দুলাল দে: বিপাকে পড়ে অবশেষে ‘ইগো’ সরিয়ে বরখাস্ত জাতীয় কোচ ইগর স্টিমাচকে আইনি চিঠি পাঠিয়ে ফেডারেশন জানাল, ক্ষতিপূরণ বাবদ তিন মাসের বেতন দিতে রাজি তারা। ফেডারেশনের পক্ষ থেকে এই আইনি চিঠি পাওয়ার পর এখনও পর্যন্ত কোনও রকম উত্তর দেননি ইগর স্টিমাচ।
কোনও রকম ‘গোল্ডেন হ্যান্ডশেক’ এর পথে না গিয়ে স্টিমাচকে সরাসরি বরখাস্ত করে দেওয়ায় আর্থিক বিপাকে পড়ে গিয়েছে অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন (AIFF)। স্টিমাচের সঙ্গে ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের যা চুক্তি তাতে মাসিক বেতন প্রায় ২৬ লক্ষ টাকা। ফেডারেশনের সঙ্গে ইগরের চুক্তি ছিল আরও দু বছর। হঠাৎ করে বরখাস্ত করে দেওয়ায় ক্ষতিপূরণ বাবদ দু’বছরের বেতন প্রাক্তন জাতীয় কোচকে দিতে হবে ফেডারেশনকে। শুধু বেতন নয়, সঙ্গে ফাইন, ট্যাক্স সব মিলিয়ে ফেডারেশনের খরচ হতে পারে ছয় কোটি টাকা। এই টাকাটা যদি সত্যি দিতে হয়, প্রচন্ডভাবে আর্থিক দুর্দশার মধ্যে পড়ে যাবে ফেডারেশন। কারণ গতবছর বিভিন্ন পর্যায়ের ১৭ টুর্নামেন্ট করতে গিয়ে আর্থিক দৈন্যদশা প্রকট হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে যদি পাঁচ থেকে ছয় কোটি টাকা গুনাগার দিতে হয়, আর্থিকভাবে খুবই খারাপ জায়গায় চলে যাবে এআইএফএফ। যা নিয়ে হইচই শুরু হয়েছে ফেডারেশনের অন্দরেই।
[আরও পড়ুন: তিরাশির গাভাসকর হলেন না চব্বিশের কোহলি, বিরাট রাজার রূপকথা দেখল বিশ্ব]
কেন ইগর স্টিমাচের (Igor Stimac) সঙ্গে গোল্ডেন হ্যান্ডশেক না করে তড়িঘড়ি বরখাস্ত করতে হল, তা নিয়ে সবচেয়ে বেশি চর্চা ভারতীয় ফুটবল মহলে। খোঁজখবর নিয়ে যা জানা গেল, বিশ্বকাপ যোগ্যতা অর্জন পর্বে দ্বিতীয় রাউন্ড থেকেই ভারত বিদায় নেওয়ার পর ফেডারেশন সচিব সত্য নারায়ণ ফোন করেন ইগর স্টিমাচকে। ফেডারেশনকে সরকারিভাবে না জানালেও, সংবাদ মাধ্যমে ইগর বলে দিয়েছিলেন, তৃতীয় রাউন্ডে না গেলে পদত্যাগ করবেন। সত্যনারায়ণ সেটাই ফোন করে ইগরকে মনে করিয়ে দেন। আর তাতেই স্টিমাচ রেগে গিয়ে বলেন, তাঁকে কোনও ক্ষতিপূরণ দিতে হবে না। তিনি এখনই জাতীয় কোচের পদ থেকে পদত্যাগ করবেন। তবে তাঁর একটা শর্ত মানতে হবে। স্টিমাচের সঙ্গে সঙ্গেই ভারতীয় ফুটবল থেকে পদত্যাগ করতে হবে ফেডারেশন সভাপতি কল্যাণ চৌবেকে। সঙ্গে টেকনিক্যাল কমিটির চেয়ারম্যান আইএম বিজয়নকেও। মানে, কল্যাণ পদত্যাগ করলে তিনিও পদত্যাগও করবেন। কল্যাণ পদত্যাগ না করলে তিনিও পদত্যাগ করবেন না। সেটা জানার পর কল্যাণ সিদ্ধান্ত নেন, জরুরি ভিত্তিতে বরখাস্ত করা হবে স্টিমাচকে। শেষ পর্যন্ত তাই হয়। অথচ, কিছুদিন আগে ইগর স্টিমাচের ভবিষ্যৎ রূপরেখা ঠিক করেত ফেডারেশন সহ-সভাপতি হ্যারিসের নেতৃত্বে আলোচনায় বসেছিলেন সত্যনারায়ণ, মেনলা ও অনিল। সেখানে কর্তারা বলেন, স্টিমাচ জানিয়েছেন, একমাসের মধ্যেই তিনি পদত্যাগ করবেন। কোনও ক্ষতিপূরণ দিতে হবে না।
এর পরেই হ্যারিসের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের কমিটি সিদ্ধান্ত নেয়, ইগরকে ফেয়ারওয়েল দেওয়া হবে। এই কথা কল্যাণ চৌবেকে জানিয়েও দেন হ্যারিস। তার মধ্যেই স্টিমাচকে সরাসরি বরখাস্ত করে দেয় ফেডারেশন। এতেই চটে গিয়েছেন বরখাস্ত হওয়া জাতীয় কোচ। ঠিক করেছেন, তাঁকে চুক্তিমতো অর্থ না দেওয়ার জন্য ক্ষতিপূরণ জন্যে ফিফায় নালিশ জানাবেন। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে পেরেই তিন মাসের ক্ষতিপূরণ দিতে চেয়ে বরখাস্ত হওয়া কোচকে চিঠি দেওয়া হয়েছে ফেডারেশনের পক্ষ থেকে। অপেক্ষা করা হচ্ছে ইগরের উত্তরের। এরপরেও ইগর যদি ফিফার কাছে পুরো অর্থ চেয়ে অভিযোগ করেন তার জন্য আইনি প্রস্তুতি নিচ্ছে ফেডারেশন। কেন স্টিমাচকে বরখাস্ত করা হয়েছে তারও আইনি ব্যাখ্যা দেওয়া হবে। সব মিলিয়ে এখনও মারাত্মক জট। অনেকেই আবার মনে করছেন, এতবড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে একবার কার্যকরী সমিতির সভা ডেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল ফেডারেশনের, তাহলে হয়তো এতবড় সমস্যায় পড়তে হত না তাদের।