স্টাফ রিপোর্টার: ফেসবুকের পোস্টটা দেখে চক্ষু চড়কগাছ হয়ে গিয়েছিল তদন্তকারীদের–“মার্সিডিজ থেকে ল্যাম্বারগিনিতে আপডেট হচ্ছি৷ জীবন মানেই ক্ষমতা, আভিজাত্য এবং আধিপত্য!”
উদয়ন ভন রিচথোফেন মেহরা নামের ফেসবুক প্রোফাইল থেকে এই স্ট্যাটাস আপডেট দিয়েছে সিরিয়াল কিলার উদয়ন দাস৷ সঙ্গে কমলা রঙের গাড়িতে বসে তার একটি ছবি৷ পিছনে শোরুমের দেওয়ালে স্পষ্ট ল্যাম্বারগিনির লোগো৷ নিচে ধোপদুরস্ত পোশাকে স্মিত হাসিতে দেখা যাচ্ছে উদয়নকে৷
(বাড়ির ভিতরেই ধর্ষণ করে খুন মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীকে)
তদন্তকারীদের ধারণা, ফেসবুক আপডেট দেওয়ার জন্য বিলাসবহুল হোটেলে, বারে সময় কাটাতো উদয়ন এবং আকাঙ্ক্ষা৷ সেজন্যই প্রচুর টাকার দরকার পড়ত তাদের৷ সে জন্যই আকাঙ্ক্ষাকে চাপ দিয়ে তার অ্যাকাউণ্ট থেকে টাকা তোলাত উদয়ন৷ তদন্তকারীরা আরও জানিয়েছে, শুধু একটা নয়, এমন অন্তত পাঁচ থেকে ছ’টা ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউণ্ট খুলে নিজের সম্পর্কে হাজারো ভুয়া তথ্যের সাম্রাজ্য খুলে বসেছিল সিরিয়াল কিলার উদয়ন দাস৷ জীবনে কখনও বিদেশে যায়নি বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে যে উদয়ন, সে-ই ফেসবুকে গোটা বিশ্ব ঘুরে বেড়িয়েছে৷ কখনও ‘স্ত্রী’ আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে প্যারিসে ছুটি কাটিয়েছে৷ কখনও আবার জার্মানির রাস্তায় চালিয়েছে মার্সিডিজ গাড়ি৷ কখনও স্রেফ ট্যাটু করাতে গিয়েছে মস্কোয়৷ কখনও আবার ‘দাদু’ স্টিভ ভন রিচথোফেন মেহরার সঙ্গে পার্টি করেছে ক্যালিফোর্নিয়ায়৷
(এবার কোম্পানির থেকে উপহার নিলেই দিতে হবে কর!)
আসলে বাবা বীরেন্দ্র মেহরা, দাদু স্টিভের নামে ওই ভুয়ো ফেসবুক অ্যাকাউণ্টগুলি চালাত নিজেই৷ এছাড়াও নিজের নামে ছিল আরও অনেকগুলি ভুয়ো অ্যাকাউণ্ট৷ কোথাও সে জন শেরিডন কোথাও আবার নিখিল অরোরা মুখার্জি৷ কখনও পুশকিন স্ট্যাসজিউসকা কখনও আবার রায়ানসালে৷ তবে, পুলিশ জেনেছে, উদয়ন ভন রিচথোফেন মেহরা নামের অ্যাকাউণ্টটিই বেশি ব্যবহার করত সে৷ কারণ ওই অ্যাকাউণ্টের মাধ্যমেই উদয়ন যোগাযোগ রেখেছিল বাঁকুড়ার আকাঙ্ক্ষা শর্মার সঙ্গে৷ ওই অ্যাকাউণ্টে উদয়ন নিজেকে কখনও রাষ্ট্রসংঘের কর্মী কখনও বা মার্কিন বিদেশ দফতরের কর্মী হিসাবে পরিচয় দিয়েছে৷ এমনকী নিউ ইয়র্কের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট করার কথাও জানিয়েছে ওই ফেসবুক অ্যাকাউণ্টে৷
এখানেই শেষ নয়, আকাঙ্ক্ষার নামেও একটি ভুয়া অ্যাকাউণ্ট চালাত উদয়ন৷ সেটির নাম ছিল আকাঙ্ক্ষা উদয়ন মেহরা৷ সেখান থেকেই আকাঙ্ক্ষার হয়ে নানারকম পোস্ট করত উদয়ন৷ এমনই একটি পোস্টে আকাঙ্ক্ষার অ্যাকাউণ্টে লেখা হয়েছে, “আমরা দু’জন টম আর জেরির মতো৷ আমরা সামনের দিকে এগিয়েই চলেছি৷ কারণ নিজের মর্জি মাফিক বাঁচার হিম্মত আছে আমাদের৷” পোস্টটি করা হয়েছে ২০১৬ সালের ১৭ ডিসেম্বর৷ অথচ পুলিশের হিসাবে আগস্টেই আকাঙ্ক্ষাকে খুন করেছিল উদয়ন৷
(লালকেল্লার অন্দরে বাক্সভর্তি গ্রেনেড, চাঞ্চল্য রাজধানীতে)
তদন্তকারীরা বলছেন, উদয়নের কুকীর্তির একটা বড় অস্ত্র ছিল এই ফেসবুক৷ ফেসবুকে রীতিমতো নিজের মর্জিমাফিক একটা পরিবার বানিয়ে নিয়েছিল সে৷ যেখানে কল্পিত দাদু আছে৷ বাবা জার্মানবাসী৷ তিনি আবার আর এক কল্পিত সংস্থা মেহরা কর্প-এর প্রতিষ্ঠাতা৷ তদন্তকারীদের মতে, ২০১১ সালে রায়পুরে বাবা-মাকে খুন করার আগে থাকতেই ফেসবুকে ভুয়া অ্যাকাউণ্ট চালাত উদয়ন৷ কারণ একটি পোস্টে সে লিখেছে, ২০০৭ সালে আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে তার বন্ধুত্ব হয়৷
The post ফেসবুকে ৬ নামে উদয়ন, খুন করেও চালু রাখে বাবার প্রোফাইল appeared first on Sangbad Pratidin.