দীপঙ্কর মণ্ডল: বাড়িতে বসে অনলাইনে পরীক্ষা দেওয়ার দাবিতে স্নাতক পড়ুয়াদের বিক্ষোভের আঁচ আরও বাড়ল। মঙ্গলবার রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের (Rabindra Bharati University) উপাচার্যকে ঘেরাও করে দরজায় লাথি মারা থেকে বিভিন্ন ক্যাম্পাসে পড়ুয়াদের প্রতিবাদে শামিল হওয়ার ছবি দেখা গেল। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্ক সার্কাস ক্যাম্পাসও অনলাইন পরীক্ষার দাবিতে উত্তাল হয়। বর্ধমান ও বীরভূমেও একই দাবিতে ক্ষোভ দেখিয়েছেন পড়ুয়ারা। উল্লেখ্য, রাজ্যের শাসকদলের ছাত্র ও অধ্যাপক সংগঠনও আগেই অনলাইন পরীক্ষার দাবি তুলেছে। তবে কোন মোডে পরীক্ষা হবে তা সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় কতৃর্পক্ষকে ঠিক করার দায়িত্ব দিয়েছে উচ্চশিক্ষা দপ্তর। তবে এ বিষয়ে এদিন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের তরফে ছাত্রছাত্রীদের শালীনতার মাত্রা অতিক্রম না করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সাফ জানানো হয়েছে, এহেন আচরণ সমর্থন করা হবে না।
১৩ মে উচ্চশিক্ষা দপ্তর নির্দেশিকা জারি করে জানায়, কোন মোডে পরীক্ষা হবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হল। রবিবার নদিয়ার কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় ও পশ্চিম মেদিনীপুরের বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় সিদ্ধান্ত নেয় পরীক্ষা হবে অনলাইনে। এই পদ্ধতিতে বাড়িতে বসে বই দেখে পরীক্ষা দেওয়া যায়। তৃণমূল ছাত্র পরিষদ ও রাজ্যের শাসক দলের অধ্যাপক সংগঠনও (ওয়েবকুপা) অনলাইন পরীক্ষার পক্ষে সওয়াল করে। সোমবার এই আবহে স্রোতের বিপরীতে হেঁটে রবীন্দ্রভারতী ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আগের ঘোষণা মত অফলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। অনলাইনের দাবিতে আগেই বিক্ষোভ হয়েছিল রবীন্দ্রভারতীতে। মঙ্গলবার তা আরও জোরালো হয়। দুপুরে একদল পড়ুয়া গিয়ে উপাচার্য সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরীর ঘরের সামনে বসে পড়েন। দাবি না মানা পর্যন্ত তাঁরা উপাচার্যকে ঘেরাও করে রাখবেন বলে ঘোষণা করেন। এসবের মধ্যে হঠাৎ একদল পড়ুয়া উপাচার্যর বন্ধ দরজায় লাথি মেরে খোলার চেষ্টা করেন। যদিও ইংরেজির স্নাতক ছাত্রী ব্রততী দত্ত বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন কর্মী আমাদের (ছাত্রীদের) গায়ে হাত দিয়েছে। অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়া হবে একথা না ঘোষণা পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।” রবীন্দ্রভারতীর উপাচার্যর বক্তব্য জানা যায়নি। আলিয়ার পড়ুয়ারাও একই দাবিতে পার্ক সার্কাস ক্যাম্পাসে পোস্টার হাতে বিক্ষোভে শামিল হন।
[আরও পড়ুন: বউবাজারের আতঙ্ক এবার সোনারপুরে, বহুতল নির্মাণে কাজ চলাকালীন একাধিক বাড়িতে ফাটল]
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়েও ছাত্রছাত্রীরা বিক্ষোভ দেখান একই দাবিতে। বিশ্ব বিদ্যালয়ের অধীন বিভিন্ন কলেজের ছাত্রছাত্রীর প্রশাসনিক ভবনের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের দাবি, করোনার কারণে কলেজে গিয়ে পঠন পাঠন বন্ধ ছিল। অনলাইন মাধ্যমেই পড়াশুনা চালিয়ে যেতে হয়েছে পড়ুয়াদের। এমনকি প্রাকটিক্যাল ক্লাস করা সম্ভব হয়নি। এই পরিস্থিতিতে সব কলেজে সিলেবাস শেষ করা সম্ভব হয়নি। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য আশিস পানিগ্রহী জানান, “বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬২ টি কলেজের অধ্যক্ষ ও বিভাগীয় প্রধানদের সঙ্গে কথা বলে এবছর সমস্ত সেমেস্টার পরীক্ষা অফলাইনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ছাত্রছাত্রীরা অনলাইন পরীক্ষার দাবি জানিয়েছে। এই বিষয়ে কলেজে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে আগামী সপ্তাহে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।”
অনলাইনে পরীক্ষার দাবিতে এদিন উত্তাল হয় বীরভূমের সিউড়ি, বোলপুর ও হেতমপুর কলেজও। বোলপুরে কলেজ অধ্যক্ষকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখানো হয়। পড়ুয়াদের দাবি, অনলাইনে পরীক্ষা না নেওয়া হলে পাঠক্রম শেষ করার জন্য বাড়তি সময় দেওয়া হোক। এই দাবিতে কলেজ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে তাঁরা স্মারকলিপি দেন। কলেজ অধ্যক্ষরা জানান, ছাত্রছাত্রীদের দাবি তাঁরা উপাচার্যের কাছে পাঠিয়ে দেবেন। ছাত্র সংগঠন ডিএসও–র বক্তব্য, প্রয়োজনে সিলেবাস খানিকটা কমিয়ে দিয়ে অফলাইনেই পরীক্ষা হোক। ছাত্র ও শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে ষষ্ঠ সেমেস্টারের অফলাইন পরীক্ষা হোক এবং জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে ফল প্রকাশ করে দেওয়া হোক, তাহলে স্নাতকোত্তরে ভর্তির ক্ষেত্রে অসুবিধে হবে না। পাশাপাশি দ্বিতীয় ও চতুর্থ সেমেস্টারের পরীক্ষা হোক জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে।