সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ‘জাতের নামে বজ্জাতি সব জাত-জালিয়াৎ খেলছ জুয়া, ছুঁলেই তোর জাত যাবে? জাত ছেলের হাতের নয়তো মোয়া।’ অনেক বছর আগে বিদ্রোহী কাজী নজরুল ইসলামের লেখা এই বিখ্যাত কবিতাটি আজও যে সমানভাবে প্রাসঙ্গিক মাঝে মধ্যেই তার প্রমাণ মেলে। দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যখন সবাইকে ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’তে অভ্যস্ত হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন তখনও সেই প্রদীপের নিচে থাকা অন্ধকারে নিমজ্জিত রয়েছে ‘কুসংস্কারাচ্ছন্ন ভারত’। সম্প্রতি গুজরাটের আমেদাবাদে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা ফের সেই কথাই মনে করিয়ে দিল। উচ্চবর্ণের পদবি ব্যবহার করার জেরে আক্রান্ত হলেন দলিত সম্প্রদায়ের এক যুবক। ইতিমধ্যে এই বিষয়ে তিনি পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করলেও এখনও কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আক্রান্ত ২১ বছরের দলিত যুবক ভারত যাদব সানন্দ এলাকার মাগনেট্টি মারেলি মাদারসন অটো সিস্টেম প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানিতে কাজ করেন। গত মঙ্গলবার ওই যুবক যখন কারখানাতে ঢুকেছিলেন তখন তাঁর জামার বোতাম খোলা ছিল। বিষয়টি লক্ষ্য করে তাঁকে জামার বোতাম লাগানোর কথা বলে ওই কোম্পানির অন্য একজন শ্রমিক নরেন্দ্র রাজপুত। তাঁর কথা শুনে জামার বোতাম লাগানোর পরেও ভারতকে ছাড়েনি নগেন্দ্র। তাঁর নাম ও ঠিকানা জিজ্ঞাসা করে।
[আরও পড়ুন: আলোচনায় অধরা সমাধানসূত্র, ৮ ডিসেম্বর ভারত বনধের ডাক কৃষক সংগঠনগুলির]
এর উত্তরে নিজের নাম বলার পাশাপাশি তাঁর বাড়ি যে গুজরাটের গির সোমনাথ জেলায় তাও উল্লেখ করেন ভারত। নগেন্দ্র ফের ভারত ক্ষত্রিয় না দরবার, কোন সম্প্রদায়ের তা জানতে চায়। ওই যুবক নিজেকে তফসিলি জাতের বলে উল্লেখ করেন। এতেই রেগে ওঠে নগেন্দ্র। নিচু জাতের লোক হয়েও কেন ভারত রাজপুতদের পদবি ব্যবহার করছে তা নিয়ে ভর্ৎসনা করে। ভারত জানায়, রাজপুতরা তাঁর দাদার মতো। তাই তাদের পদবি ব্যবহার করেছে। এই কথা শুনে নগেন্দ্র কাজের শেষে কারখানার বাইরে দেখা করার নির্দেশ দেয় ভারতকে।
কাজের শেষে ভারত কারখানা থেকে বেরোতেই আরও চার জন সঙ্গীকে সঙ্গে নিয়ে তাঁর উপর চড়াও হয় নগেন্দ্র। রাস্তার উপর ফেলে বেধড়ক মারধর করে। দলিত সম্প্রদায়ের হয়ে সে কী করে রাজপুতদের পদবি ব্যবহার করার সাহস দেখাল তা জানতে চায়। পরে কোনও রকম তাদের হাত থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে স্থানীয় সানন্দ থানায় পৌঁছে যান ভারত। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে পাঁচ অভিযুক্তের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।