shono
Advertisement

রাতে টেলিফোনের পাশে জেগে ৪ চিকিৎসক, মাঝরাতের দাম্পত্য কলহ সামলাচ্ছে SSKM

টোল ফ্রি নম্বরে ফোন করলেই মানসিক সমস্যার সুরাহা।
Posted: 12:27 PM Jan 09, 2023Updated: 07:03 PM Jan 09, 2023

স্টাফ রিপোর্টার: কয়েক দিন আগের কথা। গত বছরের ৬ ডিসেম্বর। রাত সাতটা। হঠাৎ একটা ফোন বেজে উঠল। অপরপ্রান্তের বিষণ্ণ কিশোরকণ্ঠ থেকে এক নিঃশ্বাসে বেরিয়ে এল কতগুলো শব্দ, ‘‘বড্ড নিঃসঙ্গ। কেউ ভালোবাসে না। আর বাঁচতে চাই না। আত্মহত‌্যা করব!’’ এ প্রান্তে থাকা পিজি’র ইনস্টিটিউট অফ সাইকিয়‌্যাট্রি (IOP)-র কলসেন্টারের চিকিৎসক কয়েক সেকেন্ডর জন‌্য থমকে গিয়েছিলেন। তবে অভিজ্ঞতার জোরে বুঝে যান, কথা চালিয়ে যেতে হবে। ফোনের ও প্রান্তের নিঃসঙ্গ ছেলেটিকে বাঁচিয়ে রাখতে আপাতত এ ছাড়া উপায় নেই। কিন্তু দু’-চার মিনিট কথোপকথনের পরেই সে বলে ওঠে, ‘‘রাখছি। আমায় আর ফোনে পাওয়া যাবে না। নিজেকে শেষ করে দেওয়া ছাড়া আমার সামনে রাস্তা নেই।’’

Advertisement

ফোন কেটে গেল। তবে ইনস্টিটিউট হাল ছাড়েনি, লাগাতার ফোন করে যায় ওই মোবাইলে। প্রথমে না ধরলেও পরে বছর সতেরোর ছেলেটি ফোন ধরে ডাক্তারবাবুদের সঙ্গে কথা বলেন। পর দিন বাড়ির লোকের সঙ্গে হাসপাতালের আউটডোরে দেখাতেও আসে। অবসাদ কাটিয়ে সে এখন মানসিক ভাবে বেশ চাঙ্গা। ইনস্টিটিউট অফ সাইকিয়‌্যাট্রির অধির্কতা ডা. অমিত ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘প্রায় দু’মাস হল, আইওপি’তে টেলি মেন্টাল হেল্পলাইন সেল চালুু হয়েছে। মানসিক সমস‌্যার কথা জানাতে রোজ ৭০-৭৫টি ফোন আসছে।’’ মাঝরাতে স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া মেটান, অল্পবয়সী ছেলেমেয়ে ঘরের দরজা বন্ধ করে বসে থাকলে উদ্বিগ্ন, অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়ান দেবদূতের মতো। বহু ক্ষেত্রে স্রেফ ফোনে কথা বলে সমস‌্যার সাময়িক সমাধান হয়ে যায়। ‘‘পরে আউটডোরে চিকিৎসা করে ছেলেটি বা মেয়েটি যখন সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে, চিকিৎসক হিসাবে সেটাই প্রাপ্তি।’’- মন্তব‌্য এক চিকিৎসকের।

[আরও পড়ুন: বিচারপতি মান্থার বিরুদ্ধে পোস্টার হাই কোর্টে, এজলাসের গেট আটকে বিক্ষোভ আইনজীবীদের]

অমিতবাবুর কথায়, ‘‘এমন কলেজ পড়ুয়াও দেখেছি যে, কয়েক মাস বাদে বাদে প্রেমে পড়ছে, ব্রেকআপ হচ্ছে। মানসিক ধাক্কা সামলাতে না পেরে শেষমেশ এখানে এসেছে। এখন দিব‌্য সুস্থ। যখন জিজ্ঞেস করি, কী রে, আর প্রেম করছিস? লাজুক হেসে বলছে, ছাড়ুন তো স‌্যার। আগে কেরিয়ার পরে ও সব।’’ এ তো গেল টেলি কাউন্সেলিংয়ের দিক। SSKM-এর আইওপি’র জরুরি বিভাগ মাঝরাতেও খোলা থাকে। চিকিৎসক, নার্স সবাই থাকেন। কেমন রোগী আসে? অমিতবাবু বলেন, ‘‘দেখা গেল, ঘরে ভাঙচুর করছে, পরিজনদের মারধর করছে। সাময়িক নার্ভাস ব্রেকডাউন। এমন রোগীদের নিয়ে আসা হয়। পুলিশ কোনও মদ‌্যপকেও নিয়ে আসে। সুস্থ করে বাড়ি পাঠানো হয় তাদেরও। ইন্ডোর বা আউটডোর রোগীদের চিকিৎসার সঙ্গে টেলি কাউন্সেলিং আমজনতার সমস‌্যা সমাধানে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।’’

[আরও পড়ুন: চেতলায় ঝুপড়িতে আগুন, দেওয়াল ভেঙে উদ্ধার দম্পতি ও ২ শিশু]

প্রসঙ্গত, ১৫ নভেম্বর মুখ‌্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ‌্যায় আইওপি’তে টেলি মেন্টাল হেল্পলাইন সেলের উদ্বোধন করেন। টোল ফ্রি নম্বর ১৮০০৮৯১৪৪১৬ ও ১৪৪১৬ নম্বরে ফোন করে মানসিক সমস‌্যার সুরাহা মেলে।
৪০ জন কাউন্সেলর ও ২৫ জন চিকিৎসক এই পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত। রাতেও অন্তত চার জন চিকিৎসক টেলিফোনের পাশে থাকেন। রোগীদের সাহায্য করেন। 

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement