দুলাল দে: সেক্রেটারি জেনারেল সাজি প্রভাকরণকে বরখাস্ত করেছে ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন। বুধবার সকালে ‘সংবাদ প্রতিদিন’-এ এই খবর প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আলোড়ন পড়ে যায় ভারতীয় ফুটবলে। ফেডারেশনের তরফে বরখাস্তর চিঠি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফেডারেশনকে পালটা যে চিঠি সাজি প্রভাকরণ মেল করেন, তাতে আলোড়নের মাত্রা আরও গতি পায়। সাজিকে বরখাস্ত করার যে চিঠি ফেডারেশনের তরফে পাঠানো হয়েছে, তাতে সভাপতি কল্যাণ চৌবের সঙ্গে সই করেছেন ফেডারেশনের সহ-সভাপতি এবং কোষাধ্যক্ষও। আর এখানেই আপত্তি জানিয়েছেন ফেডারেশনের বিদায়ী সচিব। তিনি জানিয়েছেন, সচিব পদে তাঁকে নিয়োগ করেছিল ফেডারেশনের কার্যকরী কমিটি। কিন্তু কার্যকরী কমিটির সদস্যদের মতামত ছাড়া কীভাবে তিন পদাধীকারী তাঁকে বরখাস্ত করতে পারেন? এই কারণেই তিনি চিঠি পাঠিয়েছেন কার্যকরী কমিটির কাছে।
সাজিকে বরখাস্তর পাঠানো চিঠি নিয়ে অবশ্য কোনও অন্যায় কিছু হয়েছে বলে মনে করছেন না ফেডারেশনের (AIFF) পদাধীকারীরা। তাঁদের বক্তব্য, সচিবকে রিক্রুট করার মতো বরখাস্ত করার অধিকারও সভাপতির রয়েছে। তবে সিদ্ধান্তটি কার্যকরী কমিটিতে পাশ করিয়ে নিতে হবে। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য, ফেডারেশনের কার্যকরী কমিটির মিটিং রয়েছে বৃহস্পতিবার সকালে। আর সেখানে যে সাজিকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত পাশ হয়ে যাবে বলাই বাহুল্য। কারণ, সচিবকে সরানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কার্যকরী কমিটির মোটামুটি ভাবে সব সদস্যর সঙ্গেই কথা বলে নিয়েছিলেন সভাপতি কল্যাণ চৌবে (Kalyan Chaubey)। কিন্তু সাজি চিঠিতে লিখেছেন, বরখাস্ত করার পিছনে গভীর ষড়যন্ত্র দেখতে
পাচ্ছেন তিনি।
[আরও পড়ুন: ‘দীপাবলিতে পণবন্দিদের জন্য একটি প্রদীপ জ্বালান’, ভারতবাসীকে অনুরোধ ইজরায়েলের রাষ্ট্রদূতের]
বরখাস্ত হওয়া সচিব সাজি প্রভাকরণ (Shaji Prabhakaran) তাঁকে সরানোর পিছনে যেখানে গভীর ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত পাচ্ছেন, সেখানে আবার ফেডারেশনের পক্ষ থেকে সরকারি বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ‘বিশ্বাসভঙ্গতা’র জন্যই বরখাস্ত করা হয়েছে সাজি প্রভাকরণকে। কিন্তু ফেডারেশনের সচিব পদে থেকে সাজি প্রভাকরণ ঠিক কী বিশ্বাসভঙ্গ করেছেন, সেটাই পরিষ্কার করে বলা হয়নি। তবে ফেডারেশনের অন্দরে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, বিভিন্ন ইস্যুকে কেন্দ্র করে না কি, কল্যাণ চৌবের সঙ্গে বিস্তর মতপার্থক্য তৈরি হয়ে গিয়েছিল সাজির। যে কারণে, মাত্র ১৪ মাসেই সভাপতি আর সচিবের হানিমুন পর্ব শেষ হয়ে গেল। কিন্তু বিশ্বাসভঙ্গ বলতে ঠিক কী বোঝানো হয়েছে? ফেডারেশনের এক কর্তা বললেন, “সাজি এমন কিছু সিদ্ধান্ত একা একা নিয়েছেন, যা সভাপতি হিসেবে কল্যাণ চৌবে জানতেই পারেননি। এমনকী সাজির নেওয়া সেই সিদ্ধান্তগুলি কল্যাণের মতের সঙ্গেও মিলছে না। এটাকেই বিশ্বাসভঙ্গতা বোঝাতে চেয়েছেন সভাপতি।” তবে ফেডারেশনের তরফে বিশ্বাসভঙ্গতার বিবৃতি জেনে টুইট করে সাজি জানান, ফেডারেশনের বিবৃতিতে তিনি স্তম্ভিত। যতদিন ছিলেন, ফুটবলের ভালর জন্যই কাজ করেছেন।
[আরও পড়ুন: জেহাদের নামে মুসলমানদেরই হত্যা! কাবুল বিস্ফোরণে নিহত শিয়া সম্প্রদায়ের ৭]
সাজিকে বরখাস্ত করার সঙ্গে সঙ্গে ফেডারেশন থেকে এটাও জানানো হয়েছে, আপাতত সচিব পদে কাজ চলাবেন ডেপুটি জেনারেল সেক্রেটারি পদে থাকা সত্য নারায়ণ। তাঁকে যেহেতু সচিব পদে আসীন করা হচ্ছে, তাই বেতন বৃদ্ধিও করা হবে সত্য নারায়ণের। কিন্তু কোনওভাবেই তা সাজির বেতন সেই মাসিক ১২ লক্ষ টাকার মতো নয়। বৃহস্পতিবার ফেডারেশনের কার্যকরী কমিটির মিটিংয়ের আগে এদিন ছিল ফাইনান্স কমিটির মিটিং। সেখানে সদস্যরা মোটামুটিভাবে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন, ফেডারেশন সচিবের বেতন আর কিছুতেই ১২ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে না।
তবে প্রাক্তন ভারতীয় অধিনায়ক, কার্যকরী কমিটির সদস্য বাইচুং ভুটিয়া এই প্রসঙ্গে বলেন, “সাজিকে বলির পাঁঠা করা হচ্ছে। দেশে এশিয়ান কাপ আয়োজনের সিদ্ধান্ত থেকে যেকোনও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত কল্যাণ চৌবে এবং সাজি প্রভাকরণ একসঙ্গেই নিয়েছেন। হঠাৎ সাজিকে একা দোষী করা ঠিক হচ্ছে না।” বাইচুং বলেন, ফেডারেশনের নতুন সংবিধান তৈরি করে ফের নির্বাচন করা উচিত।