শেখর চন্দ্র, আসানসোল: নতুন বছরের প্রথম হাজিরাতেও মিলল না জামিন। ফের জেল হেফাজতে অনু্ব্রত মণ্ডল। আসানসোলের বিশেষ সিবিআই আদালতের বিচারক এই নির্দেশ দেন। আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি মামলার পরবর্তী শুনানি। ওইদিনই গরু পাচার মামলায় আবারও আদালতে তোলা হবে তাঁকে।
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা নাগাদ আসানসোল বিশেষ সংশোধনাগারে সিবিআই আধিকারিকরা যান। প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে অনুব্রতকে জেরা করেন তাঁরা। এরপর সিবিআই আধিকারিকরা আসানসোল বিশেষ সিবিআই আদালতে চলে যান। বেলা ১১টা ১৫ মিনিট নাগাদ জেল থেকে বের করা হয় অনুব্রতকে। তার কিছুক্ষণের মধ্যে আদালতে পৌঁছন দাপুটে নেতা। এদিন কোনও অনুগামীকে আদালতে দেখা যায়নি। আদালতে অনুব্রতর জামিনের আবেদন করেননি আইনজীবী। তবে অনুব্রত মণ্ডলের মালিকাধীন ভোলে ব্যোম রাইস মিলের অ্যাকাউন্ট ডি-ফ্রিজ করার আরজি জানানো হয়। আইনজীবী জানান, অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ থাকার ফলে বিদ্যুতের বকেয়া বিল মেটানো যায়নি। তাই অ্যাকাউন্ট ডি-ফ্রিজ করা হোক। আর না হলে বিদ্যুতের বকেয়া বিল মেটানোর বন্দোবস্ত করুন। বিচারক বলেন, “অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত তথ্য তদন্তকারীদের দিন। তারপরই ডি-ফ্রিজ করার প্রক্রিয়া শুরু হবে।”
[আরও পড়ুন: বঙ্গভবনের সিসিটিভি ফুটেজ নষ্টের অভিযোগ, গুজরাট পুলিশের বিরুদ্ধে দিল্লি পুলিশে অভিযোগ রাজ্যের]
এদিন সিবিআই তদন্ত সংক্রান্ত আরও নয়া তথ্য বিচারকের কাছে জমা দেয়। এরপর বিচারক ও সিবিআই আইনজীবীর সঙ্গে কথাবার্তা হয়। সম্প্রতি সিবিআই আধিকারিকদের সিউড়ির কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংকে হানার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে আইনজীবী জানান, ওই সমবায় ব্যাংক থেকে বেআইনি প্রথমে ১৭৭টি এবং পরে ৫৪টি অ্যাকাউন্ট পাওয়া গিয়েছে। এছাড়া ২০০টি অ্যাকাউন্টের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে যার গ্রাহক একজনই। বিচারক প্রশ্ন করেন, ওই বেনামি অ্যাকাউন্টের সঙ্গে অনুব্রতর কী সম্পর্ক? সিবিআইয়ের আইনজীবী জানান, ওইগুলি সব বাফার অ্যাকাউন্ট। ওই অ্যাকাউন্টগুলির মাধ্যমে ঘুরপথে কোটি কোটি টাকা অনুব্রত এবং তাঁর মেয়ে সুকন্যা মণ্ডল লেনদেন করেছেন। অনুব্রতর মালিকাধীন ভোলে ব্যোম এবং শিবশম্ভু রাইস মিলের টাকা ওই অ্যাকাউন্টে পাওয়া গিয়েছে বলেও জানান তিনি।
বিচারক আইনজীবীকে প্রশ্ন করেন, রহস্যজনক অ্যাকাউন্টগুলির গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলেছেন? সিবিআইয়ের আইনজীবী জানান, তদন্তকারী আধিকারিকরা কথা বলেছেন। তবে গ্রাহকরা নিজেও জানেন না তাঁদের অ্যাকাউন্ট রয়েছে। তাঁদের দাবি, অনেক সময় বিভিন্ন সরকারি সুযোগ সুবিধা লাভের আশায় স্থানীয় পঞ্চায়েতে আধার ও ভোটার কার্ড জমা দিয়েছিলেন। ওই কাগজপত্র নিয়েই সমবায় ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছিল। ২০০টি অ্যাকাউন্ট যার নামে রয়েছে তাকেও জেরা করে বয়ান রেকর্ড করেছেন সিবিআই আধিকারিকরা। সিবিআইয়ের আইনজীবী এদিন আদালতে নতুন আরও দু’টি গাড়ির খোঁজ পাওয়া গিয়েছে বলেও জানান। যার বাজারদর প্রায় দেড় কোটির উপর।
এদিকে, এদিন সাড়ে ১১টার পর অনুব্রত মণ্ডলের প্রাক্তন দেহরক্ষী সায়গল হোসেনের ভারচুয়াল শুনানি হয়। তিনি বর্তমানে তিহাড় জেলেই রয়েছেন। সায়গলের আইনজীবী জামিনের আবেদন জানান। তবে সায়গলের জামিনের বিরোধিতা করেন সিবিআইয়ের আইনজীবী। সমবায় ব্যাংকে থাকা রহস্যজনক অ্যাকাউন্টগুলির সঙ্গে সায়গল হোসেনর যোগসূত্র রয়েছে বলেই দাবি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আইনজীবীর। এছাড়া তদন্তের স্বার্থে সায়গলকে তিহাড় জেলে গিয়ে জেরা করার সম্ভাবনার কথা জানায় সিবিআই। সায়গল জামিনে মুক্ত হলে তথ্যপ্রমাণ লোপাটের আশঙ্কা করা হয়। বিচারক দু’পক্ষের সওয়াল জবাব শোনার পর অনুব্রত মণ্ডল ও সায়গল হোসেনের চোদ্দ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেয়। আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি মামলার পরবর্তী শুনানি।