সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: পিরিয়ড (Periods) একটি স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। কিন্তু এর অনিয়ম অনেক সময়ই গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার ইঙ্গিত দেয়। পিরিয়ড স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক দিন ধরে চললেও মহিলারা এটিকে গুরুত্ব দেন না, যা মারাত্মক ভুল। চিকিৎসকদের মতে, দীর্ঘ সময় ধরে পিরিয়ড চলা বা অতিরিক্ত রক্তপাত (মেনোরেজিয়া) শরীরের আয়রনের ঘাটতিসহ (অ্যানিমিয়া) একাধিক জটিলতা তৈরি করতে পারে।
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, শরীরে আয়রনের মাত্রা কমে গেলে রক্তের অক্সিজেন পরিবহনের ক্ষমতা কমে যায়। এর ফলে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়। জরায়ুর পেশির কার্যকারিতা দুর্বল হয়ে পড়ে। শরীরের আয়রনের ঘাটতি হলে পিরিয়ড আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে। এটি একটি বিপজ্জনক চক্র।
স্বাভাবিক পিরিয়ড সাধারণত ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হয়। যদি রক্তপাত আট দিন বা তার বেশি সময় ধরে চলে, তবে অবশ্যই তা খতিয়ে দেখা দরকার। দীর্ঘ পিরিয়ডের সম্ভাব্য বহু কারণ রয়েছে।
১) মানসিক চাপ: তীব্র বা দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে পিরিয়ডের সময় বাড়িয়ে দিতে পারে।
২) হরমোনজনিত ওষুধ: জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল, ইনজেকশন বা আইইউডি'র কারণে চক্রে পরিবর্তন আসতে পারে। বিশেষত কপার আইইউডি ব্যবহারে পিরিয়ড দীর্ঘায়িত হতে পারে।
৩) গর্ভধারণ সম্পর্কিত সমস্যা: গর্ভাবস্থার প্রাথমিক পর্যায়ে স্পটিং, গর্ভপাত (Miscarriage) বা একটোপিক প্রেগন্যান্সির কারণে দীর্ঘ রক্তপাত হতে পারে।
৪) জরায়ুর সমস্যা: জরায়ুর ফাইব্রয়েড বা পলিপ।
৫) পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (PCOS), এন্ডোমেট্রিওসিস, থাইরয়েড সমস্যা এবং কিছু সংক্রমণের জন্যেও এমনটা ঘটতে পারে।
৬) পেরি-মেনোপজ: মেনোপজের কাছাকাছি সময়ে হরমোনের পরিবর্তনের কারণেও পিরিয়ড অনিয়মিত ও দীর্ঘ হতে পারে।
করণীয় কী?
দীর্ঘস্থায়ী রক্তক্ষরণের ফলে শরীরের ফেরিটিন বা আয়রন স্টোর কমে যায়। এর ফলে অতিরিক্ত ক্লান্তি, দুর্বলতা, মাথা ঘোরা, চুল পড়া এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার মতো লক্ষণ দেখা দেয়। এই সমস্যা মোকাবিলায় প্রথম পদক্ষেপ হল চক্রের প্রতিটি পরিবর্তন ভালোভাবে ট্র্যাক করা এবং অস্বাভাবিক রক্তপাত দেখা গেলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া। চিকিৎসক সিরাম ফেরিটিন ও হিমোগ্লোবিন পরীক্ষার মাধ্যমে আয়রনের ঘাটতি নির্ণয় করতে পারেন। চিকিৎসার মধ্যে সাধারণত আয়রন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ, খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা এবং জরায়ুর ফাইব্রয়েড বা থাইরয়েড সমস্যার মতো মূল কারণের চিকিৎসা শুরু করা জরুরি।
নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি দেখা গেলে তৎক্ষণাৎ নিকটস্থ হাসপাতালে যান।
১) অতিরিক্ত রক্তপাত: যদি এক ঘণ্টার মধ্যে স্যানিটারি প্যাড বা ট্যাম্পন সম্পূর্ণ ভিজে যায় এবং তা কয়েক ঘণ্টা ধরে চলতে থাকে।
২) বড় জমাট বাঁধা রক্ত: গল্ফ বলের চেয়ে বড় আকারের রক্তের ডেলা বা জমাট রক্ত (Clots) দেখা গেলে।
৩) গর্ভাবস্থায় বা সন্তান জন্ম দেওয়ার তিন মাসের মধ্যে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে।
