দুলাল দে: সব ঠিকঠাক চললে, জাতীয় দলের কোচ ইগর স্টিমাচের (Igor Stimac) সঙ্গে আরও এক বছরের চুক্তি করতে চলেছে অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন (AIFF)। যার সিলমোহর পড়তে চলেছে ১৯ জুলাই ফেডারেশনের টেকনিক্যাল কমিটির সভায়।
এমনিতে ভারতীয় দলের কোচ হিসেবে ইগর স্টিমাচের চাকরির মেয়াদকাল শেষ হয়ে গিয়েছে। বিশ্বকাপ কোয়ালিফাইং রাউন্ডের খেলার জন্যই চুক্তি মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও আগস্ট পর্যন্ত চুক্তি বাড়ানো হয়েছে ইগরের। কিন্তু তারপর? অক্টোবরে রয়েছে অনূর্ধ-২৩ এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ। আর ফ্রেব্রুয়ারিতে এশিয়ান কাপের কোয়ালিফাইং রাউন্ডের তৃতীয় পর্ব। তখন জাতীয় দলের হাল ধরবেন কে?
এমনিতেও আগস্টে চুক্তি শেষ হয়ে যাওয়ার পরে জাতীয় কোচের পদ শূন্য থেকে যাবে, এটাও ভাল দেখায় না। তাই আগস্টের পর জাতীয় দলের কোচ কে হবেন, তা এখনই ঠিক করতে হল ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনকে। ক্রোয়েশিয়ার জাতীয় দলকে একটা সময় বিশ্বকাপের মূলপর্বে যোগ্যতা অর্জন করিয়েছিলেন বলেই ইগরকে জাতীয় কোচ হিসেবে বেছে নিয়েছিল ফেডারেশন। কিন্তু ভারতের দায়িত্ব নেওয়ার পর যে, মারাত্মক ফল পাওয়া গিয়েছে, এরকমটাও নয়। তবে তার জন্য এই ক্রোয়েশিয়ান কোচকে খুব একটা দোষও দেওয়া যায় না।
[আরও পড়ুন: আধার কার্ডে গরমিল ময়দানের একঝাঁক ক্রিকেটারের, কঠোর শাস্তি দিতে পারে CAB]
বিশ্বকাপ কোয়ালিফাইং রাউন্ডের শুরুতেই কাতারের মাঠে গিয়ে কাতারের সঙ্গে ড্র করে হইচই ফেলে দিয়েছিল ভারতীয় দল। শুরুর সেই ম্যাচে আবার অধিনায়ক সুনীল ছেত্রীকেও পাওয়া যায়নি। কাতার ম্যাচের পরই চোট পেয়ে ডিফেন্ডার সন্দেশ ঝিঙ্ঘান মাঠের বাইরে। আর সেটাই সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে গেল ভারতীয় দলের। এরপরেই চলে এল করোনা (Corona Virus)। ম্যাচ তো দূর, অনুশীলন করারই উপায় নেই। ইগর ভেবেছিলেন, বিশ্বকাপ কোয়ালিফাইং রাউন্ডের ফিরতি ম্যাচগুলি শুরুর আগে কলকাতায় দীর্ঘমেয়াদী শিবির করে প্রস্তুতি নেবেন। কিন্তু করোনার কারণে সেই ইচ্ছেও পূরণ হল না। কলকাতায় প্রস্ততি শিবিরটাই করা গেল না। শেষে কোনওরকম প্রস্তুতি ছাড়াই ভারতীয় দল বিশ্বকাপের কোয়ালিফাইং রাউন্ডের ম্যাচ খেলতে কাতার গেল। সেখানেও ফের কাতারের সঙ্গে ড্র।
জাতীয় দলের বিভিন্ন ফুটবলারের সঙ্গে কথা বলে ফেডারেশন কর্তাদের মনে হয়েছে, ইগর স্টিমাচের কোচিং নিয়ে ফুটবলাররা বেশ খুশি। তাঁর কোচিং স্টাইল নিয়ে ফুটবলারদের দিক থেকে সেরকম কোনও অসুবিধা নেই। ফেডারেশন কর্তাদের সঙ্গে শ্যাম থাপার নেতৃত্বাধীন টেকনিক্যাল কমিটির সদস্যরাও মনে করছেন, ইগরের যোগ্যতা নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। তাছাড়া এমন কোনও কোচ নেই, যাঁকে দায়িত্ব দিলেই সঙ্গে সঙ্গে ভারতীয় দলে বিশ্বকাপের মূলপর্বে চলে যাবে। এটা একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়া। হঠাৎ করে কিছু পাওয়া সম্ভব নয়। তাই প্রতি বছর জাতীয় কোচ বদলও ঠিক নয়। তার উপর করোনা পরিস্থিতির জন্য গত দু’বছর ধরে ইগর স্টিমাচ সত্যিই সেভাবে সুনীলদের (Sunil Chhetri) নিয়ে কোনও কাজ করতে পারেননি। তার উপর ঘাড়ের কাছে আবার অনূর্ধ্ব-২৩ এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ রয়েছে। কিন্তু ইগরের থেকেও ফেডারেশন কর্তাদের পাশাপাশি টেকনিক্যাল কমিটির সদস্যরা জানতে চান, তাঁকে ফের জাতীয় দলের কোচের পদে সুযোগ দেওয়া হলে, আগামী দিনগুলোতে তাঁর পরিকল্পনা কী হবে?
[আরও পড়ুন: ICC’র টুর্নামেন্টে বারবার ব্যর্থতা, বিরাটের দলগঠন নিয়েই এবার সমালোচনায় মুখর মহম্মদ কাইফ]
ইগর স্টিমাচ ইতিমধ্যেই সিনিয়র দলের পাশাপাশি অনূর্ধ-২৩ দল নিয়ে তাঁর পরিকল্পনার কথা ফেডারেশনের শীর্ষ কর্তাদের জানিয়েছেন। এবার ঠিক হয়েছে, ১৯ জুলাই শ্যাম থাপার নেতৃত্বাধীন টেকনিক্যাল কমিটির সামনে তাঁকে লিখিতভাবে পরিকল্পনার কথা জানাতে হবে। সেখানেই ঠিক হবে, ইগরের ভবিষ্যৎ। তবে ইগর নিয়ে শ্যাম থাপাদের মনোভাব খুবই ইতিবাচক। তাই ফের এক বছরের জন্য যে ইগরকেই আবার কোচ হিসেবে ফেডারেশন বেছে নিচ্ছে, এখনই বলে দেওয়া যায়। এক বছর এই কারণেই, বছর শেষ হওয়ার পর পারফরম্যান্স দেখে মেয়াদ বাড়ানো হবে। অক্টোবরে অনূর্ধ-২৩ এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের পর ফেব্রুয়ারিতে সিনিয়র দলের এশিয়ান কাপের কোয়ালিফাইং রাউন্ড। যা ভারতীয় দলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূ্র্ণ।