বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত: “যুদ্ধক্ষেত্রে কখনই সেনাপতিকে ছেড়ে চলে যাব না।” এই বিশ্বাস থেকেই প্রয়াত প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ভারতরত্ন প্রণব মুখোপাধ্যায় কোনওদিন ইন্দিরা গান্ধীকে (Indira Gandhi) ছেড়ে যাননি। বরাবর দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেই ছিলেন। প্রয়াত বন্ধুর স্মৃতিচারনায় এমনটাই জানালেন প্রণববাবুর দীর্ঘদিনের বন্ধু তথা শিক্ষাবিদ অমল মুখোপাধ্যায়। তাঁর মতে, ইন্দিরার নজরে পরার পর থেকেই প্রণববাবু কংগ্রেস নেত্রীর কাছে পুত্রসম হয়ে গিয়েছিলেন।
[আরও পড়ুন: লড়াইয়ে হার, প্রয়াত প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়, শোকের ছায়া রাজনৈতিক মহলে]
প্রয়াত বন্ধুর সম্পর্কে এরকমই একের পর এক অজানা তথ্য উঠে এসেছে অমলবাবুর স্মৃতিচারণায়। তিনি জানান, ষাটের দশকের শেষ দিকে বাংলা কংগ্রেসের পক্ষ রাজ্যসভায় মনোনীত হন প্রণব। সেইসময় দু’টি খুব চিত্তাকর্ষক ঘটনা ঘটে। প্রথমত, প্রণব মুখোপাধ্যায় (Pranab Mukherjee) ছোটবেলা থেকেই পড়াশুনোয় খুব মনোযোগী ছিলেন। প্রতিদিন সংসদের লাইব্রেরিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পড়াশুনো করতেন। ইন্দিরা তখন প্রধানমন্ত্রী। আসা যাওয়ার পথে রোজই প্রণবকে চোখে পড়ত তাঁর। একদিন খোঁজ নেন ছেলেটি সম্পর্কে। জানতে পারেন, বাংলা কংগ্রেসের টিকিটে পশ্চিমবঙ্গ (West Bengal) থেকে রাজ্যসভায় নির্বাচিত হয়েছে। বস্তুত তখন থেকেই ইন্দিরার চোখে পড়ে যান তিনি। দ্বিতীয়ত, একদিন রাজ্যসভায় কোরাম নেই। অথচ সেইদিনই সেখানে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের প্রথম বক্তৃতা দেওয়ার কথা। যেকথা জানতে পেরে মন্ত্রীসভার সদস্যদের নিয়ে রাজ্যসভায় হাজির হন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী। সেদিন প্রণবের বক্তৃতা এতই তথ্যনির্ভর ও যুক্তিনির্ভর ছিল যে ইন্দিরা গান্ধী মুগ্ধ হয়ে যান। অবিলম্বে তিনি প্রণবকে ‘ডেপুটি কমার্স মিনিস্টার’ করার সিদ্ধান্ত নেন, দাবি অমল মুখোপাধ্যায়ের।
[আরও পড়ুন: তীক্ষ্ণ রাজনৈতিক বুদ্ধিই ছিল প্রণববাবুর ইউএসপি, দলের সেরা ট্রাবল-শুটারকে হারাল কংগ্রেস]
এরপরেই ছাত্র জীবন ও রাজনৈতিক জীবনে প্রবেশ নিয়ে বেশকিছু চমকপ্রদ তথ্য দেন অমলবাবু। তিনি জানান, ‘এই সময়েও প্রণব মুখোপাধ্যায় দু’টি উল্লেখযোগ্য কাজ করেন। প্রথমত, এম এ পড়ার সময় তিনি ঠিক করেছিলেন পড়াশোনার জন্য বাড়ি থেকে কোনও অর্থ নেবেন না। তাই তখন থেকেই প্রাইভেট পড়ানো শুরু করেন। শুভ্রা মুখোপাধ্যায় ছিলেন তঁার ছাত্রী। তখনই তিনি শুভ্রাকে বিয়ে করেন। এটা সেই সময় একটা বিপ্লব বলা যায়। দ্বিতীয়ত, অজয় মুখোপাধ্যায় বাংলা কংগ্রেস তৈরি করলে প্রণব নানাভাবে তঁাকে সাহায্য করেন। বাংলা কংগ্রেসের সংবিধান ও নিয়মাবলি প্রণবের তৈরি করে দেওয়া বলেও জানান অমলবাবু। ষাটের দশকের শেষদিকে বাংলা কংগ্রেসের পক্ষ তাঁকে রাজ্যসভায় পাঠান হয়। পরে অবশ্য কংগ্রেসের সঙ্গে বাংলা কংগ্রেস জুড়ে যায়। তখন প্রণবও কংগ্রেসের সাংসদ হয়ে যান।
The post ‘ইন্দিরাকে কখনও ছেড়ে যাননি প্রণব’, প্রয়াত বন্ধুর স্মৃতিচারণায় শিক্ষাবিদ অমল মুখোপাধ্যায় appeared first on Sangbad Pratidin.