সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বাংলায় সিএএ (CAA) চালু করতে দেব না। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বলবৎ হওয়ার পরেই হুঙ্কার দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। একই সুর শোনা গিয়েছিল তামিলনাড়ু ও কেরলের মুখ্যমন্ত্রীর কথাতেও। কিন্তু তাঁদের সেই দাবি নস্যাৎ করে দিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah)। রাজ্য সরকারগুলো আদৌ আইন বলবৎ করার বিষয়টি আটকাতে পারে কিনা, সেই নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিলেন তিনি।
২০১৯ সালে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন আনে কেন্দ্রের মোদি সরকার। উদ্দেশ্য, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশে নির্যাতিত অ-মুসলিম শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়া। তবে করোনার জেরে তা বলবৎ করা যায়নি প্রায় ৪ বছর। লোকসভা ভোটের আবহে গত সোমবার গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে সিএএ চালু করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। তার পরেই একের পর এক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা ঘোষণা করেন, তাঁদের রাজ্যে কিছুতেই সিএএ কার্যকর হবে না। বঙ্গবাসীকে হুঁশিয়ারি দিয়ে মমতা বলেন, অনেকেই সিএএ আদতে ঠিক কী, তা বুঝতে পারছেন না। সেই কারণেই খুশি হচ্ছেন, আনন্দে মাতছেন। আদতে গোটাটাই কেন্দ্রের ভোট লুটের ফাঁদ! যে ফাঁদে পা দিলে বিপদে পড়বেন বাংলার বহু মানুষ। হারাবেন ঘর-বাড়ি।
[আরও পড়ুন: ‘এক দেশ, এক ভোট’, রাষ্ট্রপতির কাছে ১৮ হাজার পাতার রিপোর্ট জমা দিল কোবিন্দ কমিটি]
লাগাতার বিরোধীদের সমালোচনার পরে বৃহস্পতিবার একটি সর্বভারতীয় সংবাদ সংস্থাকে দীর্ঘ সাক্ষাৎকার দেন অমিত শাহ। সিএএ নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তোষণের রাজনীতি করছেন বলে তোপ দাগেন। তাঁর কথায়, জাতীয় সুরক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে রাজনীতি করছেন। মানুষ কখনই পাশে থাকবেন না। আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চ্যালেঞ্জ করছি, তিনি দেখান সিএএ-র কোন ধারা নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়।” স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আবারও আশ্বাস, এই আইনের জেরে কেউ নাগরিকত্ব হারাবেন না। কারণ এটা নাগরিকত্ব কাড়ার নয়, নাগরিকত্ব প্রদানের আইন। সংবিধান অনুযায়ী, এই আইন কার্যকর না করার কোনও কারণ নেই।
ওই সাক্ষাৎকারেই শাহের প্রশ্ন, সিএএ বলবৎ না করার অধিকার রয়েছে কি রাজ্য সরকারগুলোর কাছে? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “সিএএ প্রত্যাহারের কোনও সুযোগই নেই। আসলে তোষণের রাজনীতি করছে দলগুলো। ওরা নিজেও জানে যে সিএএ বলবৎ না করার অধিকার নেই ওদের হাতে। এটা পুরোটাই কেন্দ্রীয় ইস্যু। সংবিধানের ১১ নং ধারা অনুযায়ী, নাগরিকত্ব সংক্রান্ত সমস্ত আইন তৈরির অধিকার রয়েছে কেন্দ্রের হাতেই। এই ক্ষেত্রে রাজ্যের কোনও এক্রিয়ার নেই। কিন্তু তোষণের রাজনীতি করতে ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে তারা।” শাহের অনুরোধ, নির্বাচন শেষ হওয়ার পরে সব রাজনৈতিক দলগুলোই সিএএ বলবৎ করতে সহযোগিতা করুন।
তবে প্রশ্ন উঠছে, সিএএ কার্যকর হলে অসম, পশ্চিমবঙ্গ, মেঘালয়ের মতো রাজ্যগুলোতে জনবিন্যাস পালটে যেতে পারে। বেশ কিছু সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি বিপন্ন হতে পারে। তাহলে কি এই আইন বলবৎ করার আগে সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলোর সঙ্গে কেন্দ্রের আলোচনা করা উচিত ছিল না? রাজস্থান-গুজরাটে নাগরিকত্ব দেওয়ার বিষয়টি অনেক ক্ষেত্রেই রাজ্যের উপর দায়িত্ব দেওয়া হয়। অন্য রাজ্যগুলোতেও এই ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে বলে বিশ্লেষকদের মত।