সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বোলপুরে অনুব্রত মণ্ডলের খাসতালুকে কার্যত শক্তি প্রদর্শন করে গেলেন অমিত শাহ (Amit Shah)। রবিবার ডাকবাংলো মোড় থেকে চৌরাস্তা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর রোড শো’য় বিপুল ভিড়ই তার প্রমাণ। অথচ রাঙামাটির দেশে বিজেপির এত সমর্থনের চিত্র এর আগে কখনও চোখে পড়েনি। রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, এটা শাহ-ম্যাজিক। অন্যদিকে, প্রায় একই সময়ে শান্তিনিকেতনে রাজ্য সরকারি প্রকল্প ‘দুয়ারে সরকার’ নিয়ে প্রচার মিছিলে নামল তৃণমূলও। আর সেই বঙ্গধ্বনি যাত্রার নেতৃত্ব দিলেন স্বয়ং জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল (Anubrata Mandal)। সেই মিছিলে দেখা, ভিড় অনেকটাই কম। ফলে রবিবাসরীয় বোলপুরে অমিত বনাম অনুব্রতর মিছিলের লড়াই বিধানসভা নির্বাচনের আগে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠল।
মেগা রোড শো। ভিড়ের চাপে ৯০০ মিটার রাস্তা পেরতে লাগল এক ঘণ্টারও বেশি সময়ে। রাস্তার দুধারে গেরুয়া বেলুনে সজ্জিত, ছোট মঞ্চ বেঁধে বাউলে গানের আসর, বিপুল সংখ্যক জনতা। এসব কাটিয়ে অতি শ্লথগতিতে এগিয়ে চলল অমিত শাহর গাড়ি। এমনকী রাস্তার পাশের বহুতল বাড়ির ছাদ থেকেও মানুষজন গেরুয়া আবির ছড়িয়ে সমর্থন জানালেন তাঁকে। বোলপুরের মাটিতে এমন ছবি দেখা যাবে, এতটা বোধহয় আশা করেনি বিজেপি নেতৃত্বও। একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে বোলপুর তথা বীরভূম জেলার রাজনৈতিক চিত্র বদলের এটাই এক বড় ইঙ্গিত।
অথচ, গত কয়েকটি নির্বাচনের ফলাফলে বিজেপির এমন জনসমর্থন কিন্তু ছিল না। এমনকী ২০১৪ সালে বোলপুর থেকে তৃণমূলের প্রার্থী হয়ে লোকসভা ভোটে জিতেছিলেন যে অনুপম হাজরা, তিনি কিন্তু ২০১৯এ শিবির বদলের পর যাদবপুরে দাঁড়িয়ে জিততে তো পারেনইনি। বোলপুরেও গেরুয়া শিবিরের প্রার্থী গোহারান হেরেছিলেন তৃণমূলের অসিত মালের কাছে। কয়েকটি ব্লকে মাত্র বিজেপি সংগঠন তৈরি করেছিল। এই অবস্থায় আজকের ছবি কিছুটা অপ্রত্যাশিত।
[আরও পড়ুন: ‘দাঙ্গাকারীরা শান্তিনিকেতনে কেন?’, অমিত শাহর সফরের বিরোধিতায় সোনাঝুরিতে বিক্ষোভ]
অন্যদিকে, জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের খাসতালুক এই বোলপুর। গোটা জেলায় তিনি দাপুটে এবং জনপ্রিয় নেতা। তিনি যখন রবিবার ‘বঙ্গধ্বনি যাত্রা’য় শামিল হন, তখন দেখা যায়, তাতে জনসংখ্যা বেশ কম। এ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তাঁর দাবি, ”আমি তো মুর্শিদাবাদ, বর্ধমানের লোকজন এনে মিছিল করি না। আমি শুধু নিজের জেলার কয়েকটা ব্লকের সমর্থকদের নিয়েই মিছিলে বেরিয়েছি। পাঁচ, ছ’টা ব্লকের দলীয় সদস্য, সমর্থকরা এলেও সভা ভরে যায়। বাইরে থেকে লোক আনার দরকার হয় না।” অর্থাৎ, তিনি বুঝিয়ে দিলেন, অমিত শাহর রোড শো’র এই ভিড়ে বোলপুরের জনসমর্থন কমই, বাইরের জেলার লোকের সমর্থন অধিক।
[আরও পড়ুন: সপ্তপদে সাজল পাত, একতারার সুরে বোলপুরের বাউল বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজ অমিত শাহর]
কিন্তু অঙ্কটা কি সত্যিই এতটা সরল? স্রেফ বাইরের দুই জেলার লোক এনেই রোড শো’য় এমন চমক দিলেন অমিত শাহ? তাঁর অবশ্য দাবি, মোদির প্রধানমন্ত্রিত্বে আস্থা রেখে পরিবর্তনের আশাতেই এত জনসমাগম। এই ছবিই বুঝিয়ে দিচ্ছে, বাংলার মানুষ কতটা পরিবর্তন চান। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং জেলা তৃণমূল সভাপতির দাবি যাইই হোক, রোড শো’র ছবি কিন্তু অনেক কিছুই ইঙ্গিত দিচ্ছে। যা দেখে গোপন করেও চিন্তা যেন ঠিক গোপন করতে পারলেন না অনুব্রতও। তা তাঁর শরীরী ভাষাতেই স্পষ্ট।