গৌতম ব্রহ্ম ও নব্যেন্দু হাজরা: পূর্বাঞ্চলের নিরাপত্তা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের দায়িত্ব পেয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ। ৪ প্রতিবেশী রাজ্যের সামনে সেই বৈঠকে কেন্দ্রীয় বঞ্চনা নিয়ে সরব হলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হিসেব দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন, কেন্দ্রের কাছে বাংলার কত বকেয়া রয়েছে এবং তা পেতে বাংলাকে কত সমস্যার মুখে পড়তে হয়। তবে সবটাই হল অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে। শনিবার অমিত শাহ মুখ্যমন্ত্রীর দাবি মেনে দুর্যোগ মোকাবিলা এবং ডিভিসির জল ছাড়া নিয়ে স্বতন্ত্র কমিটি গড়ার আশ্বাস দেন।
শনিবারের বৈঠকে সীমান্ত সুরক্ষাই (Border security) ছিল আলোচনার মুখ্য বিষয়। সীমান্ত রাজ্যগুলিতে বিএসএফের (BSF) কাজের এলাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে। ৩৫ কিলোমিটার থেকে ৫০ কিলোমিটার হয়েছে। তা নিয়ে আপত্তি ছিল অনেকের। এদিনের বৈঠকে সরাসরি এক্তিয়ার বৃদ্ধির প্রসঙ্গ না উঠলেও বাংলার তরফে অভিযোগ তোলা হয়, বিএসএফ কাজের ক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে হস্তক্ষেপ করছে। তাতে অমিত শাহ সীমান্ত সুরক্ষায় বিএসএফে পাশাপাশি রাজ্য পুলিশের দায়িত্বের কথা মনে করিয়ে বলেন, পুলিশ-বিএসএফকে যৌথভাবে কাজ করতে হবে। তাতে সমস্যা হবে না। অর্থাৎ কেন্দ্র-রাজ্য যথাযথ সমন্বয় রেখে সীমান্ত পাহারা দিতে হবে।
[আরও পড়ুন: ‘ভুল হলে ক্ষমা করুন, মুখ ফেরাবেন না’, রানাঘাটের জনসভায় আরজি অভিষেকের]
এদিনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএসএফের ডিজি পঙ্কজ কুমার সিং। তিনি দাবি করেন, সীমান্ত চেক পোস্ট ও ফেন্সিংয়ের জন্য জমি দরকার। প্রতি চেক পোস্টের জন্য ২০ একর জমি লাগবে। সূত্রের খবর, তাতে মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন, ”আমরা তো ৫ একর জমিতে মেডিক্যাল কলেজ বানিয়ে ফেলি। আর চেক পোস্ট পিছু ২০ একর জমি লাগবে? আমরা ১০ একর জমি দিতে পারব।” মোট ১১ টি চেক পোস্টে ফেন্সিং হবে বলে জানানো হয়েছে।
[আরও পড়ুন: জামিয়া মসজিদ চত্বরে পাশাপাশি বসতে পারবে না নারী-পুরুষ, জারি হল নিষেধাজ্ঞা]
১০০ দিনের টাকা বকেয়া নিয়ে এদিনের বৈঠকে সরব হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। বিহারের অভিযোগে সুর মিলিয়ে তিনিও জানান, বাংলা আমফান (Amphan), ১০০ দিনের টাকা থেকে বঞ্চিত। তাতে অমিত শাহর পালটা দাবি, ১০০ দিনের রিপোর্টে নিশ্চয়ই কোনও সমস্যা আছে, তাই টাকা দিতে সমস্যা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী সঙ্গে সঙ্গে তথ্য দিয়ে তাঁকে জানান, রাজ্যের তরফে কোনও রকম সমস্যা নেই। প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সেই চিঠিরই একটি কপি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকেও প্রমাণ হিসেবে তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী। এরপর আমফানের টাকা দেরিতে পাওয়া নিয়ে মমতার অভিযোগে অমিত শাহর পরামর্শ, উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলিতে প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য আলাদা কমিটি, ত্রাণ তহবিল তৈরি হোক, যাতে দ্রুত টাকা পাওয়া যায়।
ডিভিসি (DVC) থেকে জল ছাড়া নিয়ে বাংলার সঙ্গে প্রতিবেশী ঝাড়খণ্ডের বিবাদ হয়ে থাকে। এদিনের বৈঠকে সেই প্রসঙ্গও উঠল। বাংলার অভিযোগ, তাদের না জানিয়ে যখন-তখন জল ছেড়ে দেওয়া হয়। তাতে ঝাড়খণ্ড লাগোয়া জেলাগুলিতে প্লাবন পরিস্থিতি তৈরি হয়। এই অভিযোগ শোনার পর অমিত শাহ বলেন, ”ডিভিসির তো আলাদা কমিটি আছেই। আপনারা নিজেরা বসে আলোচনা করে সমাধানের রাস্তা খুঁজে নিন।”