বিপ্লবচন্দ্র দত্ত, কৃষ্ণনগর: ‘জয় শ্রীরাম’ (Jai Shree Ram) বলতে রাজি না হওয়ায় দশ বছরের এক নাবালকের গায়ে গরম জল ছিটিয়ে বেধড়ক মারধর করার অভিযোগ উঠল বিজেপিকর্মীর বিরুদ্ধে। মারধরে ওই নাবালক গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। সোমবার দুপুরে চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে নদিয়ার শান্তিপুর থানার ফুলিয়ায়। গুরুতর জখম অবস্থায় প্রথমে ওই নাবালককে ফুলিয়া স্বাস্থ্যকেন্দ্র, পরে শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়।
ঘটনা জানাজানি হতেই প্রতিবাদে সরব হন এলাকার মানুষ। অভিযুক্ত বিজেপিকর্মীর (BJP Worker) বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন এলাকার উত্তেজিত জনতা। অবরোধকারীদের সঙ্গে যোগ দেন তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরা। বেশ কিছুক্ষণ ধরে অবরোধ-বিক্ষোভ চলার পর পুলিশের আশ্বাসে পরিস্থিতি শান্ত হয়। ঘটনার পর থেকেই পলাতক অভিযুক্ত ওই চায়ের দোকানদার। যদিও তাঁর স্ত্রী ওই নাবালককে মারধরের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।
[আরও পড়ুন : বীরভূমে তৃণমূল নেতার বাড়িতে বোমা বাঁধার অভিযোগ, বিস্ফোরণে গুরুতর জখম ১]
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই নাবালকের বাড়ি শান্তিপুরের ফুলিয়াপাড়ায়। তাঁর মা নেই। বাবা ঠিকঠাক কাজকর্ম করেন না। ফলে এই বয়সেই বাড়ি-বাড়ি ঘুরে তাকে খাবার জোগাড় করতে হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, “সোমবার দুপুরে ফুলিয়াপাড়া এলাকায় একটি চায়ের দোকানে গিয়েছিল মহাদেব। সেই সময় চায়ের দোকানদার মহাদেব প্রামাণিক ওই নাবালককে ‘জয় শ্রীরাম’ বলতে বলেন। তা বলতে রাজি হয়নি ওই নাবালক। বরং সে বলে ফেলে, খেলা হবে। রেগে যান ওই চায়ের দোকানদার। রাগের বশে তিনি ওই নাবালকের গায়ে গরম জল ঢেলে দেন। নাবালক মহাদেব ইট ছুড়ে দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে ওই চায়ের দোকানদার তাকে দৌড়ে ধরে ফেলে বেধড়ক মারধর করেন। মারের চোটে অসুস্থ হয়ে পড়ে নাবালক মহাদেব। সে বমি করতে শুরু করে।”
অভিযুক্ত চায়ের দোকানদার মহাদেব প্রামাণিকের স্ত্রী মিঠু প্রামাণিক ওই এলাকার মহিলা মোর্চার মণ্ডল সভাপতি। বিগত পঞ্চায়েত নির্বাচনে তিনি বিজেপির প্রার্থী হয়েছিলেন। আর, মহাদেব নিজে বিজেপির একজন কার্যকর্তা বলে পরিচিত। তাঁর বাড়ি ফুলিয়ার কালীপুরে। মিঠু প্রামাণিকের বক্তব্য, “ওই ছেলেটি চায়ের দোকানে গিয়ে আমার স্বামীকে খেলা হবে বলতে বলেছিল। আমার স্বামী রাগের মাথায় তার গায়ে জল ঢেলে দেন। এরপর ওই ছেলেটি দোকানের দিকে ইট ছুড়তে থাকে। পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। আমার স্বামী তাকে তাড়া করে ধরে একটি চড় মেরেছেন। যদিও এরপর এলাকার কয়েকজন আমার স্বামীকে বেধড়ক মারধর করেছে। দোকান ফেলে তিনি বাড়ি চলে এসেছিলেন। পরে না বলে কোথায় চলে গিয়েছেন।” যদিও নাবালককে মারধর করাটা অন্যায় হয়েছে বলে স্বীকার করে নিয়েছেন মিঠু প্রামাণিক। নাবালককে মারধরের প্রতিবাদে সরব হয়েছেন এলাকার মানুষ। তাঁরা অভিযুক্ত মহাদেব প্রামাণিককে গ্রেপ্তারের দাবি তুলেছেন।