কলহার মুখোপাধ্যায়, বিধাননগর: সকালে মৃত্যু। দুপুরবেলার মধ্যে দাহ কাজ সেরে পাড়ায় ফিরেছেন শ্মশানযাত্রীরা। সেসময় হাসপাতাল থেকে ফোন করে জানানো হল, মৃতের শরীরে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে। সাবধানতা অবলম্বন করার প্রয়োজন রয়েছে তার সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের। ততক্ষণে অবশ্য যা বিপত্তি ঘটার ঘটে গিয়েছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে হুলুস্থুল পড়ে যায় সল্টলেকে সুকান্তপল্লিতে। মৃতের পরিবারের দুই সদস্যকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে। আরও তিন আত্মীয়কে মৃতের সরাসরি সংস্পর্শে আসার কারণে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে। সঙ্গে আরও যে ২৯ জন শ্মশানযাত্রীর বাড়ি সংলগ্ন এলাকা এবং মৃতের পাড়া ঘিরে দেওয়া হয়েছে। সোমবার এবং মঙ্গলবার সারাদিন ধরে জীবাণুমুক্ত করার কাজ চালিয়েছে পুরনিগম। তবে ঘটনার পর থেকে সুকান্তনগরের নবপল্লি এলাকায় থমথমে আতঙ্কের পরিবেশ। হাসপাতাল খবর দিতে অহেতুক দেরি করেছে বলে পরিস্থিতি সঙ্গিন অবস্থা নিয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন বাসিন্দারা।
বিধাননগর পুরোনিগমের ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের নবপল্লি এলাকায় থাকতেন পেশায় রান্নার কাজ করা চল্লিশোর্ধ্ব এক মহিলা। গত মাসে তার স্ট্রোক হয়। কলকাতার নীলরতন সরকার হাসপাতাল ভরতি করা হয়েছিল। দুই সপ্তাহ হাসপাতালে চিকিৎসার পর বাড়ি ফিরে আসেন মহিলা। গত সপ্তাহের শেষের দিকে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। পরিবারের লোকজন তাকে ভিআইপি রোডের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভরতি করেন। সোমবার ভোর ছটায় তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পর সকাল সাড়ে দশটার সময় দেহ নিয়ে নবপল্লিতে ফেরেন পরিবারের সদস্যরা। সেখানে ক্রিয়াকর্ম করার পর দেহ নিয়ে যাওয়া হয় নিমতলা শ্মশানে। দুপুর দেড়টার মধ্যে শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়ে যায়।
[আরও পড়ুন : ‘মাটির সৃষ্টি’ ও ‘সেন্টিনেল সার্ভে’ করার কথা ঘোষণা মমতার, জানুন কী এই পদক্ষেপ]
শ্মশানযাত্রায় শামিল হয়েছিলেন ৩০ জন মানুষ। দাহকার্য সম্পন্ন করে এরা প্রত্যেকেই নবপল্লি ফেরেন। শ্মশানযাত্রীদের মধ্যে চারজন বেলেঘাটা এবং বাকিরা সুকান্তনগর বাসিন্দা বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। নবপল্লিতে ফেরার পর দাহকাজ পরবর্তী আচারে শামিল ছিলেন শ্মশানযাত্রীরা। ঠিক সেই সময় হাসপাতাল থেকে ফোনের মাধ্যমে পরিবারকে মৃতের করোনা থাকার খবর দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন মৃতের পরিবার। আকস্মিক এই খবর পাওয়ার পর শ্মশানযাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মৃতের শরীরে ফুলমালা ইত্যাদি দেওয়া থেকে শুরু করে তার দেহ ওঠানোর কাজে নিযুক্ত ছিলেন অনেকেই। তারা প্রত্যেকেই কিছুটা সরাসরিভাবে মৃতের কাছাকাছি চলে এসেছিলেন।
[আরও পড়ুন : লকডাউন শিথিল হলেও এখনই স্বাভাবিক হচ্ছে না হাই কোর্ট, বদল একাধিক নিয়মে]
করোনার খবর পাওয়ামাত্রই এই দলটির মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। ঘটনার কথা জানিয়ে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জয়দেব নস্করকে ফোন করেন মৃতের স্বামী। পুরপিতা ঘটনাস্থলে এসে হাসপাতালে ফোন করে বিষয়টির সত্যতা যাচাই করেন। জয়দেববাবু জানিয়েছেন, হাসপাতাল তাঁকে একই কথা বলেছে। মহিলা যে করোনা জীবাণু বহন করছিলেন সে কথা স্পষ্ট করেই জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এরপরই হাসপাতালের দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ করেছে বলে একযোগে অভিযোগ তোলেন নবপল্লির বাসিন্দারা। পুরো ঘটনাটা বিস্তারিতভাবে বিধাননগর পুরনিগম, মহকুমা শাসকের দপ্তর এবং বিধানননগরের বিধায়কের দপ্তরে জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন জয়দেববাবু।তিনি জানিয়েছেন, ২৯ জন শ্মশানযাত্রীকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হবে কিনা তা মহকুমা শাসকের কাছে জানতে চেয়েছেন তিনি। বিধাননগর পুরনিগমের মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) প্রণয়কুমার রায় জানিয়েছেন, এই খবরটি তাদের কাছে এসেছে। খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে। খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।
The post দাহ করে ফেরার পর জানা গেল করোনা ছিল দেহে, ভয়ে কাঁটা শ্মশানযাত্রীরা appeared first on Sangbad Pratidin.