অর্ণব আইচ: এলাকায় পরোপকারী বলে পরিচিত ছিলেন তিনি। সুখে-দুঃখে থাকতেন পাড়ার লোকের সঙ্গে। বুধবার প্রতিবেশীদের সঙ্গে গিয়েছিলেন গঙ্গার ঘাটে। ফেরার সময় এজেসি বোস রোড ফ্লাইওভারে ঘটে দুর্ঘটনা। মালবাহী গাড়ি উলটে গুরুতর আহত অবস্থায় মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছিলেন রঞ্জিত রায় (৫০)। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে কলকাতা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হল বালিগঞ্জের বামনপাড়ার বাসিন্দা রঞ্জিতবাবুর।
গত বুধবার এজেসি বোস রোড ফ্লাইওভারের উপর মালবাহী গাড়ি উলটে আহত হন ২৯ জন। তাঁদের মধ্যে এখনও কয়েকজন হাসপাতালে ভরতি রয়েছেন। প্রতিবেশী মাহালি পরিবারের সঙ্গে ছিলেন রঞ্জিত রায় ও তাঁর ছেলে ঋত্বিক রায়। গাড়ি উলটে রাস্তায় পড়ে যাওয়ার ফলে রঞ্জিত রায়ের মাথা ও বুকে বড় ধরনের চোট লেগেছিল। ফেটে গিয়েছিল মুখ। দুর্ঘটনার (Accident) দিন থেকেই আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভরতি ছিলেন তিনি। তাঁর ছেলেরও মুখ ও হাতে আঘাত লাগে। চিকিৎসার পর তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। আহত অবস্থাতেই বাবার চিকিৎসার জন্য ছোটাছুটি করছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে মৃত্যু হয় রঞ্জিতবাবুর। এখনও হাসপাতলে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভরতি রয়েছেন চার জন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন মহিলাও।
[আরও পড়ুন: ‘শুভেন্দুদার জন্যই বিষ্ণুপুর থেকে লোকসভায় জিতেছি’, বিস্ফোরক স্বীকারোক্তি সৌমিত্র খাঁ’র]
স্থানীয় নিক্কু মাহালি জানান, কয়েকদিন আগেই তাঁদের আত্মীয় বালিগঞ্জের বামনপাড়ার বাসিন্দা গোলাপি মাহালির মৃত্যু হয়। তাঁর শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের অঙ্গ হিসাবে ঘাটের কাজ করতে গিয়েছিলেন স্বামী জয়পাল ও দুই ছেলে ষষ্ঠী এবং শম্ভু মাহালি। সঙ্গে ছিলেন আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীও। তাঁদের মধ্যেই একজন হচ্ছেন রঞ্জিত রায়। তিনি কড়েয়া থানা এলাকার একটি কারখানায় কাজ করতেন। কিন্তু লকডাউনের পর তাঁর চাকরি চলে যায়। বাড়িতে রোজগেরে বলতে মূলত তিনিই। ফলে চলতি বছরে আর্থিক সমস্যায় পড়ে পরিবার। কিন্তু তাতেও পরোপকারের অভ্যাস ছাড়তে পারেননি রঞ্জিতবাবু। বিভিন্নভাবে পাড়ার বহু লোকের উপকার করতেন তিনি। কারও কোনও বিপদ হলে পাশে গিয়ে দাঁড়াতেন। স্বাভাবিকভাবেই তাঁর মৃত্যুতে বামনপাড়ায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
এদিকে, পুলিশের কাছে খবর, বড়দিন থেকেই একসঙ্গে অনেকে পিকনিক করতে বের হচ্ছেন মালবাহী গাড়িতে করে। কিন্তু সাধারণভাবে মালবাহী গাড়িতে যাত্রী বহন নিষিদ্ধ। তাই এবার থেকে এই ব্যাপারে এবার আরও কড়া হচ্ছে পুলিশ। কারণ, পুরো শীতকালেই মালবাহী গাড়ি করে পিকনিক করার প্রবণতা অনেকের মধ্যেই থাকে। মালবাহী গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থেকে যায়। তাই পুলিশের পরামর্শ, ছোট বাস বা অন্য গাড়িতে করে পিকনিকে যান। কিন্তু মালবাহী গাড়ি চড়ে নয়। এই বিষয়টির উপর নজরও রাখা হচ্ছে। মালবাহী গাড়িতে যাত্রী বহন করা হলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।