ব্রতদীপ ভট্টাচার্য, বারাসত: যে শহরে বড় হয়ে ওঠা, সেই শহরের আদালতেই কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হল অনিন্দিতাকে। ওকালতি পাশ করে যে আদালতে প্রথম হাতেকলমে আইনের পাঠ, স্বামীকে খুনের অভিযোগে সেখানেই রবিবার হাজিরা দিল সে। এজলাসে দাঁড়িয়ে সরকারি আর আসামি পক্ষের আইনজীবীরা তার জামিনের আবেদন নিয়ে আইনি লড়াই চালাচ্ছেন। তখন মাথা নিচু করে একভাবে দাঁড়িয়ে রইল সে। নির্বিকার! আগের রাতেই সে পুলিশের জেরায় স্বামীকে খুনের কথা শিকার করেছে বলে সূত্রের খবর। তবে বারাসত আদালতের পুরনো বন্ধুরা কোর্ট লকআপে অনিন্দিতার সঙ্গে দেখা করতে গেলে সে বলে, “বিশ্বাস কর, আমি ওকে মারিনি।”
[দলের জন্য স্বার্থত্যাগ করতে হবে, যুব নেতাদের বার্তা দিলীপের]
এদিন আদালতে অনিন্দিতার আইনজীবী চন্দ্রশেখর বাগও বিচারকের কাছে তাঁর মক্কেলকে একইভাবে নিরাপরাধ দাবি করে জামিনের আবেদন জানান। তবে নিউটাউনের আইনজীবী রজতকুমার দের হত্যা মামলায় তাঁর স্ত্রী অনিন্দিতা পাল দের জামিনের আবেদন খারিজ করে দেন বিচারক। বারাসত আদালতের মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু শুর। দীর্ঘ জেরার পর শনিবার রাতে অনিন্দিতা পাল দেকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। এদিন তাকে বারাসত আদালতে পেশ করা হয়। নিউটাউন থানার পুলিশ ধৃতকে দশ দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানিয়েছিল আদালতের কাছে। বিচারক ধৃতকে আট দিনের পুলিশি হেফাজতের
নির্দেশ দেন।
রবিবার ছুটির দিন হলেও, বারাসত আদালতে আইনজীবীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। অনিন্দিতা বারাসতের বাসিন্দা হলেও, এদিন তাকে আদালতে আনার পর আত্মীয় পরিজন কারও দেখা মেলেনি। বরং যাঁরা ছিলেন, তাঁরা প্রত্যেকেই এসেছিলেন রজতের জন্য। বারাসত আদালতের আইনজীবী তথা বার অ্যাসোসিয়েশনের এক্সিকিউটিভ কমিটির সদস্য সমর ঘোষাল জানান, “রজত আমাদের ছোট ভাইয়ের মতো। আমরা চাই তার মৃত্যুর রহস্যের দ্রুত কিনারা হোক।” এদিন এই মামলায় সরকারি আইনজীবী হিসাবে দাঁড়িয়েছিলেন বিভাস চট্টোপাধ্যায়। তবে তাঁর সঙ্গে বারাসত আদালতের তাবড় আইনজীবীরাও অনিন্দিতার বিরুদ্ধে ডিফ্যাক্টো হিসাবে ময়দানে নামেন। প্রত্যেকেরই এক দাবি, রজতের খুনের বিচার চান তাঁরা।
এদিন সরকারি আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায় রজতের মামলাটিকে সমাজকে নাড়া দেওয়ার মতো ঘটনা বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, অনিন্দিতার বয়ানে অসংগতি ও তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে। তদন্ত প্রাথমিক স্তরে রয়েছে। তাকে আরও জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন। তাই ধৃতকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানান। পালটা আসামি পক্ষের আইনজীবী চন্দ্রশেখর বাগ অনিন্দিতাকে নিরাপরাধ দাবি করে বলেন, তিনি পুলিশের সঙ্গে সহযোগিতা করেছেন, আগামিদিনেও করবেন। উপরন্তু অনিন্দিতার একটি দেড় বছরের শিশু রয়েছে। শিশুটির জন্য জামিন দেওয়ার আরজি জানান তিনি। যদিও সরকারি আইনজীবী জামিনের বিরোধিতা করে বলেন, পুলিশকে সহযোগিতা করা তো দূর, অনিন্দিতা একাধিকবার বয়ান বদল করে তদন্তকারীদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছে।
The post ‘আমি ওকে মারিনি’, আদালতে খুনের অভিযোগ অস্বীকার অনিন্দিতার appeared first on Sangbad Pratidin.