শেখর চন্দ্র, আসানসোল: স্বপ্নের নায়ককে কাছ থেকে দেখা কিংবা একটু ছোঁয়ার জন্য অনুরাগীরা কত কী-ই না করেন। বার্নপুরের রাইমাও সেরকমই দেবের 'জবরা ফ্যান'। বাড়িতে দেবের ছবি। সেই চার বছর বয়স থেকেই তার শয়নে-স্বপনে শুধুই দেব। শুধু কী তাই? অভিনেতাকে দেবতুল্য রূপে পুজোও করে আসছেন রাইমা। কে জানত, তাঁর ভাগ্যের চাকা যে এভাবে ঘুরে যাবে! একটা সেলফি তুলতে গিয়েই 'খাদান'-এ অভিনয়ের সুযোগ দিলেন তাঁর 'দেবদা'। আর সেই কোলিয়ারি কন্যাকেই টিকিট কেটে বড়পর্দায় দেখতে ঢুকছে গোটা বার্নপুর। এইজন্যই তো তিনি 'রাজার রাজা'। বলছেন রাইমার মতো দেব ভক্তরাই।
বার্নপুরের বাসিন্দা রাইমা পাল। আসানসোল গার্লস কলেজের বাণিজ্য বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। মফস্বলের সেই মেয়ে সুযোগ পানন অভিনেতা দেবের সঙ্গে অভিনয় করার। 'খাদান' সিনেমা রিলিজের পর দেখা গেল রাইমার সেই দৃশ্য। যেখানে কয়লা খাদানে অত্যাচারের শিকার কিশোরী। শ্যাম মাহাতো (দেব) অত্যাচারের কথা জানতে পেরে শুরু করলেন নিজস্ব কায়দায় বিচার। 'ফয়সলা অন দ্য স্পট'। অত্যাচারীর বিরুদ্ধে নিজের আগ্নেয়াস্ত্র তুলে দিলেন নির্যাতিতার হাতে। কাঁপা কাঁপা হাতে গুলি চালালো নির্যাতিতা (রাইমা)। এই দৃশ্য শেষ হতেই বার্নপুরের সিনেমা হলে হাততালি, সিটি। ঘরের মেয়েকে দেবের সঙ্গে ছোট্ট অথচ গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় দেখে খুশি ইস্পাত শহর। কীভাবে হল এই স্বপ্নপূরণ?
ছোট থেকেই রাইমার ইচ্ছে ছিল দেবের সঙ্গে দেখা করার। কিন্তু সেই দেখা যে তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেবে, কে তা জানত? রাইমা 'খাদান' সিনেমায় অভিনয় করেছেন সেই খবর চাউর হতেই খুশি আসানসোলের মানুষ। বার্ণপুরের পুরানহাটের বাসিন্দা রাইমা নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। বাবা সুদাম পাল পান বিক্রেতা। রাইমা স্বপ্নেও ভাবেননি তিনি সিনেমায় সুযোগ পাবেন। 'খাদান' সিনেমার শুটিং দেখতে গিয়েছিলেন জামুরিয়ায়। একবার দেবকে চোখের দেখা দেখতে। সেখানেই ভক্তের কথা জানতে পারেন অভিনেতা। সুযোগ দেন তার সঙ্গে ছবি তোলার। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। তৎক্ষণাৎ সিদ্ধান্ত নেন রাইমাকে দিয়ে একটি দৃশ্যে অভিনয় করানোর। সেলফি তুলতে গিয়েই অভিনয় করার সুযোগ আসে রাইমার কাছে।
রাইমা জানিয়েছেন, বুলেট মণ্ডল ও জয়দীপ মুখোপাধ্যায় না থাকলে দেবের কাছে পৌঁছতেই পারতেন না তিনি। তাঁর কথায়, "দেবদাও জানতে পারতেন না আমার পাগলামির কথা। আমি কয়লা খাদান এলাকার মেয়ে। এখানকার পরিবেশ সম্পর্কে সব জানা। কিন্তু জীবনে প্রথম ক্যামেরার সামনে ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। দেবদা নিজেই সব বুঝিয়ে দিয়েছিলেন আমাকে। আমাকে নার্ভাস দেখে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিলেন। চল্লিশটা টেকের পর শট ওকে হয়। তার আগে পর্যন্ত ধৈর্য ধরে বুঝিয়ে গিয়েছেন কীভাবে শট দিতে হবে। শুট শেষের পর ক্যামেরাম্যানকে ডেকে ছবিও তুলতে বলেন তিনি নিজেই।" রাইমার মন্তব্য, "বাড়িতে কেউ কখনও অভিনয় করেনি। আবার সুযোগ পেলে আবারও অভিনয় করব। বিশেষ করে গুরুর সঙ্গে কাজের সুযোগ এলে তো কথাই নেই।"