সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: করোনার (Corona Virus) প্রকোপ ঠেকাতে মিশ্র টিকার উপর জোর দিচ্ছে একাধিক দেশ। এর ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ছে বা অনেক বেশি অ্যান্টিবডি তৈরি হচ্ছে বলে কিছু তথ্য উঠে এসেছে। ভারতেও সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিলেন না অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস-এর (AIIMS) প্রধান রণদীপ গুলেরিয়া। তাঁর ইঙ্গিত, সেই সম্ভাবনা রয়েছেই। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এ নিয়ে আরও পরীক্ষানিরীক্ষা ও তথ্য প্রয়োজন।
করোনার (Corona Virus) ডেল্টা এবং ডেল্টা প্লাস প্রজাতি নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। ভারতের দ্বিতীয় ঢেউয়ের পিছনে সবচেয়ে বড় কারণ ছিল এই প্রজাতি। যা এবার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। এই প্রজাতিকে ‘সবচেয়ে দ্রুত সংক্রমণ ছড়ানো প্রজাতি’ বলে চিহ্নিত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)। যে সমস্ত দেশে টিকাকরণ কম, সেখানে এই প্রজাতি দ্রুত ছড়াচ্ছে। অন্তত ৮৫টি দেশে ইতিমধ্যে এই প্রজাতির সংক্রমণ দেখা গিয়েছে বলে জানিয়েছেন WHO প্রধান টেড্রোস আধানম ঘেব্রিয়েসাস। টিকাকরণের (Corona Vaccination) ফলে সংক্রমণ কমলেও ডেল্টা ও ডেল্টা প্রজাতির বিস্তারে করোনার তৃতীয় ঢেউ ঘিরে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন চিকিৎসকরা। অস্ট্রেলিয়া, ইজরায়েলের মতো দেশ সংক্রমণ ঠেকাতে নতুন করে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। সতর্ক বিভিন্ন দেশের সরকার। ইতিমধ্যে ব্রিটেন, আমেরিকা, রাশিয়া, ফ্রান্স, পর্তুগাল, ফিজি, আফ্রিকা, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশে ডেল্টা প্রজাতির অস্তিত্ব দেখা গিয়েছে। তার জেরেই মিশ্র টিকা ব্যবহারের পক্ষে সওয়াল করছেন অনেকে।
[আরও পড়ুন: Jammu Explosion: ভারতীয় সেনা ঘাঁটিতে ‘হামলা’র জন্য ড্রোনকেই কেন হাতিয়ার করল জঙ্গিরা?]
শনিবার একটি বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে গুলেরিয়া বলেছেন, “এর আগেও এমন উপায়ের কথা উঠে এসেছে। প্রাথমিকভাবে একটি টিকা, বুস্টার ডোজ হিসাবে অন্য টিকার ব্যবহার। কিছু কিছু তথ্যে দেখা যাচ্ছে, এর ফলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনাও সামান্য বেশি। কিন্তু মিশ্র টিকায় বেশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও অ্যান্টিবডি তৈরির ইঙ্গিতই বেশি। তবে আরও তথ্য প্রয়োজন। ভবিষ্যতে আরও অনেক টিকা বাজারে আসবে। ফাইজার, মডার্না, স্পুটনিক ভি, জাইডাস ক্যাডিলা। কোন দু’টি মিশ্রণ কার্যকরী হতে পারে, তা নিয়ে গবেষণা হওয়া প্রয়োজন। এখনও আমাদের কাছে এ নিয়ে কোনও তথ্য নেই। তবে হ্যাঁ, মিশ্র টিকা কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা জোরাল।” সরকার এ বিষয়ে কাজ করছে। পরীক্ষার ফল কয়েক মাসের মধ্যে সামনে আসবে বলেও জানিয়েছেন গুলেরিয়া।
গত মাসে এই সংক্রান্ত একটি ব্রিটিশ সমীক্ষার ফল ল্যানসেট পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের প্রথমে অ্যাস্ট্রাজেনেকার (কোভিশিল্ড) টিকা দেওয়া হয়। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে দেওয়া হয় ফাইজারের টিকা। তাতে আরও স্বল্পস্থায়ী তবে মৃদু উপসর্গের কথা জানা গিয়েছে। কিন্তু এর কার্যকারিতা সম্পর্কে তথ্য এখনও সামনে আসেনি। অন্যদিকে, এ বিষয়ে একটি স্প্যানিশ সমীক্ষার কথা জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স। তাতে এই মিশ্র টিকা নিরাপদ ও কার্যকর বলেই দাবি করা হয়েছে। ডেল্টা এবং ডেল্টা প্লাস প্রজাতির বিরুদ্ধে বর্তমান টিকাগুলি কতটা কার্যকর, তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন গুলেরিয়াও। তবে তা সত্ত্বেও টিকা নেওয়ার গুরুত্বের উপর জোর দিয়েছেন তিনি।
[আরও পড়ুন: কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা না ফেরালে ৩৭১-এর সংশোধন হোক, পরামর্শ প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রীর]
গবেষণাতেই দেখা গিয়েছে, একটি টিকা নিলে করোনার বিরুদ্ধে ৩৩ শতাংশ নিরাপত্তা মেলে। দু’টি টিকার ক্ষেত্রে ৯০ শতাংশ নিরাপত্তা পাওয়া যায়। গুলেরিয়ার কথায়, “এটা সত্যিই উদ্বেগের যে, ডেল্টা প্রজাতির বিরুদ্ধে প্রাথমিক টিকাকরণ হয়ত যথেষ্ট নয়। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যত দ্রুত সম্ভব বুস্টার ডোজ দেওয়া যায়, ততই ভাল। হয়ত এর পরেও কেউ আক্রান্ত হতে পারেন। কিন্তু প্রকোপ বা তীব্রতা অনেকটাই কম হবে।” তবে ডেল্টা প্লাস নয়, আপাতত ডেল্টা প্রজাতিই বেশি উদ্বেগের বলে মন্তব্য করেন গুলেরিয়া। তাঁর আরও দাবি, দেশে করোনা সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ এলেও তা দ্বিতীয় ঢেউয়ের মতো ভয়ংকর হবে না। তবে করোনাকে হালকাভাবে নিলে ভুল হবে বলেও তিনি সতর্ক করেছেন।