কৃষ্ণকুমার দাস: শিয়রে বাংলার বিধানসভা নির্বাচন। তার আগেই রাজ্যে নতুন রাজনৈতিক সমীকরণের ইঙ্গিত। রবিবার দু’দিনের রাজ্য সফরে এসেছেন AIMIM প্রধান আসাউদ্দিন ওয়েইসি। এদিনই হুগলির ফুরফুরা শরিফে হাজির হয়ে পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকির সঙ্গে একান্ত দীর্ঘ বৈঠক সেরেছেন। সূত্রের খবর, AIMIM-এর হয়ে বিধানসভা নির্বাচনে লড়তে পারেন আব্বাস সিদ্দিকি ও তাঁর অনুগামীরা।
এদিনের ওয়েইসি ও আব্বাস সিদ্দিকির বৈঠক রাজ্য রাজনীতিতে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। একদিকে AIMIM প্রধান জানিয়েছিলেন, সংখ্যালঘুদের স্বার্থে এবার বাংলার বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী দেবেন তিনি। অথচ রাজ্যে তাঁর সংগঠন ভেঙে গিয়েছে। কিছুদিন আগেই AIMIM-এর একাধিক পদাধিকারী সদলবলে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। ফলে বাংলায় বিধানসভা নির্বাচনের আগে কিছুটা হলেও দুর্বল হয়েছে ওয়েইসির দলীয় সংগঠন। তাই এখন তাঁর পাখির চোখ, পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকির সংগঠন।
[আরও পড়ুন : বিজেপিতে যোগ দিলেন বেচারাম মান্নার ‘জেঠতুতো ভাই’, আত্মীয় মানতে নারাজ তৃণমূল বিধায়ক]
এদিকে আবার রীতিমতো সাংবাদিক বৈঠক করে পৃথক দল গঠনের কথা জানিয়েছিলেন আব্বাস সিদ্দিকি। দুই ২৪ পরগণা, হাওড়া, হুগলির মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় প্রার্থী দেবেন বলেও ঘোষণা করেছিলেন তিনি। সূত্রের খবর, পৃথক দল গঠন না করে মিমের হয়েই রাজনীতির ময়দানে নামতে পারেন পীরজাদা ও তাঁর অনুগামীরা। তবে এ নিয়ে AIMIM প্রধানের সামনে তিনি একাধিক শর্ত রেখেছেন বলে সিদ্দিকির ঘনিষ্ঠমহল সূত্রে খবর। যা নিয়ে আজ দুপুর এমনকী, আগামী কালও দুজনের মধ্যে দফায়-দফায় বৈঠক হতে পারে।
উল্লেখ্য, ফুরফুরা শরীফের পীরজাদার বাঙালি মুসলিম ও সংখ্যালঘু যুব সম্প্রদায়ের উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব রয়েছে। মগরাহাট. ক্যানিং, আমতলা, ডায়মন্ডহারবার-সহ হাওড়া-হুগলির মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় বিভিন্ন সময় ধর্মীয় সভা, জলসা করেন আব্বাস সিদ্দিকি। গত কয়েকমাস যাবৎ সেই সমস্ত অনুষ্ঠান থেকে রাজনৈতিক বার্তা দিয়েছেন তিনি। ফলে বিধানসভা নির্বাচনের আগে AIMIM প্রধানের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ ঘিরে জলঘোলা শুরু হল।
এদিকে ফুরফুরা শরীফের পীরজাদার সঙ্গে দেখা করেছিল বাম-কংগ্রেস জোটের নেতারা। তাঁদের আশা ছিল, আব্বাসের সমর্থন নিয়ে কিছু আসনে সহজ জয় পাওয়া। কিন্তু এদিনের বৈঠকের পর তাঁদের সেই আশায় কার্যত জল পড়ল। উলটে AIMIM প্রধান ও আব্বাস সিদ্দিকির জোট হলে বাম-কংগ্রেসের সম্মিলিত লড়াইটা আরও কঠিন হবে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। চাপ বাড়বে তৃণমূলের উপরও। তবে এই চাপের কথা স্বীকার করেনি কোনও পক্ষই।
[আরও পড়ুন : ‘ইট মারলে পাটকেল খেতে হবে’, কৃষি আইনের বিরোধিতায় জাতীয় সড়ক অবরোধের ডাক সিদ্দিকুল্লাহর]
তবে ওয়েইসি-সিদ্দিকির জোটের পথে কাঁটা AIMIM প্রধানের বিরুদ্ধে থাকা বিজেপি ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ। বিহার নির্বাচনের পর থেকেই আসাউদ্দিন ওয়েইসির বিরুদ্ধে ‘বিজেপির বি টিম’ হিসেবে কাজ করার অভিযোগ উঠেছে। রাজনৈতিক মহলের একাংশের অভিযোগ, বিজেপিকে সুবিধা করে দিতেই বিভিন্ন রাজ্যের ভোটে প্রার্থী দিচ্ছে ওয়েইসির দল। যদিও এই অভিযোগ সম্পূর্ণ অসত্য ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন ওয়েইসি ও বিজেপি নেতৃত্ব।