সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: প্যালেস্টাইনকে রাষ্ট্রসংঘের পূর্ণাঙ্গ সদস্য করা হোক। শুক্রবার রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ সভায় এনিয়ে একটি প্রস্তাব আনা হয়। সেই ভোটাভুটিতে অধিকাংশ দেশ প্যালেস্টাইনের পক্ষে ভোট দেয়। স্বাভাবিকভাবেই যা নিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েছে ইজরায়েল। প্রস্তাবটি পাশ হতেই এই ভোটদানের কড়া নিন্দা করে রাষ্ট্রসংঘের সনদ ছিঁড়ে ফেলেন ইহুদি দেশটির রাষ্ট্রদূত।
এদিনের সাধারণ সভায় ভোটাভুটিতে প্যালেস্টাইনের পক্ষে ভোট দেয় ১৪৩টি দেশ। যার মধ্যে ছিল ইজরায়েলের 'বন্ধু' ভারতও। অন্যদিকে ২৫টি দেশ এই ভোটদান থেকে বিরত থাকে। আমেরিকা ও ইজরায়েল-সহ ৯টি দেশ বিপক্ষে ভোট দেয়। কিন্তু অধিকাংশ ভোট নিয়ে প্রস্তাবটি পাশ হয়ে যায়। যার বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভপ্রকাশ করে ইজরায়েলের রাষ্ট্রদূত গিলাদ এরদান বলেন, "আজকের এই দিনটা অন্যতম কালো দিন হিসাবে লেখা থাকবে। আজকে রাষ্ট্রসংঘে যে অনৈতিক কাজ হল আমি চাই গোটা বিশ্ব তা মনে রাখুক। আমি একটা আয়না দেখাতে চাই আপনাদের। রাষ্ট্রসংঘে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কত কথা বলা হয়। কত যুক্তি দেওয়া হয়। কিন্তু আজকে সব মিথ্যা হয়ে গেল। এমন একটা দেশকে সদস্যপদের জন্য সমর্থন জানানো হল যারা সন্ত্রাসবাদকে মদত দেয়। জঙ্গিদের আশ্রয় দেয়। সন্ত্রাসবাদ নিয়ে যে সনদ তা আপনারাই আজকে ছিঁড়ে ফেললেন। আমি তারই প্রতিচ্ছবি দেখাচ্ছি আপনাদের।" এই বলেই এরদান গোটা সনদ ছিঁড়ে ফেলেন।
[আরও পড়ুন: বন্ধু ভারত! প্যালেস্টাইনের পূর্ণাঙ্গ সদস্যপদের পক্ষে রাষ্ট্রসংঘে ভোট নয়াদিল্লির]
বিশ্ব মানচিত্রে সার্বভৌম দেশ হিসাবে প্যালেস্টাইনের কোনও অস্তিত্ব নেই। এটা শুধু একটা ধারণা মাত্র। সেই কথা মনে করিয়ে দিয়ে গিলাদ এরদান তোপ দেগে বলেন, "যে দেশের কোনও অস্তিত্ব নেই আপনারা তাদের পক্ষে ভোট দিলেন। আমি স্পষ্টভাবে ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছি। আগামিদিনে প্যালেস্টাইন হামাস জঙ্গিদের রাষ্ট্র হয়ে উঠবে। আর খুব শীঘ্রই হামাসের মাথা ইয়াহিয়া সিনওয়ার। যাকে অর্থ প্রদান করে এই রাষ্ট্রসংঘই।" এই প্রস্তাব পাশ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ইজরায়েলের বিদেশমন্ত্রী ইজরায়েল কাটজ। তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, "গত ৭ অক্টোবর হামাস যা করেছে এই ভোটদান তাঁরই পুরস্কার। রাষ্ট্রসংঘ কতটা পক্ষপাতদুষ্ট এটা তারই নিদর্শন।" তবে সাধারণ সভায় প্রস্তাব পাশ হলেও প্যালেস্টাইনের পূর্ণাঙ্গ সদস্যপদ নিয়ে আসল সিদ্ধান্ত রয়েছে রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের হাতে।
এদিন রাষ্ট্রসংঘে প্যালেস্টাইনের পক্ষে ভারতের ভোট দেওয়া নিয়েও বিস্তর আলোচনা হয় কূটনৈতিক মহলে। আরব দেশগুলো বাদ দিলে ভারতই একমাত্র দেশ, যারা প্রথম প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনকে সেখানকার একমাত্র প্রতিনিধি এবং ভূখণ্ডের অধিকারী বলে মর্যাদা দেয়। পরবর্তীতে প্যালেস্টাইনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ভারতই। সেই কারণে ১৯৮৮ সালে গাজায় কূটনৈতিক কার্যালয়ও চালু হয়। ২০০৩ সাল নাগাদ তা স্থানান্তরিত হয় রামাল্লায়। চলতি মাসের গোড়াতেই রাষ্ট্রসংঘে ভারতের প্রতিনিধি রুচিরা কম্বোজ প্যালেস্টাইনের পক্ষে সওয়াল করেছিলেন। তাঁর বক্তব্য ছিল, নিরাপত্তা পরিষদে বারবার ভেটোর কারণে প্যালেস্টাইনের আবেদন গৃহীত হচ্ছে না। তবে তিনি আশাপ্রকাশ করেছিলেন, দ্রুতই স্থায়ী সদস্যপদ পাওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।