সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বিহারে মহানাটক! নীতীশ কুমারের শিবির বদলের জল্পনাকে কেন্দ্র করে রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে টানটান উত্তেজনা। রবিবারই নাকি বিজেপির হাত ধরে ফের মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিতে চলেছেন ‘পালটু কুমার’। এই প্রেক্ষাপটে বড়সড় রদবদল করা হয়েছে আমলাদের বলে খবর।
জানা গিয়েছে, শুক্রবার ৭৯ জন আইপিএস ও ৪৫ জন বিহার অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিসের আমলাকে বদলির নির্দেশ জারি করেছে বিহার সরকার। জানা গিয়েছে, স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের এডিজি (অপারেশন) আইপিএস সুশীল মানসিং খোপদেকে এডিজি (প্রহিবিশন) পদে বদল করা হয়েছে। ওই পদে থাকা আইপিএস অফিসার অমত রাজকে এডিজি (অপারেশনস) পদে বহাল করা হয়েছে। জেহানাবাদের এসপি দীপক রঞ্জনকে বিহার স্পেশাল আর্মড পুলিশের বুদ্ধগয়া বিভাগের কমান্ডান্ট পদে আনা হয়েছে। আরারিয়ার এসপি অশোক কুমার সিংকে পাঠানো হয়েছে সাসারাম। তাঁকেও স্পেশাল আর্মড পুলিশের কমান্ডান্ট পদে বদল করা হয়েছে। নীতিশের ‘ডিগবাজি’ জল্পনার মাঝে এহেন রদবদলে অনেকেই রাজনৈতিক রং দেখছেন। পরিবর্তীতে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে জেডিইউ প্রধান তথা রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী কি ঘুঁটি সাজাচ্ছেন? উঠছে এমন প্রশ্নও।
[আরও পড়ুন: ডেরেককে ‘বিদেশি’ কটাক্ষ, ক্ষমা চাইলেন অধীর]
বলে রাখা ভালো, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের ইন্ডিয়া জোট ছেড়ে দিয়ে এনডিএ-র হাত ধরা শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা। সবকিছু ঠিক থাকলে রবিবারই বিহারে আবার জেডিইউ-বিজেপি জোট সরকারের ছবি দেখতে পাওয়ার পূর্ণ সম্ভাবনা। বর্তমান আরজেডি-র সঙ্গে জোট ছেড়ে বেরিয়ে এসে নীতীশ বিজেপির সমর্থনে মুখ্যমন্ত্রী হতে চলেছেন- সেই চিত্রনাট্য বৃহস্পতিবার রাতেই দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ ও জে পি নাড্ডার বৈঠকেই রচনা হয়ে গিয়েছে বলে সূত্রের খবর। তবে, ‘মহাগঠবন্ধন’ নিশ্চিত ভাঙছে জেনেও হাল ছাড়তে নারাজ আরজেডি সুপ্রিমো লালুপ্রসাদ যাদব। হ্যাম নেতা জিতনরাম মাঝি যদি মহাগঠবন্ধনে যোগ দেন, তাহলে তাঁর পুত্র সন্তোষ মাঝিকে উপমুখ্যমন্ত্রী করা হবে। লালুপ্রসাদের তরফে এমনই বার্তা জিতন মাঝিকে পাঠানো হয়েছে বলে সূত্রের খবর।
শুক্রবার বিকেলেও বিজেপির সদর দপ্তরে বিহারের নেতাদের নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতারা বৈঠক করেছেন। বিহারের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বিনোদ তাওড়ে ইতিমধ্যেই বিহার রওনা হয়ে গিয়েছেন। তার আগেই অবশ্য বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রীর পদ সামলানো বর্তমানে রাজ্যসভার সাংসদ সুশীল মোদি পাটনা চলে গিয়েছিলেন। বিজেপি সূত্রের খবর, বিহারে নীতীশ প্রথমে মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেবেন এবং তার পরে বিধানসভায় আস্থা ভোটে বিজেপি ও জিতনরাম মাঝির সমর্থন নিয়ে আবার মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসবেন। নীতীশের সঙ্গে তাদের দুজন উপমুখ্যমন্ত্রীও শপথ নেবেন বলেই ঠিক করেছে বিজেপি। শনি ও রবিবারে বিজেপি বিহারের কর্মসমিতির বৈঠক ডাকাও হয়েছে। বিহার রওনা হওয়ার আগে সুশীল দিল্লিতে সাংবাদিকদের বলেন, রাজনীতিতে কোনও দরজাই চিরকালের জন্য বন্ধ হয় না, নীতীশের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নেবে বলে জানিয়েছেন।
এদিকে পাটনায় সাধারণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সকালে প্রায় দেড় ঘণ্টা একই মঞ্চে হাজির থাকলেও নীতীশের সঙ্গে একবারও কথা বলতে দেখা যায়নি উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদবকে। সন্ধ্যায় রাবড়ি দেবীর বাসভবনে আরজেডির দলীয় বিধায়কদের নিয়ে বৈঠক হয়েছে। আবার রবিবার নীতীশ নিজের অ্যানে মার্গের বাসভবনে জেডিইউ বিধায়ক দলের বৈঠক ডেকেছেন। দিনকয়েক আগেই নীতীশ রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্র নিয়ে সরব হয়েছিলেন। তিনি যখনই পরিবারতন্ত্র নিয়ে মুখ খুলেছেন তখনই বিজেপির সঙ্গে হাত মেলানোর রাস্তা খুলেছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এনডিএ ছাড়া, আবার যোগ দেওয়া নীতীশের কাছে নতুন নয়। এর আগেও বেশ কয়েকবার তিনি বিহারে বিজেপির সঙ্গ ছেড়েছেন, আবার পরে জুড়েছেন।
এদিকে নীতীশের ইন্ডিয়া ত্যাগ জোটের জন্য ধাক্কাই বলা চলে। অবশ্য এটা খুব একটা অপ্রত্যাশিত ছিল না। গত ১৯ ডিসেম্বর ইন্ডিয়া জোটের শেষ বৈঠক থেকেই নীতীশ অখুশি ছিলেন। জোটের ‘মুখ’ তাঁকে করা হোক, এমনটাই ইচ্ছা ছিল নীতীশের। প্রকাশ্যে নিজে সেকথা না বললেও দলীয় নেতাদের দিয়ে বারবার সেই ‘হাওয়া’ তুলিয়েও ছিলেন। ফলে বিহারের রাজনীতিতে ‘পালটু কুমার’ হিসাবে পরিচিত নীতীশের দলবদলের সম্ভাবনা বরাবরই ছিল।