সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বসন্তের এক বৈকালীন আড্ডায় অপর্ণা সেন, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এবং ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত… কফি কাপে চুমুক, সঙ্গে সিনেম্যাটিক সংলাপ সেই আড্ডার দোসর! না, ‘পারমিতার একদিন’-এর সিক্যুয়েলের কথা মোটেই ভাববেন না। আসলে ‘পারমিতার একদিন’-এর পর প্রথম কোনও বাংলা ছবিতে এই ত্রয়ীকে দেখা যাবে। সৌজন্যে ‘বসু পরিবার’। অপর্ণা, সৌমিত্র এবং ঋতুপর্ণা ছাড়াও এই ছবিতে রয়েছেন যিশু সেনগুপ্ত, শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, লিলি চক্রবর্তী, সুদীপ্তা চক্রবর্তী, পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্রীনন্দা শঙ্কর-এর মতো শিল্পীরা। ও যুগ থেকে এ যুগ বাংলা ছবির সব জনারের অভিনেতা-অভিনেত্রীকেই ধরার চেষ্টা করেছেন এই ছবির পরিচালক সুমন ঘোষ। কাস্টিংয়ের ফিরিস্তি দেখে আদ্যোপান্ত এক পারিবারিক ছবির কথা মনে হতেই পারে। এ ছবি অবশ্যই এক পরিবারের গল্প বলবে। কিন্তু, গতে বাঁধা সহজপাঠ-ছকে সেই একইরকম পারিবারিক বাংলা ছবির আখ্যা দেওয়াটা ‘বসু পরিবার’-এর ক্ষেত্রে হয়তো ভুল হবে। আসলে আমরা বাঙালিরা তো এরকমই। পরিবার বলতেই কোথাও একটা সেন্টিমেন্ট কাজ করে। তা সে সুদূর আমেরিকার প্রবাসী বাঙালি হোক, কিংবা আরামবাগের ভেতো বাঙালি। চাঁদে যাওয়ার সুযোগ হলেও পরিবারসুদ্ধু যেতে চাওয়ার সাধ আর কী!
[দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে মুক্তি পেল ‘পিএম নরেন্দ্র মোদি’র ট্রেলার]
যাক গে, আসা যাক ছবি প্রসঙ্গে। বসু পরিবারের ‘ক্যাপ্টেন অফ দ্য শিপ’, খাস বাংলায় খোলসা করলে পরিবারের কর্তা, তিনি অবসরপ্রাপ্ত ব্যারিস্টার। হাবভাবে ডাকসাইটে জমিদার গোছের ভাব যার, এই চরিত্রেই দেখা যাবে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে। জমিদার গিন্নির ভূমিকায় অপর্ণা সেন। অপর্ণা-সৌমিত্রর কেমিস্ট্রি নিয়ে বঙ্গ-সিনেপ্রমীদের আর আলাদা করে কিছু বলার নেই। তা সে, সত্যজিতের ১৯৬১-এর ‘সমাপ্তি’তে অমূল্য-মৃন্ময়ীর সাক্ষাৎ হোক কিংবা ‘বসন্ত বিলাপ’-এর শ্যাম-অনুরাধা সবেতেই এই জুটি দর্শকের মন কেড়েছে। ২০০০ সালে ‘পারমিতার একদিন’-এর পর ১৯ বছর বাদে সৌমিত্র-অপর্ণা জুটি সেলুলয়েডে ফিরছে ‘বসু পরিবার’-এর হাত ধরে। অন্যদিকে, ঋতুপর্ণা ওবং অপর্ণাকেও এই ছবিতে একসঙ্গে দেখা যাবে বছর ১৯ বাদে। ‘বসু পরিবার’-এর মেয়ের ভূমিকায় ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত এবং ছেলে যিশু সেনগুপ্ত। বসু পরিবারের সেলিব্রেশনের কারণ কত্তা-গিন্নির ৫০ বছরের বৈবাহিক জীবনের বর্ষপূর্তি। সেই উপলক্ষেই ছেলে-মেয়ে তাঁদের পরিবার-সহ পুরনো জমিদার বাড়িতে হাজির। মা-বাবার বিবাহবার্ষিকী বলে কথা! ওদিকে পুরনো জমিদার বাড়ির নস্টালজিয়া। দুর্গাপুজো আসার আগেই বাঙালির অন্দরে কোথায় যেন একটা অন্যরকম উৎসবের জোয়ার। অনাবিল হই-হইয়ে শামিল গোটা বসু পরিবার। আর এই চরম উৎসব উল্লাসের মাঝেই কোথাও কোথাও মাটি ফুঁড়ে উঠে আসে এক গোপনীয়তা। অনেকটা নিঃশব্দেই। তছনছ করে দেয় সব সত্যিকে। কেউ বা বছরের পর বছর বয়ে বেড়ায় এই গোপনীয়তার দলিল। যখন এই গোপনীয়তা প্রকাশ পায় পরিবার-পরিজন সম্মুখে, কী হয় তখন? ‘বসু পরিবার’-এর ক্ষেত্রেও একসময়ে আসে এই পরিস্থিতি।
[হোলি মানেই অমিতাভ বচ্চনের কণ্ঠে ‘রং বরসে’, আবেগে ভাসলেন আবির]
পারিবারিক সেন্টিমেন্টের চেনা আবেগের আদলে এক অচেনা আবেগ মেশানো অন্যরকম গল্প বলবে ‘বসু পরিবার’। ছবির প্লটে আবেগ, ক্রাইসিস স্বাভাবিক। বিশেষত, পরিবার কেন্দ্রিক গল্পের ক্ষেত্রে তা এক্কেবারে প্রযোজ্য। কিন্তু, এই চেনা ছকের যখন উলাট পুরাণ ঘটে পর্দায়, তখন? পালটে যায় সমীকরণ! ‘বসু পরিবার’-এর ক্ষেত্রে তা কীরকম? জানতে হলে অপেক্ষা করতে হবে ৫ এপ্রিল অবধি। শুটিং শেষ হয়েছে ২০১৭ সালেই। এতদিন তা মুক্তির অপেক্ষায় দিন গুনছিল। অবশেষে সেই অপেক্ষার অবসান হতে চলেছে এপ্রিলের ৫ তারিখে। আইরিশ ঔপন্যাসিক জেমস জয়েসের এক গল্পের থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই পরিচালক সুমন ঘোষের আবিষ্কার ‘বসু পরিবার’।
The post চেনা আবেগের ছকে এক অচেনা পারিবারিক গল্প বলবে ‘বসু পরিবার’ appeared first on Sangbad Pratidin.