আকাশ মিশ্র: অক্ষয় কুমারের (Akshay Kumar) ‘বেল বটম’ (Bell Bottom Movie) ছবি কেমন হয়েছে তা বলার আগে ঝটপট কয়েকটা বিষয় উল্লেখ না করলেই নয়। প্রথমত, ‘বেলবটম’ই প্রথম ছবি যার শুটিং করোনা পরিস্থিতি একটু ঠিক হতেই, নানা করোনাবিধি মেনে শুরু হয়েছিল। দ্বিতীয়ত, এই ছবিই সিনেমা হল খোলার পর প্রথম বলিউড রিলিজ। তাই ‘বেলবটম’ ছবির উপর বক্স অফিস সামলে নেওয়ার একটু বেশিই চাপ ছিল। তবে সেই চাপ পুরোটাই নিয়ে ফেললেন অক্ষয় কুমার!
বেশ কয়েক বছর ধরে বক্স অফিসকে নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে ফেলেছেন অক্ষয়। পূর্বের রেকর্ড দেখুন, অক্ষয়ের ছবি মানেই কোটি কোটি টাকার ব্যবসা। দর্শকদের উচ্ছ্বাস। সিনেমার সমালোচকরাও অক্ষয়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। তা ‘গোল্ড’ ছবি হোক কিংবা ‘প্যাডমান’। সবেতেই বক্স অফিস সামলেছেন একা অক্ষয়ই। ‘বেলবটম’ ছবিতেও ঘটল একই ঘটনা। স্ক্রিনজুড়ে শুধুই অক্ষয়। প্রায় প্রত্যেক দৃশ্যেই ত্রাতা হয়ে আবির্ভাব তাঁর। ক্যামেরা থেকে সহ-অভিনেতা সবই অক্ষয়ের ইশারায় কাজ করে গেলেন! বাদবাকি যা পড়ে থাকল সেটাই চিত্রনাট্য! মোদ্দা কথা হল, ‘বেলবটম’ ছবির চিত্রনাট্য, পরিচালনা একেবারে পাশে রেখে অক্ষয় নিজের অস্তিত্ব বুঝিয়ে দিলেন ষোলোয়ানা।
[আরও পড়ুন: Mukhosh Film Review: জটিল রহস্যের গল্পে দুই অনির্বাণ, পরিচালক বিরসার তুরুপের তাস কে?]
ছবির প্রেক্ষাপট মূলত ১৯৭৯ থেকে ১৯৮৪। Raw এজেন্টের চরিত্রে অক্ষয় কুমার। যার কোড নাম ‘বেল বটম’। বাস্তবে ঘটে যাওয়া ৮০-র দশকে ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের এক বিমানের হাইজ্যাক। অক্ষয় কুমারের নেতৃত্বে এক সফল Raw অপারেশন। ISI জঙ্গিকে কুপোকাত। বিমানযাত্রীদের উদ্ধার, বিনা কোনও রক্তপাতে। এই গল্পকেই বিনোদনের মোড়ক দিয়েছেন পরিচালক রঞ্জিত তিওয়ারি। আর এই মোড়কেই ছবি একেবারে টান টান। কোনও জটিল তত্ত্ব খাড়া না করে সরল গল্পের ছকে এগিয়েছে ‘বেলবটম’। যা কিনা দর্শকদের ধরে রাখতে সফল এক ফমুর্লা।
তবে এই ফমুর্লার কিছু দুর্বলতা রয়েছে। যা কিনা অল্প হলেও ‘বেল বটম’ ছবির আমেজকে নষ্ট করে। ছবির প্রথমভাগ একটু ধীরগতিতে এগোয়। চরিত্র বিন্যাসে একটু বেশি সময় অপচয় করেছেন পরিচালক রঞ্জিত। তবে ঠিক বিরতির আগেই ছবির চিত্রনাট্য গতি ফিরে পায়। আর তাই ‘বেল বটম’- এর দ্বিতীয়ভাগ থেকে চোখ সরানো যায় না। স্ক্রিনজুড়ে একের পর এক অ্যাকশন ঘটতে থাকে। যা কিনা দর্শককে একেবারে হাতের মুঠোয় করে নেওয়ার মতো।
অক্ষয় এই ছবির ত্রাতা হলেও, ‘বেল বটম’ ছবিতে আসল কারিগরি দেখিয়েছেন ছবির সম্পাদক চন্দন অরোরা। কারণ, এই ছবির এডিটিং যদি একটু ঢিলে হত, তাহলে গল্পের রাশ টেনে রাখা বেশ কঠিন হয়ে যেত। এই ছবি যতটুকু রোমাঞ্চ ধরে রাখতে পেরেছে তা এই সম্পাদনার কামালেই।
আদিল হাসান, হুমা কুরেশি চিত্রনাট্যের নিয়ম মেনে চলে শুধু অক্ষয়কে সাহায্য করে গিয়েছেন। এক্ষেত্রে তাঁদের স্ক্রিন টাইম খুবই অল্প। ইন্দিরা গান্ধী বেশে লারা দত্তের লুক নিয়ে শোরগোল পড়লেও, ছবিতে লারার অভিনয় খুব একটা ধারালো নয়। বরং বড্ড অভিব্যক্তিহীন। বাণী কাপুর শুধু আছেন সুন্দরী হয়েই। তাছাড়া বাণীর আর কিছু করার ছিল না।
‘বেল বটম’-এর শুরু থেকে শেষ ফ্রেম সবেতেই অক্ষয় বিরাজমান। তাই অন্য কেউ খুব একটা জায়গা পাননি। তার মধ্যে অল্প হলে নজর কাড়লেন জঙ্গি দলজিৎ সিংয়ের চরিত্রে অভিনেতা জইন খান দুরানি। এ ছবির গান তেমন মনে থাকার মতো নয়। শুধু হল থেকে বেরিয়ে বেল বটম প্যান্ট পরা অক্ষয়ই মগজে ঘুরপাক খাবে। শেষমেশ বলা যায়, করোনা আবহে সিনেমা হলে দর্শকদের ফিরিয়ে আনতে অক্ষয়ের বিনোদন ঠাসা এই বেলবটম সমর্থ হবে, তা বলে দেওয়াই যায়। ছবির মেজাজেই তা ধরা পড়ে।