অর্ণব আইচ: রোমানীয় এটিএম জালিয়াতদের এক সময়ের সহযোগী মনোজ গুপ্তাই কি কলকাতা ও দিল্লির এটিএম জালিয়াতির গ্যাংয়ের পাণ্ডা? তিন বছর আগে যে মনোজ রোমানীয় জালিয়াতদের স্কিমার যন্ত্র সরবরাহ করে জালিয়াতিতে সাহায্য করেছিল, সে এখন এই এটিএম জালিয়াতির মাথা বলে অনেকটাই নিশ্চিত পুলিশ। মধ্য কলকাতার বউবাজারের একটি এটিএম থেকে মনোজ গুপ্তার ফুটেজ পেয়েই তাকে শনাক্ত করেন লালবাজারের গোয়েন্দারা।
এর পরই গোয়েন্দাদের হাতে আসে দলের অন্য মাথা অমিত গুপ্তা ওরফে অমৃতের নাম। মঙ্গলবার দিল্লির ATM জালিয়াতির গ্যাংয়ের আরও এক সদস্যকে গ্রেপ্তার করলেন লালবাজারের গোয়েন্দারা। ধৃত ব্যক্তির নাম মহম্মদ নাসিম ওরফে রাজবীর। পুলিশের দাবি, দিল্লির ওখলার বাসিন্দা নাসিম এটিএম জালিয়াতির আগেই কলকাতায় আসে। রেইকি করার পর এটিএম জালিয়াতির সময় ও তার পরও উপস্থিত ছিল সে। পর পর কলকাতা ও বিধাননগর পুলিশ গ্রেপ্তার করার পর কলকাতা বিমানবন্দর থেকে দিল্লির বিমানে ওঠার আগেই তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। আরও একজন সন্দেহভাজনকেও পুলিশ আটক করেছে।
দিল্লির বাসিন্দা মনোজ গুপ্তা ও তার এক ভাই নবীন গুপ্তাকে ইতিমধ্যেই গুজরাটের সুরাট থেকে গ্রেপ্তার করেছেন লালবাজারের (Lalbazar) গোয়েন্দারা। বউবাজারে এটিএম জালিয়াতির মামলায় এদিন তাদের দু’জনকে কলকাতায় নিয়ে এসে ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হয়। তাদের ৬ দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক। সোমবার বিধাননগর কমিশনারেটের গোয়েন্দারাও গ্রেপ্তার করেন মহম্মদ ওয়াকিল, সন্দীপ গুপ্তা ও অমিত গুপ্তাকে। এদিন তাদের বারাকপুর আদালতে তোলা হলে তাদের ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক।
[আরও পড়ুন: দ্বাদশ শ্রেণিতে ভরতির শেষ তারিখ কবে? জানাল উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ]
সূত্রের খবর, কলকাতা, দিল্লি, গজিয়াবাদ, ফরিদাবাদ ছাড়াও জলন্ধর ও বেঙ্গালুরুতেও এটিএম জালিয়াতি করে তারা। বউবাজারের যে বেসরকারি ব্যাংকের এটিএম থেকে ২৫ লাখ টাকা তোলা হয়, সেখানে গত ১৪ মে সকাল সাড়ে সাতটায় হানা দিয়েছিল জালিয়াতরা। ব্ল্যাক বক্স ডিভাইস বসিয়ে এটিএমের সঙ্গে সার্ভারের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে তিন ঘণ্টার মধ্যে ১২৬ বার কার্ড সোয়াইপ করে ওই টাকা তুলে নেয়। ওই এটিএমেই দেখা যায়, টাকা তোলার মূলে রয়েছে মনোজ গুপ্তা। সিসিটিভির ফুটেজে তার ভাই নবীনকে না দেখা গেলেও মোবাইলের সূত্র ধরে জানা যায় যে, সে ধারেকাছেই ছিল। গোয়েন্দারা মনোজ গুপ্তার ফুটেজ দেখেই তাকে শনাক্ত করেন। প্রায় তিন বছর আগে রোমানীয় এটিএম গ্যাংয়ের জালিয়াতির ঘটনায় গোয়েন্দা পুলিশ মনোজ গুপ্তাকে গ্রেপ্তার করেছিল। দুই মনোজ গুপ্তা একই ব্যক্তি বলে অভিযোগ গোয়েন্দাদের। ওই সময় কলকাতার একের পর এক এটিএমে হানা দেয় রোমানীয় জালিয়াতরা। তারা কলকাতার এটিএমে স্কিমার যন্ত্র ও ক্যামেরা বসিয়ে গ্রাহকদের পিন নম্বর জেনে নেয়। পরে দিল্লিতে বসে ফাঁকা এটিএম কার্ডে স্কিমার থেকে তথ্য পুরে এটিএম থেকে তুলে নেয় টাকা। কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দারা প্রথমে দুই রোমানীয় সিলিভিউ ও মউরারুকে গ্রেপ্তার করেন। পরে আরও কয়েকজন ধরা পড়ে। তাদের জেরা করে উঠে আসে মনোজ গুপ্তার নাম।
রোমানীয় জালিয়াতদের মনোজ জানায় যে, সে দক্ষিণ দিল্লির বাসিন্দা। রোমানীয়দের মনোজই স্কিমার যন্ত্র বিক্রি করেছিল। বিদেশিদের কাছে একেকটি যন্ত্রের দাম ২৫ হাজার টাকা করে নেয় মনোজ। গাড়ির ব্যবসার আড়ালে অনলাইনে সে জালিয়াতির যন্ত্র সংগ্রহ করত। চিন থেকে অনলাইনে ওই স্কিমার যন্ত্র নিয়ে আসে। তখনই জানা যায় যে, এটিএম ও ব্যাংক জালিয়াতির জন্য বিভিন্ন ধরনের যন্ত্র ব্যবহার করতে অভ্যস্ত মনোজ। গোয়েন্দাদের ধারণা, বিধাননগর ও কলকাতায় ১১টি এবং দেশের বিভিন্ন জায়গায় এটিএম জালিয়াতিতে ব্যবহার করা যন্ত্র মনোজই সংগ্রহ করেছিল। সে জালিয়াতির পদ্ধতি শিখে নেয়। কীভাবে এটিএমের উপরের আবরণ চাবি দিয়ে খুলতে হবে, তাও শিখে নেয়। কোনওভাবে তৈরি করে সেই চাবি। এই জালিয়াতির জন্যই মনোজ, অমিতরা নিজেদের পরিচিতদের সঙ্গেই এই গ্যাং তৈরি করে। তবে হরিয়ানার মেওয়াটে এই ধরনের এটিএম জালিয়াতি শেখানো হয় বলে জানা গিয়েছে। তারা সেখান থেকে এই জালিয়াতি শিখেছে কি না, তা জানার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।