সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: চলে গেলেন হিন্দুস্থানি মার্গ সংগীতের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব অন্নপূর্ণাদেবী। শুক্রবার ভোর তিনটে বেজে ৫১ মিনিটে মুম্বইয়ের এক বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন এই মহান শিল্পী। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯১ বছর। প্রবাদ প্রতিম সংগীতজ্ঞ আলাউদ্দিন খাঁ সাহেবের কন্যা অর্ণপূর্ণাদেবী মূলত সুরবাহার বাজাতেন। অসামান্য প্রতিভার জন্য পেয়েছেন পদ্মভূষণ পুরস্কারও। তাঁর মৃত্যুতে ভারতীয় ধ্রুপদী সংগীত জগতে শোকের ছায়া নেমেছে। এই মহান শিল্পীর মৃত্যুতে টুইটবার্তায় শোক প্রকাশ করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
মাইহার বেনারস ঘরানার অন্যতম মহীরূহ অন্নপূর্ণা দেবী ধ্রুপদী সংগীত জগতে যখন আলো ছড়াচ্ছেন তখনই তাঁর বিয়ে হয়ে যায়। প্রখ্যাত সেতারবাদক রবিশংকরের সহধর্মিনী ছিলেন তিনি। যদিও সেই বিয়ে বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। খুব শিগগির তাঁদের বিচ্ছেদও হয়ে যায়। একটা সময় পর নিজে থেকেই প্রচারের আলোক থেকে সরে যান এই প্রবাদপ্রতিম শিল্পী।
[আমার দুগ্গা: ঠাকুর দেখে বেরিয়ে দেখি চুরি হয়েছে নতুন পাম্প শু]
ফিরে আসি অন্নপূর্ণাদেবীর মেয়েবেলার প্রসঙ্গে। মাইহার, বেনারস থেকে প্রায় ১৬০ মাইল দূরে অবস্থিত ভারতীয় সংগীতের অন্যতম পীঠস্থান। সেখানেই থাকতেন বাবা আলাউদ্দিন খাঁ। মাইহার তাঁর সাধনক্ষেত্র। পুত্র আলি আকবর খাঁ সকাল হলেই রেওয়াজে বসে যেতেন। আগের দিনই বাবা আলাউদ্দিন খাঁ সাহেবের কাছে মালকোষ, ললিত, ভাটিয়ার বা ভুপালি কোনও একটির নিবিড় চর্চা হয়েছে। তারই কঠোর অনুশীলন চলছে। সুরের একটু এদিক ওদিক হলেই বাবা কাউকে রেয়াত করেন না। এ তো যেমন তেমন অনুশীলন নয়, প্রহরের পর প্রহর ধরে চলে সে সংগীতচর্চা। এর মাঝে বোনের সঙ্গে একটু আধটু খুনসুটি। রোশনারা আলি আকবরের একমাত্র ছোটবোন। দাদার সঙ্গে তার ভারি ভাব। চলে আবদারের পালাও। একদিন এমনই এক সকালে বাইরে খেলছে রোশনারা। দাদা খোলা বারান্দায় বসে বাজিয়ে চলেছেন। হঠাৎ বোন এসে হাজির। বলে, ‘দাদা এইভাবে নয়, বাবা এইভাবে শিখিয়েছেন।’ দাদা অবাক হয়ে বললেন, ‘গা দেখি।’ বোন গাইতে থাকে আগের দিনের বাবার শেখানো সে রাগ, একেবারে নির্ভুল। ততক্ষণে বাবা আলাউদ্দিন খাঁ সাহেব এসে দাঁড়িয়েছেন মেয়ে রোশনারার পিছনে। সেদিন থেকেই বাবার কাছে মেয়ের তালিম শুরু। মেয়েকে শেখাতে বসে অবাক হয়ে যান বাবা আলাউদ্দিন খাঁ সাহেব। অসাধারণ প্রতিভা, খ্যাতি কোনও কিছুই অন্নপূর্ণাদেবীর থেকে দূরে থাকতে পারেনি। নিজের শিক্ষা উজাড় করে দিয়েছেন ছাত্রদের মধ্যে। তাঁরই বদান্যতায় ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীত জগতে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায়, হরিপ্রসাদ, বসন্ত কাবরা, জর্জ হ্যারিসন প্রমুখ শিল্পীরা। নিজের শিক্ষাধারা, প্রতিভার সবটুকু উজাড় করে দিয়েছেন তাঁর ছাত্রছাত্রীদের। তবে প্রখ্যাত সেতার বাদক শিল্পী রবিশংকের সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদের পর একটু একটু করে অন্তরালে চলে যান অন্নপূর্ণাদেবী। দক্ষিণ মুম্বইযের আকাশগঙ্গা আবাসনের সাততলার ফ্ল্যাটে থাকতেন শিল্পী। শারীরিক অসুস্থতা জনিত কারণে শহরের এক বেসরকারি হাসপাতালে ভরতি হন। সেখানেই এদিন ভোরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন।
[আমার দুগ্গা: পুজোর সময় মেলা দেখার অন্য অনুভূতি ছিল]
The post প্রয়াত হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সংগীতের বিশিষ্ট শিল্পী অন্নপূর্ণা দেবী appeared first on Sangbad Pratidin.