সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ‘তৃতীয় সুর, ষষ্ঠ সুর, গুপী চলল বহু দূর।’ গাধায় চেপে গ্রাম ছাড়ল গুপী-বাঘা। তখন অবশ্য পরিচয় হয়নি দুজনের। বাঁশবাগানে ভূতের রাজার সঙ্গে দেখা। পর পর তিনটে বর। বর পেয়েই খুলল গলা, গুপী থেকে গুপী গাইন! বাঘা থেকে বাঘা বাইন। সুর-তাল মিলে ‘দেখো রে নয়ন মেলে, জগতের বাহার’ কিংবা ‘মহারাজা তোমারে সেলাম’। আর সেই গান গেয়েই স্পটলাইটে চলে এলেন সদ্য তরুণ সঙ্গীতশিল্পী অনুপ ঘোষাল। মানুষের কাছে গুপীর কণ্ঠ মানেই তিনি। আর প্রথম ছবি থেকেই তৈরি হল সেই মিথ। সত্যজিৎ রায়ের হাত ধরে বাংলা সিনেমা পেল নতুন কণ্ঠ। যে কণ্ঠ বাঙালি শ্রোতা এতদিন শুনেছিল নজরুলগীতি কিংবা শ্যামাসঙ্গীতে। সেই কণ্ঠই পেল নতুন রূপ।
এক সাক্ষাৎকারে সত্যজিৎ রায় জানিয়ে ছিলেন অনুপ ঘোষালকেই কেন এবং কীভাবে বেছে নিয়েছিলেন গুপীর কণ্ঠের জন্য। বহুদিন ধরেই নাকি গুপীর কণ্ঠ খুঁজছিলেন সত্যজিৎ। পরিচালক চাইছিলেন এমন এক গায়ক, যাঁর সঙ্গে অভিনেতা তপেন চট্টোপাধ্য়ায়ের কণ্ঠস্বরের মিল থাকবে। হাজার চেষ্টা করেও তেমন গায়ক খুঁজে পাচ্ছিলেন না। সেই সময় বাংলা সঙ্গীতমহলের মহীরুহদের সঙ্গেও নাকি সাক্ষাৎ করেছিলেন সত্যজিৎ। কিন্তু কিছুতেই মনমতো কণ্ঠস্বর জুটছিল না। এখন উপায়?
[আরও পড়ুন: দাদুর সামনেই সুহানার হাতে হাত অগস্ত্যার, নাতবউ হিসেবে শাহরুখকন্যাকে গ্রিন সিগনাল বিগ বির?]
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালকে সেকথা বলতে গিয়ে স্মৃতিতে ডুব দিলেন পরিচালক সন্দীপ রায়। সত্যজিৎপুত্র জানান, ”তখন অনুপ ঘোষালের আঠারো বা উনিশ বছর বয়স। বাবাকে মা বলেছিলেন একবার তাঁর গান শুনতে। তখন নিয়মিত নজরুলগীতি এবং শ্যামাসঙ্গীত গাইতেন তিনি। মায়ের কথায়, একদিন বিকেলে তিনি আমাদের বাড়িতে এলেন, গুপী গাইনের জন্য লেখা গান বাবা অনুপদাকে গাইতে বললেন। তার পর গোটাটা ইতিহাস।” জানা যায়, সত্যজিৎ নাকি অনুপ ঘোষালকে বলেছিলেন অভিনেতা তপেন চট্টোপাধ্যায়ের কণ্ঠস্বরের সঙ্গে অদ্ভুত মিল অনুপ ঘোষালের কণ্ঠস্বরের। প্রথমটায় শিল্পী নিজেই বিশ্বাস করেননি। প্রমাণ করতে সত্যজিৎ নাকি পর্দার গুপীর সঙ্গে অনুপ ঘোষালের সাক্ষাৎও করিয়ে ছিলেন।
‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’, ‘হীরক রাজার দেশে’, ‘গুপী বাঘা ফিরে এলো’র গানগুলো ইতিহাস রচনা করেছে। গুপীর সঙ্গে মিলে মিশে গিয়েছিল অনুপ ঘোষালের কণ্ঠস্বর। গুপীর কণ্ঠই হয়ে উঠেছিল তাঁর পরিচয়। কিন্তু দুর্ভাগ্য, সত্যজিতের হাত ধরে যাঁর এমন উত্থান, সেই অনুপ ঘোষালকে বাংলা সিনেমার গানে আর তেমন ভাবে কেউ ব্যবহার করলেন কই? তবে পরিচালক শেখর কাপুরের ‘মাসুম’ ছবির ‘তুঝসে নারাজ নেহি জিন্দেগি’ গানে হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে ছাপ ফেলেছিলেন অনুপ ঘোষাল। তাঁর সেই গানও কিন্তু কালজয়ী। প্রশংসা পেয়েছিলেন দিলীপ কুমার অভিনীত ‘সাগিনা মাহাতো’ ছবিতে গান গেয়ে। তবুও বাংলা সিনেমায় যেন তাঁর কণ্ঠস্বর আটকে রইল সেই গুপীর কণ্ঠেই। শুধু সত্যজিতের স্পটলাইটেই চির অমর হয়ে থাকলেন অনুপ ঘোষাল। সেই শিল্পীর প্রয়াণে স্তব্ধ হল গুপীর কণ্ঠ! থেকে গেল আক্ষেপ। শিল্পীর প্রকৃত কদর কেন করল না টলিউড!
[আরও পড়ুন: টাটা থেকে আম্বানি, শচীন থেকে অমিতাভ! রাম মন্দিরের উদ্বোধনে চাঁদের হাঁট]