অর্ণব আইচ: লুটেরাদের প্রথম টার্গেট সিসিটিভির ডিভিআর। সিসিটিভির সব ফুটেজ উধাও করে দিয়ে কলকাতা ও হাওড়ার অন্তত ন’টি স্কুলে ‘সিরিয়াল লুট’করেছে লুটেরাদের গ্যাং। এবার এই স্কুলে চুরির তালিকায় নতুন সংযোজন হল দক্ষিণ কলকাতার নেতাজিনগর এলাকার আরও একটি স্কুল। সম্প্রতি এন এস বোস রোডের উপর ওই বালিকা বিদ্যালয়েও হানা দেয় ওই গ্যাং। যদিও এই ন’টি স্কুলের মধ্যে ভাঙড় এলাকার তিনটি স্কুলে চুরির কিনারা করেন লালবাজারের গোয়েন্দারা। প্রথমে তাঁদের হাতে ধরা পড়ে এই গ্যাংয়ের দু’জন। তারা এখনও জেলবন্দি। এর পর মঙ্গলবার পর্ণশ্রী ও বেহালা থানার পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয় মহেশতলার দুই যুবক। পুলিশের দাবি, শেখ ইকবাল ও শেখ ইমরান নামে ওই দুই যুবকও একই গ্যাংয়ের সদস্য। তারাও কলকাতা ও হাওড়ার স্কুলে পরপর লুটপাটের সঙ্গে যুক্ত। পুলিশের ধারণা, এই গ্যাংয়ের বাকি তিন থেকে চারজন এখনও পলাতক। ধৃতদের জেরা করে পুলিশ তাদের সন্ধান পাওয়ার চেষ্টা করছে। পুলিশ লুঠের টাকা উদ্ধারের জন্যও তল্লাশি চালাচ্ছে।

পুলিশ জানিয়েছে, দক্ষিণ কলকাতার পর্ণশ্রী ও বেহালার দু’টি স্কুলে পরপর লুঠপাটের ঘটনা ঘটে। এরপরই নেতাজিনগর থানায়ও একই ধরনের একটি অভিযোগ দায়ের হয়। এ ছাড়াও সম্প্রতি হাওড়ার সাঁকরাইলে এক কিলোমিটারের মধ্যে পরপর তিনটি স্কুলে একই ‘মোডাস অপারেন্ডি’তে হয়েছে লুঠপাট। দক্ষিণ কলকাতার নেতাজি নগরের এনএস রোডের ওই বালিকা বিদ্যালয়টির পাঁচিলের পর অনেকটা জুড়েই রয়েছে বাগান ও মাঠ। তা পেরিয়েই দুষ্কৃতীরা স্কুলের অফিসঘরে হানা দেয়। অন্য স্কুলগুলির মতো এই স্কুলেরও আলমারির লকার ভেঙে তারা লুঠ করে প্রায় দশ হাজার টাকা। যদিও প্রত্যেকটি ঘটনায় পুলিশ দেখেছে যে, তারা লুঠপাট শুরুর আগে প্রথমেই বিকল করে স্কুলের সিসিটিভি। প্রায় প্রত্যেক ক্ষেত্রেই তারা চুরি করে নেয় স্কুলের ডিভিআর। ফলে সিসিটিভির ফুটেজ পাওয়া অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। যদিও স্কুলের বাইরের কয়েকটি ফুটেজে কয়েকজন দুষ্কৃতীর চেহারা ধরা পড়েছে।
প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশের ধারণা, এই সিরিয়াল অপরাধের পিছনে যে গ্যাংটি রয়েছে, সেটি দক্ষিণ ২৪ পরগনারই। এই গ্যাংয়ে প্রথম ছিল সাত থেকে আটজন দুষ্কৃতী। তাই তারা ভাঙড় এলাকাকেই প্রথম বেছে নেয়। ভাঙড়ের বোদরা অঞ্চলের দু’টি স্কুল ও বিজয়গঞ্জ বাজারের কাছে একটি স্কুলকে টার্গেট করে গ্যাংটি। একই পদ্ধতিতে এখানেও স্কুলের প্রধানশিক্ষক ও অফিস ঘরের আলমারির লকার ভেঙে তারা লুঠ করে নেয় টাকা। এর মধ্যেই লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগের আধিকারিকরা তদন্ত করে দুই দুষ্কৃতীকে গ্রেপ্তার করে। এর পরই তারা কলকাতার বেহালা ও নেতাজিনগর এবং অন্যদিকে হাওড়ার সাঁকরাইলে অপারেশন চালায়। পুলিশের মতে, তারা দিনের বেলায় সাইকেল ও বাইকে করে এলাকার স্কুলগুলিতে ঘুরে রেইকি করে। দেখে নেয়, ছুটির দিনে কোন স্কুলে নিরাপত্তারক্ষীও থাকেন না। ওই স্কুলগুলিকেই তারা টার্গেট করে। গ্যাংয়ের পলাতক সদস্যরাও অন্য স্কুলে হানা দিতে পারে। তাই তাদের সন্ধান চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।