস টেস্ট করা হয়। গর্ভস্থ ভ্রূণের টিসুর ডিএনএ পরীক্ষা (DNA test)করে চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে বোঝা যায়, ভ্রূণ সংক্রমিত কি না। এর পর স্বামী-স্ত্রী সহমত হলে অন্তত দুই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের বোর্ড গর্ভপাতের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। স্বাাস্থ্যকর্তারা জানিয়েছেন, প্রক্রিয়ার মূল উদ্দেশ্য রোগ নিয়ন্ত্রণ। এবং গোটা পর্বে কঠোরভাবে গোপনীয়তা বজায় রাখা হবে। স্বাস্থ্য ভবনের এক কর্তার দাবি, বেসরকারি হাসপাতাল বা নার্সিংহোমে এমন পরীক্ষা সম্ভব। রোগ নিয়ন্ত্রণের স্বার্থে তাতে স্বাস্থ্য ভবনের অনুমতিও মিলবে।
[আরও পড়ুন: ‘ডিভিসি যেভাবে জল ছাড়ছে তা মারাত্মক অপরাধ’, নবান্ন থেকে ফের তোপ দাগলেন মুখ্যমন্ত্রী]
সরকারি হিসাব মোতাবেক, বঙ্গে থ্যালাসেমিয়া রোগীর সংখ্যা প্রায় ১৮ হাজার। তবে এটা স্রেফ হিমশৈলের চূড়ামাত্র। তাই প্রতিটি জেলায় ব্লক হাসপাতাল পর্যন্ত প্রসূতির থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা নিখরচায় হবে। ভ্রূণ থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত হলে গর্ভপাতের ব্যবস্থাও হবে।