বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত, নয়াদিল্লি: ‘লাও তো বটে। কিন্তু আনবে কে?’ আসবেই বা কী করে? লোকসভা ভোটে বাংলা থেকে ২৫ আসন নিয়ে আসার দাবি করা হয়েছিল। কিন্তু নিজেদের দাবি নিয়ে ধন্ধে গেরুয়া শিবিরের শীর্ষ নেতৃত্বই। লক্ষ্য পূরণে দ্বিতীয়বারের মেয়াদ পেয়েই বঙ্গে ছুটে যান বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা। এবার পালা অমিত শাহর (Amit Shah)। সূত্রের খবর, ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বঙ্গে আসছেন শাহ। নাড্ডার মতো রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে বন্ধ দরজার আড়ালে বৈঠক ছাড়াও সমাবেশ করার কথা। তবে গতবার হেরে যাওয়া আসনগুলিতে সভা করতে চাইছে শাহ নিজেই। সেইমতো জায়গা খুঁজতে বলা হয়েছে বঙ্গ বিজেপি (Bengal BJP) নেতাদের।
পরাজিত আসনগুলিকে প্রথম দফায় নিশানা করার কারণ হিসেবে এক কেন্দ্রীয় নেতার বক্তব্য, “যে আসনগুলিতে খুব অল্পের জন্য হারতে হয়েছে, সেখানের কোনও একটিতে সভা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কারণ, বিগত নির্বাচনে কিছু কৌশলগত ভুল ছিল। সেই ভুলগুলে শুধরে নিতে হবে।” কী ভুল ছিল, ইতিমধ্যেই তা চিহ্নিত করা হয়েছে। আর এখন রাজ্যে প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়া আরও প্রবল হয়েছে। সেই জনমতকে কাজে লাগিয়ে এই আসনগুলির মধ্যে বেশ কয়েকটিতে জয় পাওয়া সম্ভব বলে জানান তিনি।
[আরও পড়ুন: ‘মোদি ম্যাজিক যতদিন, ভারতে বিজেপির শাসনও ততদিন’, নয়া সংলাপ ‘মহাগুরু’র]
তবে এর মধ্যেও কিছু সমস্যা রয়েছে বলে স্বীকার করেন ওই কেন্দ্রীয় নেতা। তিনি জানান, একুশের বিধানসভা ভোটে (Assembly Election 2021) পরাজয়ের পর বহু কর্মী কার্যত বসে গিয়েছে। অনেকে হতাশায় তৃণমূলে যোগ দিয়েছে। আর বামপন্থীদের (Left front) যে ভোটাররা তৃণমূলকে পরাজিত করার আশায় পদ্মে ছাপ মেরেছিল তঁাদের একটা অংশ ফের পুরনো পার্টিতে ফিরছে। তাই এখন থেকেই কেন্দ্রের হেভিওয়েট নেতারা বাংলায় পড়ে না থাকলে গতবারের লক্ষ্যমাত্রাও ছোঁয়া যাবে না। জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে (National Executive Committee) ২৫টি লোকসভা আসন জয়ের লক্ষ্য স্থির করে দিয়েছেন শাহ। এই লক্ষ্যে পৌঁছতে গেলে জেতা ১৮টি আসনের বাইরে আরো ৭টি আসন জিততে হবে বিজেপিকে।
[আরও পড়ুন: ‘হিটলারের আদর্শেই হিন্দুত্ব গড়েছিলেন সাভারকর’, কংগ্রেস নেতার মন্তব্যে তীব্র বিতর্ক]
যদিও, দল এটা ভাল ভাবেই জানে বিগত লোকসভা ভোটে (Loksabha Poll)জেতা ১৮ টি আসনের মধ্যে অধিকাংশ আসনই বিগত বিধানসভা নির্বাচনের ফলের নিরিখে বিজেপিকে পিছনে ফেলে এগিয়ে গিয়েছে তৃণমূল (TMC)। আবার কেন ২৫ আসন। কেন তার বেশি নয়। গেরুয়া শিবিরের যুক্তি, গতবার ১৮টি জিতলেও এখন কমে হয়েছে ১৬। আর ২৫ রখলেই যে ২৫ আসবে এমনটা নয়। আসলে নুন্যতম গতবারের ১৮ সংখ্যা যাতে ধরে রাখা যায় তাই লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কিছু আসন রয়েছে যেখানে বিজেপির পক্ষে কোনওভাবেই জয় পাওয়া সম্ভব নয়। বিশেষ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় অধ্যুষিত লোকসভা আসন।
প্রথমেই যে ৫টি হারা আসন বাদ রাখা হয়েছিল, সেগুলি হল বহরমপুর, মুর্শিদাবাদ, জঙ্গিপুর , কাঁথি ও বসিরহাট। একমাত্র অধিকারী গড় কাঁথি ছাড়া বাকিগুলি মূলত সংখ্যালঘু মুসলিম অধ্যুষিত কেন্দ্র। আর ২০২১- এর নিরিখে তৃণমূলের থেকে পিছিয়ে পড়া বিজেপির আসনগুলির মধ্যে রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের বালুরঘাট কেন্দ্র থেকে শুরু করে প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, বর্তমান কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুভাষ সরকার, হুগলির সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়, ঝাড়গ্রামের সাংসদ কুনার হেমব্রমের লোকসভা আসন রয়ছে। পিছিয়ে রয়েছে, বারাকপুর, আসানসোলের মতো হাতছাড়া হয়ে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রও। একমাত্র উত্তরবঙ্গের মালদহ ছাড়া বাকি আসনগুলি এখনও পর্যন্ত সুরক্ষিত রাখতে পেরেছে বিজেপি। এই পরিস্থিতিতে লোকসভায় বিজেপির ২৫ আসন জেতার দাবি নিয়ে দলের মধ্যেই সংশয় রয়েছে।