অর্ণব আইচ: একই সঙ্গে একই যুবক কেন্দ্র ও রাজ্যের গোয়েন্দা আধিকারিক! এমনই লেখা পরিচয়পত্রতে। যা দেখে চক্ষু চড়কগাছ কলকাতা পুলিশ ও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সামনে ভুয়ো গোয়েন্দা অফিসারের আনাগোনা ঘিরে রহস্য। পুলিশের হাতে ধরা পড়ার আগেই পালিয়ে যায় ওই যুবক। যদিও কলকাতার গোয়েন্দাদের কাছে এসেছে ওই ব্যক্তির ভুয়ো পরিচয়পত্রের ছবি। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় তার গতিবিধি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এদিকে, বিশ্বকাপ ম্যাচের কারণে কলকাতায় এসেছেন বহু পাকিস্তানি দর্শক। ইডেনে খেলা দেখতে এসেছেন বাংলাদেশের বাসিন্দারাও। তার উপর কেরলে বিস্ফোরণের পর সারা শহরজুড়ে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে লালবাজার। এর মধ্যে মধ্য কলকাতার অফিসপাড়ায় গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে ক্রমাগত ওই ভুয়ো গোয়েন্দা অফিসারের গতিবিধি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মঙ্গলবার এই তথ্য জানতে পারেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। তাঁদের পক্ষ থেকেও ওই যুবকের ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।
[আরও পড়ুন: লক্ষ্মীপুজোর পর দেবীদুর্গার বোধন! অকাল পুজোয় মাতল উত্তর দিনাজপুরের এই গ্রাম]
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই পরিচয়পত্র অনুযায়ী, যুবকের নাম মহম্মদ ফারুক মালি। যদিও পরিচয়পত্রে যে ছবিটি রয়েছে, সেটি ওই নামের ব্যক্তির কি না, তা নিয়েও ধন্দে গোয়েন্দা পুলিশ। সোমবার রিজার্ভ ব্যাঙ্কে দু’হাজার টাকার নোট পালটানোর জন্য যান ওই যুবক। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কর্মী ও নিরাপত্তারক্ষীদের কাছ থেকে গোয়েন্দা পুলিশ জেনেছে, ওই যুবক গত কয়েকদিন ধরেই বেশ কিছু দু’হাজার টাকার নোট পালটাচ্ছিলেন। সোমবারও বেশ কিছু দু’হাজার টাকার নোট পালটানোর সময় গোয়েন্দাদের সন্দেহ হয়। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁকে প্রশ্ন করতে থাকেন। তখনই ওই যুবক দাবি করেন, তিনি গোয়েন্দা অফিসার। তার কাছে পরিচয়পত্র দেখতে চাওয়া হলে সে পরিচয়পত্রও দেখায়। আর তাতেই সন্দেহ হয় নিরাপত্তারক্ষীদের। তাঁরা সঙ্গে সঙ্গে সেই পরিচয়পত্রটির ছবি তুলে নেন। দেখা যায়, ওই পরিচয়পত্রে লেখা আছে, সে ‘ইন্টেলিজ্যান্স ব্রাঞ্চ’-এর কর্মী। তাতে লর্ড সিনহা রোডের রাজ্য গোয়েন্দা দপ্তরের ঠিকানাও রয়েছে। সঙ্গে রয়েছে একাধিক ফোন ও ফ্যাক্স নম্বর। প্রথমেই নিরাপত্তারক্ষীদের খটকা লাগে ইংরেজিতে লেখা ‘ইন্টেলিজ্যান্স’ শব্দটির বানান দেখে। কোনও সরকারি পরিচয়পত্রে এই বানান ভুল থাকতে পারে না।
আবার ওই পরিচয়পত্রেই বড় করে লেখা আছে, ‘ইন্টেলিজ্যান্স ব্যুরো’। এই দপ্তরটি কেন্দ্রীয় সরকারের। তাই একই সঙ্গে একই পরিচয়পত্রে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের গোয়েন্দাদের নাম দেখে নিরাপত্তারক্ষীরা নিশ্চিত হন যে, ওই পরিচয়পত্রটি ভুয়ো। এছাড়াও ওই পরিচয়পত্রে ব্যক্তিটির যে পদের কথা লেখা রয়েছে, তা নিয়েও গোয়েন্দা পুলিশ রীতিমতো ধন্দে। ওই যুবককে আটকে রেখে জেরা করতে করতেই হেয়ার স্ট্রিট থানার পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। খবর যায় গোয়েন্দাদের কাছেও। কিন্তু পুলিশ তাকে ধরার আগেই কৌশলে পালিয়ে যায় সে। যদিও ওই পরিচয়পত্রে ‘বারুইপুর’ কথাটি উল্লেখ করা আছে। ফলে গোয়েন্দাদের সন্দেহ, তার বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুরে হতে পারে। পরিচয়পত্রে নাম ও ছবিও রয়েছে। এই সূত্রগুলির মাধ্যমে ওই যুবককে শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দারা।