সুমন করাতি, হুগলি: আরামবাগ মহকুমা পুলিশ আধিকারিকের অফিস এখন ইতিহাসের সংগ্ৰহশালা। দেওয়াল ভরেছে মহকুমার ঐতিহাসিক নিদর্শনে। রয়েছে রাজা রামমোহন রায়ের জন্মভিটে, কামারপুকুর রামকৃষ্ণ মঠ থেকে ঘণ্টেশ্বর শিবমন্দিরের মতো অনেক কিছুই। এসডিপিও’র এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছে মহকুমাবাসী।
এসডিপিও’র অফিস আরামবাগের বাসুদেবপুর এলাকায়। সাধারণ মানুষ অভাব-অভিযোগ নিয়ে ভিড় জমান সেখানে। সেই অফিসকেই সাজিয়ে তুলতে ঐতিহাসিক নিদর্শনের ছবি সাঁটানো হচ্ছে। ভবিষ্যতে মহকুমার ইতিহাস বিজড়িত জিনিসপত্রও রাখা হবে বলে খবর। এখনও পর্যন্ত আরামবাগ মহকুমায় কোনও সংগ্ৰহশালা নেই। খানাকুলে রামমোহনের জন্মভিটে রাধানগরে সংগ্ৰহশালা তৈরির কাজ মাঝপথে আটকে। আরামবাগের সাগর কুটির সংস্কার করা হয়েছে। কিন্তু সেখানে প্রফুল্লচন্দ্র সেন বা স্বাধীনতা সংগ্ৰামীদের কোনও জিনিসপত্র, বা কোনও ঐতিহাসিক ঘটনার চিত্র নেই। পাতুলে বিদ্যাসাগরের মায়ের মাতুলালয়েও সংগ্ৰহশালা গড়ে তোলার দাবি দীর্ঘদিনের। কিন্তু সেই দাবিও পূরণ হয়নি।
[আরও পড়ুন: সস্তায় সোনার বিগ্রহ কিনতে গিয়ে বিপত্তি! কুলতলিতে প্রতারকের মারে গুরুতর জখম ক্রেতা]
এবার এসডিপিও’র উদ্যোগে ওইসব নিদর্শনের ছবি ঠাঁই পাচ্ছে তাঁর অফিসে। গড়ে উঠছে আস্ত একটা সংগ্ৰহশালা। সেখানে রাজা রামমোহনের জন্মস্থানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নকশায় নির্মিত স্মৃতিসৌধের ছবি যেমন রয়েছে, তেমনই গড় মান্দারণ, ভালিয়ার মা সারদার মন্দির, হোরপুর দরবার শরিফের ছবিও রয়েছে। মহকুমার এক পুলিশ কর্তা বলেন, জেলা বা রাজ্যের উচ্চপদস্থ পুলিস আধিকারিকরা বিভিন্ন প্রয়োজনীয় কাজে এখানে আসেন। ছবিগুলি দেখে দ্রততার সঙ্গে মহকুমার ইতিহাস সম্পর্কে একটা ধারণা পেয়ে যান। কারণ, দেওয়ালে সাঁটানো ছবিগুলি আরামবাগের ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় গুরুত্বের এক একটা দলিল।
এসডিপিও অভিষেক মণ্ডল বলছিলেন, “আগের অফিসে মহকুমার দু-একটি দ্রষ্টব্য স্থানের ছবি ছিল। নতুন অফিসের দেওয়ালে মহকুমার একাধিক ঐতিহাসিক নিদর্শনের চিত্র দিয়ে সাজানো হচ্ছে। মহকুমার কোনও এলাকার মানুষ যদি মনে করেন, তাঁদের এলাকায় দ্রষ্টব্য পর্যটনকেন্দ্র ও ধর্মীয়স্থান রয়েছে, তাঁরা চাইলে সেই এলাকার ছবিও অফিসে টাঙানো হবে।” এসডিপিওর এই উদ্যোগকে মহকুমার বিশিষ্টব্যক্তি থেকে সাধারণ মানুষ তারিফ করেছেন। একইসঙ্গে স্বাধীনতার এতবছর পরও মহকুমায় কেন কোনও সংগ্ৰহশালা গড়ে ওঠেনি, তা নিয়ে প্রশ্নও উঠছে।
[আরও পড়ুন: ২০ বাই ১২ ফুটের ঘরে ক্লাস, পাশেই মিড-ডে-মিলের জিনিস! ভয়াবহ ছবি পাথরপ্রতিমার স্কুলের]
আঞ্চলিক গবেষক দেবাশিস শেঠের কথায়, “খানাকুলে রামমোহন সংগ্ৰহশালার কাজ মাঝপথে থমকে রয়েছে। রাজ্য হেরিটেজ কমিশন নিশ্চুপ। হারিয়ে যাচ্ছে দুষ্প্রাপ্য নথি ও ছবি। সেখানে একজন পুলিশ কর্তা অফিসভবনকে মহকুমার ঐতিহাসিক স্থানগুলির ছবির সংগ্ৰহশালা হিসেবে গড়ে তুলছেন। নিঃসন্দেহে এই কাজ প্রশাংসার যোগ্য।” আরামবাগ নেতাজি মহাবিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক গোপাল সিনহা বলছিলেন, “আরামবাগের ইতিহাস বারবার উপেক্ষিত থেকেছে। সেখানে এক পুলিশ কর্তা বিষয়টির গুরুত্ব অনুভব করেছেন। প্রশাসনিক কাজেও যে মহকুমার ঐতিহাসিক গুরুত্ব অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে, তার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন এসডিপিও।”