সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: প্রায় আড়াই বছর পর বাংলার সীমানা ঘেঁষা ঝাড়খণ্ডে স্কোয়াড নিয়ে ঘুরছে মাওবাদী নেতা আকাশ! সম্প্রতি ভিডিও কনফারেন্সে বাংলা-ঝাড়খণ্ড ইন্টার স্টেট কো-অর্ডিনেশন মিটিংয়ে ঝাড়খণ্ড পুলিশের কাছে এই তথ্য জেনে নড়েচড়ে বসেছে রাজ্য পুলিশ। এদিকে সোমবারই মাওবাদী দমনে জঙ্গলমহলের জেলা পুরুলিয়ায় মোতায়েন থাকা দক্ষ নাগা বাহিনী ফিরে যাচ্ছে এক দশক পর। নাগাল্যান্ডে সাম্প্রতিক অস্থিরতার কারণে ইন্ডিয়ান রিজার্ভ ব্যাটেলিয়নের ১৪ নম্বর বাহিনীর ছ’কোম্পানিই সোমবার পুরুলিয়া স্টেশন থেকে বিশেষ ট্রেনে ডিমাপুর যাচ্ছে। কিন্তু এখনও এই শিবিরগুলির দায়িত্ব নিতে কেন্দ্রীয় বাহিনী সিআরপিএফ (CRPF) পুরুলিয়ার জঙ্গলমহলে পা রাখেনি। ফলে রাজ্য পুলিশের স্ট্র্যাকো ও জুনিয়র কনস্টেবলের অ্যাসল্ট বাহিনীই জেলার ছ’টি নাগা ক্যাম্পের দায়িত্ব নিচ্ছে।
জঙ্গলমহলে নতুন করে মাওবাদী আতঙ্কের মধ্যে চাপ বাড়ছে রাজ্য পুলিশের উপর। সিআরপিএফের আইজি (পশ্চিমবঙ্গ) প্রদীপ কুমার সিং বলেন, “আপাতত নাগা বাহিনীর ওই ক্যাম্পগুলিতে রাজ্য পুলিশ দায়িত্ব নেবে। তারপর ধাপে ধাপে সিআরপিএফ যাবে। প্রথম ধাপে দু’কোম্পানি, পরের ধাপে আরও দু’কোম্পানি বাহিনী ওই শিবিরগুলির দায়িত্ব নেবে বলে সম্প্রতি দুর্গাপুরের বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।”
[আরও পড়ুন: ‘সরকার না পারলে NEET-JEE পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে পৌঁছবে বিজেপি’, আশ্বাস অর্জুন সিংয়ের]
চলতি মাসের ১৮ তারিখ বাংলা-ঝাড়খণ্ড আন্তঃ রাজ্য সমন্বয় বৈঠকে ঝাড়খন্ড পুলিশ এ রাজ্যের পুলিশকে জানায়, পুরুলিয়ার বান্দোয়ান লাগোয়া ঝাড়খণ্ডের পূর্ব সিংভূম জেলার গালুডি ও এমজিএম থানা এলাকায় মাওবাদী নেতা তথা সিপিআই (মাওবাদী) রাজ্য সম্পাদক আকাশ ওরফে অসীম মণ্ডল স্কোয়াড নিয়ে ঘুরছে। এই এলাকায় অতুল মাহাতো, শচীন মান্ডির স্কোয়াড-সহ মদন মাহাতোর গতিবিধির খবর মিললেও বাংলা-ঝাড়খণ্ড পুলিশের কাছে প্রায় আড়াই বছর আকাশের কোনও খবর ছিল না। এবার সেই আকাশের অস্তিত্ব টের পাওয়ায় শুধু বাংলা নয়, একসঙ্গে ঝাড়খণ্ডের পুলিশ-সহ এই দুই রাজ্যে মোতায়েন কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপরেও চাপ বেড়ে গিয়েছে। সিআরপিএফের আইজি (পশ্চিমবঙ্গ) বলেন, “বাংলা-ঝাড়খণ্ড সীমান্তে আমাদের বাহিনী মোতায়েন রয়েছে।”
[আরও পড়ুন: ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে ফের করোনা আক্রান্তের চেয়ে বেশি সুস্থতার হার, মৃত্যু ৫০ জনের]
এদিকে সিআরপিএফ সূত্রে জানা গিয়েছে, জম্মু-কাশ্মীর থেকে ১৮৪ নম্বর ব্যাটেলিয়নের E ও G কোম্পানি প্রথম ধাপে যথাক্রমে বলরামপুরের কুমারীকানন ও কোটশিলার মুরগুমার দুটি কোম্পানির দায়িত্ব নেবে। শ্রীনগর এলাকায় রাস্তায় ধস নামার কারণে ওই বাহিনী আটকে পড়েছে। ওই দুটি শিবির ছাড়াও বাঘমুন্ডির পিপিএসপি, অযোধ্যা হিলটপ, আড়শার সিরকাবাদ ও বলরামপুরের পাথরবাঁধ এলাকায় নাগাল্যান্ড সশস্ত্র পুলিশের ক্যাম্প ছিল। এই নাগা ব্যাটেলিয়নের সিও মন্ডকো ইয়াচুং বলেন, “পুরুলিয়ায় ডিউটি করার অভিজ্ঞতা ভুলতে পারব না। ঘরে ফিরলেও পুরুলিয়ার জন্য মনখারাপ লাগছে।” আসলে জঙ্গলমহলের এই জেলার বাসিন্দাদের সঙ্গে ‘বন্ধুত্ব’ হয়ে গিয়েছিল নাগাবাহিনীর। তাই কর্তব্যের জন্যও এই বিচ্ছিন্নতা কিছুটা বিষণ্ণ করে তুলেছে জওয়ানদের।
ছবি: অমিত সিং দেও।
The post জঙ্গলমহল ছাড়ছে মাওবাদী দমনে দক্ষ নাগাবাহিনী, আপাতত ক্যাম্পের দায়িত্বে রাজ্য পুলিশই appeared first on Sangbad Pratidin.