অর্ণব আইচ: ৩০ কোটি লেনদেনের খাতায় সই কার? কোন পথেই বা গিয়েছে নিয়োগ দুর্নীতির ওই বিপুল পরিমাণ টাকা? কোন কোন এজেন্টের মাধ্যমে কত টাকা গিয়েছে প্রভাবশালীদের কাছে? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্সি জেলে গিয়ে হুগলির যুব নেতা কুন্তল ঘোষকে জেরা করল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। শুক্রবারই কুন্তলকে তোলা হবে ব্যাঙ্কশালের বিশেষ ইডি আদালতে। তার আগে দুপুর থেকে সন্ধে পর্যন্ত কুন্তলকে এই জেরার বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। এদিকে, এদিনই তাপস মণ্ডল ঘনিষ্ঠ ও কুন্তলের পরিচিত গোপাল দলপতিকে তলব করে সিবিআই। নিজাম প্যালেসের দপ্তরে তলব করে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে চিট ফান্ড কর্তা গোপাল দলপতি তথা আরমান গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম উঠে আসে। তাঁর মাধ্যমেও বিপুল টাকা সরানো হয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন কুন্তল। সেই ব্যাপারে এদিন সিবিআই গোপাল দলপতিকে জেরা করে বলে খবর।
এদিন দুপুরে প্রেসিডেন্সি জেলে যায় ইডির একটি টিম। এর আগেই আদালত ইডিকে অনুমতি দিয়েছিল কুন্তলকে জেলে গিয়ে জেরা করার জন্য। ইডি আধিকারিকদের মতে, সম্প্রতি নিয়োগ দুর্নীতিতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে, যেগুলি যাচাই করার জন্য কুন্তলকে জেরার প্রয়োজন ছিল। ইডির সূত্র জানিয়েছে যে, তাঁর বাড়ি থেকেই উদ্ধার হয়েছে একটি খাতা, যাতে ছিল ৩০ কোটি টাকার হিসাব। সেই খাতায় কয়েকজনের নাম লেখা রয়েছে, সেই নামগুলি ‘কোড’ বলেই ধারণা ইডি-র। কিন্তু ওই ‘কোড নামে’ থাকা ব্যক্তিগুলির আসল পরিচয় সম্পর্কে ইডির নিশ্চিত হওয়ার প্রয়োজন ছিল। সেই বিষয়ে জেরা করা হয় কুন্তলকে। ওই খাতায় কয়েকটি সই রয়েছে। এমনকী, কুন্তল ঘোষের নামেও রয়েছে সই। সেই সইগুলি আদৌ কুন্তলের কি না, সেই ব্যাপারেও নিশ্চিত হতে চান ইডি আধিকারিকরা। তাই হস্তলেখা বিশেষজ্ঞরও সাহায্য নিচ্ছে ইডি। সেই সূত্রেই কুন্তলের হাতের লেখার নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে।
[আরও পড়ুন: ‘জঙ্গলসুন্দরী শিল্পনগরী’তে লক্ষ লক্ষ কর্মসংস্থান, পঞ্চায়েত ভোটের আগে ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর]
কুন্তলকে জেরা করে তথ্য সামনে আসে যে, তাঁর মাধ্যমে ১৩০ জন চাকরিপ্রার্থী প্রাথমিক স্কুলে চাকরি পান। একেকজন প্রার্থীর কাছ থেকে আট লক্ষ টাকা করে নেওয়া হয়। ওই প্রার্থীরা স্কুলের চাকরিতে যোগদানও করেন। সেই সূত্রে কুন্তল সাড়ে দশ কোটি টাকা তোলেন বলে অভিযোগ। কুন্তল আগেই দাবি করেছিলেন যে, যত টাকা তোলা হয়েছিল, তার দশ শতাংশ মাত্র কুন্তল নিয়েছিলেন। এখনও পর্যন্ত প্রায় ৫০ কোটি টাকা চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে তুলে তাপস মণ্ডল, গোপাল দলপতি, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, মানিক ভট্টাচার্য সহ বেশ কয়েকজন প্রভাবশালীর কাছে পাঠিয়েছিলেন। সেই ক্ষেত্রে কুন্তল ১০ শতাংশ হিসাবে অন্তত পাঁচ কোটি টাকা পেয়েছিলেন। সেই পাঁচ কোটি টাকা কোন কোন খাতে খরচ হয়েছে, ওই টাকা দিয়ে কত গাড়ি ও ফ্ল্যাট বা সম্পত্তি কেনা হয়েছে, সেই তথ্যও কুন্তলকে জেরা করে জানার চেষ্টা হয় বলে জানিয়েছে ইডি।